Site icon Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

আইনের শাসন ও বাংলাদেশ রচনা

আইনের শাসন ও বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করবো আজ। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। আধুনিক বিশ্ব মানে গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বাস্তবে যাই হোক, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ সরকার কোনো না কোনো যুক্তিতে নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে। তাই পৃথিবীতে সম্ভবত এমন কোনো রাষ্ট্র পাওয়া যাবে না যেখানে কোনো আইন বা সংবিধান নেই। তবে দেশ ও সরকার পদ্ধতি ভেদে আইন কিংবা সংবিধানের চরিত্র ভিন্ন হতে পারে।

এমনকি কোনো দেশে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত জীবনে আইনের প্রয়োগ কতটা হলো সেটিও একটি ভিন্ন প্রশ্ন। অতএব একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও আইন, সংবিধান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সবই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাত্রা ও ধরন কী?

আইনের শাসন ও বাংলাদেশ

 

আইনের শাসনের নীতি ও অভিব্যক্তি :

সাধারণ অর্থে আইনের শাসন হলো আইনের সর্বোচ্চ প্রাধান্য বা কর্তৃত্ব। রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় নির্ধারণের মাপকাঠি হবে আইন এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান বলে বিবেচিত হবে। সুতরাং আইনের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব (Supremacy of law) এবং আইনের চোখে সমতা (Equality before law) এ দুটি বিষয়কে মূল ধরলেও আইনের শাসনের আরো কিছু প্রাসঙ্গিক দিক বা বিষয় চলে আসে।

প্রথমত, আইনের শাসনের মৌলিক প্রণোদনা হলো শাসনকার্যে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো স্থান থাকবে না।
রাষ্ট্র কেবল সংবিধিবদ্ধ আইন বা প্রচলিত রীতিনীতি ও বিশ্বাসের ফলে গড়ে উঠা আইনের মাধ্যমে
পরিচালিত হবে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দল নয়, আইনই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল মাপকাঠি।

দ্বিতীয়ত, আইনের শাসনের আরেকটি মূলনীতি হলো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দল বা উপদল নয়, বরং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তিই আইনের চোখে সমান বলে বিবেচিত হবে। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যেমন আপন প্রভাবে আইনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না, তেমনি কোনো নাগরিকই আইনের চোখে নিম্নতর বলে বিবেচিত হতে পারে না।

তৃতীয়ত, আইনের শাসনের আরেকটি দিক হলো, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের যেমন তার কৃতকর্মের জন্য আইনের
মুখোমুখি হতে হবে, তেমনি তার অধিকার ও দাবির ব্যাপারে আইনের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার ও সুযোগ থাকতে হবে।

চতুর্থত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি পূর্বশর্ত হলো আইনকে অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। কোনো আইন যদি নীতিগত বা পদ্ধতিগতভাবে অযৌক্তিক হয়, তাহলে সে আইনে পরিচালিত শাসন আইনের শাসনের মূলনীতির অনুকূল হতে পারে না।

পঞ্চমত, আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং আইনের যথার্থ প্রয়োগ ও মূল্যায়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োজিত সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। বিশেষত বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে।

ষষ্ঠত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইনপ্রণেতাদের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুকূল হতে হবে। সুতরাং আইনের শাসন একটি সার্বিক প্রক্রিয়া এবং এটি একটি প্রায়োগিক বিষয়।

 

 

আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান :

আইনের শাসন বাংলাদেশের সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য । সংবিধানের ২৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান বলে বিবেচিত হবে এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে। সংবিধানের ৩১ ধারা অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী আচরণ লাভের অধিকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। প্রচলিত আইনের বাইরে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে তার জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি হতে পারে।

সুতরাং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী —

সরকার প্রচলিত আইনের বাইরে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন না, যা ব্যক্তির জান মাল, সম্মান ও সুনামের জন্য হানিকর। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে তা অবশ্যই প্রচলিত আইনের সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ নিয়মনীতি ও পদ্ধতির অনুসরণ করে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কেননা সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তির বিচার হওয়ার যেমন বিধান আছে, তেমনি তার আইনের আশ্রয় লাভেরও অধিকার আছে।

পার্লামেন্টে কোনো আইন পাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংবিধানের ২৭ ও ৩১ ধারার মূলনীতি ও চেতনার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে । আইন অনুযায়ী কারো বিচার চাওয়া বা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে একটাই যে, সে বাংলাদেশের নাগরিক।

 

 

বাংলাদেশে আইনের শাসনের বিভিন্ন দিক :

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, আদর্শ সংবিধান, নির্বাচিত সরকার ও আইন পরিষন এবং দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির বিচারে এ দেশে আইনের শাসনের একটি অনুকূল পরিবেশ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক এতোসব আয়োজন সত্ত্বেও বাস্তবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে আইনের শাসনের প্রতিফলন একেবারেই সীমিত। কেননা আমাদের আইনি কাঠামো, প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইনের শাসনের প্রতিকূল উপসর্গ বিদ্যমান ।

প্রথমত, আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, আইনের ওপর ব্যক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত। রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী আমলা বা রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয়দের জন্য আইনের পরিধি অনেক সময় সীমিত হয়ে পড়ে। ব্যক্তির অবস্থানভেদে আইন প্রয়োগে ভিন্নতা এখানে নিত্যদিনের ঘটনা।

একই অপরাধে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনের যে বিধান, ক্ষমতা হারালে তা অন্যরকম। অনুরূপ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় কেউ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলেও ক্ষমতায় গেলে সে অভিযোগ আইনের চোখে ধরা পড়ে না। অর্থাৎ আইনের সমপ্রয়োগ নীতি আমাদের সমাজে অনুপস্থিত।

দ্বিতীয়ত, এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে Gunnar Myrdal এক কথায় Soft Society বলে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, এসব দেশে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব যাদের হাতে থাকে তারা এ কথা বেমালুম ভুলে যান যে, তাদের এ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বও আইন এবং আইনি প্রতিষ্ঠানের অধীন। তাই এ সকল দেশে আইনের শাসন টিকে থাকা খুবই কঠিন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে আইনপ্রণেতারাই প্রধান আইন ভঙ্গকারী। এখানে আইন থাকে প্রভাবশালীদের পকেটে। প্রয়োজনমতো নোট লিখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিচারকদের নিকট পাঠিয়ে দিলে এ নির্দেশই আইন হিসেবে গণ্য হয়।

 

 

তৃতীয়ত, তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আইনের শাসনের পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হলে প্রশাসনিক দুর্বলতা। প্রশাসন এখনে রাজনীতিবিদদের হাতে জিম্মি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কোনো আইন কোথায়, কখন, কীভাবে এবং কতটুকু প্রয়োগ করা হবে তা আইনের নিজস্ব বিধিতে নয় বরং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নামক মন্ত্রী, নেতা বা তাদের অনুগত আমলার ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারিত হয়। এটা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের মৌলিক চেতনার বিরোধী।

চতুর্থত, আইন ও বিচার ক্ষেত্রে পোষক-পোষিতের (Patron-Client relationship) সম্পর্কের উপস্থিতির ফলে আইনের সুবচন আর সুশাসন প্রায়ই নির্বাসিত হতে দেখা যায়। রাজনৈতিক নেতা- নেত্রী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও আমলাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা দলীয় নেতা-কর্মী- সমর্থককে আনুকূল্য প্রদানের জন্য এখানে আইনকে প্রায়ই পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায়।

আমাদের নেতা- নেত্রীরা দলীয় রাজনীতির নোংরা মানসিকতার বশে দলীয় নেতা-কর্মীদের যাবতীয় অপকর্মকেও বৈ বলে চালিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। আইন নয়, তাদের পোষিতদের স্বার্থই তাদের কাছে বড়। আইনের মাপকাঠিতে ব্যক্তি কতটা অপরাধী তা কোনো বিষয় নয়, বরং ক্ষমতাসীন দল বা প্রভাবশালী মহলের সাথে তার সম্পর্কের মাত্রাটাই বিচারের মানদণ্ডে পরিণত হয়।

পঞ্চমত, যে আইনের মাধ্যমে শাসন পরিচালিত হবে সে আইন নিজেই যৌক্তিক কিনা, সেটিও আইনের শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। কেননা যে আইনের মাধ্যমে ব্যক্তির কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করার কথা, খোদ সে আইনই যদি নাগরিকদের বিচার-বুদ্ধি, মূল্যবোধ ও সুশীল চিন্তা-চেতনার বিরোধী হয় তাহলে সে আইনের প্রয়োগ নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্বার্থে সরকারগুলো একের পর এক অপ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে যাচ্ছে।

যখন কোনো দল বিরোধী দলে থাকে তখন তার দৃষ্টিতে যেটি গণবিরোধী কালো আইন, ক্ষমতায় আরোহণ করার পর তো আর কালো আইন থাকে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে সেটি রাতারাতি সাদা হয়ে যায়। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৪ বিধি, জননিরাপত্তা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, দ্রুত বিচার আইন প্রভৃতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনার তীর ছুড়লেও বাস্তবে সকলেই এ সকল অপ-আইনের পক্ষে।

ষষ্ঠত, বাংলাদেশে আইনের শাসনের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো, এখানে আইনের চোখে সমতার নীতি কেবল ওপর মহলের বেলায়ই প্রযোজ্য। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে আইনের শাসন বা আইনের চোখে সমতার নীতি শুধু শাসনের সংবিধিবদ্ধ নীতি হিসেবেই সত্য।

সাধারণ জনগণের বেলায় আইনের সমতার নীতি খুব একটা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় না। কেননা এখানে ন্যায়বিচার বেচাকেনা হয়। নিম্ন আদালতে ঘুষ, দুর্নীতি আর শাসনবিভাগীয় হস্তক্ষেপের যে দুষ্টচক্র বিদ্যমান তাতে গরিব, অশিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষ কেবল ভোগান্তিরই শিকার হয়। আর উচ্চতর আদালতে বড় বড় আইনজীবী দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে না পারলে মামলায় জেতা যায় না। অথচ এদের দর আকাশচুম্বী, যা এ দেশের সাধারণ জনগণ চিন্তাও করতে পারে না।

সপ্তমত, আইনের শাসনের অস্তিত্ব বা পরিধি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আইন বাস্তবায়নের বিষয়কে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। কেননা কোনো দেশের আইন কতটা সুন্দর, আদর্শ বা গণমুখী কেবল সে বিবেচনায় আইনের শাসনের যথাযথ চেহারা উন্মোচন সম্ভব নয়। বরং আইন কীভাবে এবং কতটুকু প্রয়োগ হলো তা-ই মূল বিবেচ্য বিষয়।

বাংলাদেশে কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে সংবিধান ও আইনি ব্যবস্থা রয়েছে তার বাস্তবায়ন হলেও অবস্থা বর্তমানের তুলনায় অনেক ভালো হতো। কিন্তু এ দেশে পুলিশ নামক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটি যে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত তাতে ভালো আইনও তাদের সংস্পর্শে কলুষিত হতে বাধ্য। এখানে কাউকে শাস্তি প্রদান বা কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সন্ত্রাসী বা গুজবাহিনী ভাড়া করার চেয়ে পুলিশ বা নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের ভাড়া করা অনেক সহজ। তাহাा নিম্ন আদালতের বিচারকরা এখানে শাসনবিভাগীয় মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা বা দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্রীড়নক। তাই আদালতে গিয়ে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা এ দেশের মানুষ প্রায় ছেড়েই দিচ্ছে।

 

 

অষ্টমত, আমাদের সংসদের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো আইনপ্রণেতাদের সর্বজনীনতা না থাকায় আইন প্রণয়নেও তারা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠতে ব্যর্থ হন। এখানে দেশের জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কেবল দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নিজ নিজ দলীয় স্বার্থে আইন প্রণয়ন করতে দেখা যায়। এ প্রবণতার মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এ সময় একের পর এক সংসদে গণঅভীক্ষার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করতে দেখা গেছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সামরিক সরকারের আমলে ইনডেমনিটিসহ নানাবিধ অপ-আইন এভাবে পাস করতে দেখা গেছে।

নবমত, আইনের শাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতার পাশাপাশি অবস্থান। বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা দুষ্কর হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা আছে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এ সম্পর্কে সরকারকে আদেশ প্রদান করলেও সরকার একের পর এক সময় প্রার্থনা করে ব্যাপারটিকে দীর্ঘায়িত করছে।

এটাও আমাদের রাজনীতিবিদদের একই রোগের ভিন্ন উপসর্গ। কেননা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেন, অথচ ক্ষমতায় গেলে তাদের এ কথা আর মনে থাকে না। অন্যদিকে যারা বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার জিগির তুলছেন তাদেরকেও খেয়াল রাখতে হবে বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

করণীয় :

আইনের শাসন আমাদের দেশে একেবারে নেই এমনটা নয়। সাম্প্রতিক সময় সুশীল সমাজ ও গণমানুষের দাবির মুখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। তথাপি আইনের শাসনকে যথার্থ রূপ দিতে হলে আমাদেরকে কতিপয় বিষয়ের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দিতে হবে : কার্যকর অর্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য শীঘ্রই বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে।

বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অচিরেই ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে।
প্রচলিত পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করতে হবে। অর্থাৎ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়ে যেমন কঠোর হওয়া দরকার, তেমনি তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়েও নজর দিতে হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৪ ধারাসহ সকল গণবিরোধী আইন বাতিলের পদক্ষেপ নিতে হবে।

আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য দরকার। অপরদিকে অপরাধীকে দলীয় সমর্থন দেয়ার নোংরা মানসিকতা পরিহার করতে না পারলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ।

সর্বোপরি দেশের জনগণকে আইনি শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা এবং অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে না পারলে কোনো আইনের যথার্থ প্রয়োগ সম্ভব নয়।

 

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version