Site icon Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

ইন্টারনেট বিপ্লব ও বাংলাদেশ রচনা

ইন্টারনেট বিপ্লব ও বাংলাদেশ

ইন্টারনেট বিপ্লব ও বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

বিশ্বযুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যুগান্তকারী ব্যবস্থার নাম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হলো মূলত আন্তঃকম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে পৃথিবীর দূরত্ব একেবারেই কমে এসেছে। গোটা পৃথি পরিণত হয়েছে একটি Global Village-এ।

 

 

ইন্টারনেট বিপ্লব ও বাংলাদেশ

 

বিশ্বায়ন ধারণায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ ইন্টারনেট, মানবজীবনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে করে তুলেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান-ধারণা। কম্পিউটার ছিল বিজ্ঞানের এক বিস্ময়।

মূলত, মানবসভ্যতার বিস্ময়কর বিকাশে বিজ্ঞান যে অনন্য ভূমিকা পালন করছে তার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো কম্পিউটার। এখন কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেট প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে এ বিস্ময় অবদানরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। জীবনের ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে এখন ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়ে আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানব কল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্যবিপ্লবেও রয়েছে ইন্টারনেটের যুগান্তকারী ও সফল অবদান।

তথ্যবিপ্লব

বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তিত ব্যবসায়-বাণিজ্য, রাজনীতি, শিক্ষাদীক্ষা, উন্নয়ন, যোগাযোগ, সমরক্ষেত্র, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ বিচরণ। যে কৌশল তথ্যকে এ গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে তাই হলো তথ্যপ্রযুক্তি আর এর মাধ্যমে গোটা মানবসমাজের সর্বক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন তা হচ্ছে তথ্যবিপ্লব।

জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্পবিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। তথ্যবিপ্লব গোটা পৃথিবীকে এনেছে হাতের মুঠোয়। পরকে করেছে আপন আর অসাধ্য করেছে সাধন। বলতে গেলে বর্তমান পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি এবং সর্বপ্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার।

গোটা বিশ্বে দ্রুত প্রসার লাভ প্রমাণ করে এর কার্যকারিতা কি অপরিসীম। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ও চর্চা এখন শুধু হাতেগোনা দু-একটি উন্নত দেশে আভিজাত্যের বিষয় নয় । তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

 

 

ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কথাটি ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের উদ্ভব। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছে এ প্রক্রিয়া। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই হলো ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার সংযুক্ত রয়েছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে যে কোনো কম্পিউটারে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। ইন্টারনেট এক বিশাল তথ্য যোগাযোগ পদ্ধতি, যা পৃথিবীড়ে সম্প্রসারিত। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত যে কোনো ব্যক্তিগত কম্পিউটার বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহে সক্ষম।

গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ইন্টারনেট চালানোর জন্য চারটি জিনিস। প্রয়োজন । এগুলো হলো কম্পিউটার, মডেম, টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ।

ইন্টারনেটের ইতিহাস

ইন্টারনেটের এ জাল বোনার কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল আমেরিকার সামরিক দপ্তরে। আমেরিকার সামরিক বাহিনী তাদের গোপনীয় আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথা সংরক্ষণ করত কম্পিউটারে। একটি কম্পিউটার থেকে আর একটি কম্পিউটারে এসব তথ্য পৌছে দেয়ার প্রয়োজনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করে কম্পিউটারগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে গবেষণা পরিচালনার জন্য।

সেখান থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সংক্ষেপে এলএএন (LAN)। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সাফল্য দেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের নিজেদের বিভিন্ন বিভাগ আর প্রশাসনিক দফতরগুলোর মধ্যে স্থাপন করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এ অসম্ভবকে সম্ভব করার ফলে পৃথিবী চলে আসে মানুষের হাতের মুঠোয়। শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং ভিন্ন ভিন্ন সংস্থা আলাদাভাবে গড়ে তোলে এক একটি নেটওয়ার্ক। পরে এগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তৈরি করা হয় অভিন্ন এক জটিল জাল। যার বর্তমান সংস্করণ ইন্টারনেট।

 

 

ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ

আমেরিকার প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ চারটি কম্পিউটারের মাধ্যমে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল তার নাম ছিল ‘ডার্পানেট’। পরবর্তী তিন বছরে কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে ছত্রিশে পাঁড়ায়। চাহিদা বাড়ার ফলে ১৯৮৪ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য ‘নেস্কেনেট’ নামে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। তিন বছরের মধ্যে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এটি তখন গবেষণার কাজে তথ্য বিনিময়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এর সাথে অনেক ছোট বড় নেটওয়ার্ক যুক্ত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য নব্বই-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয় কোটি কোটি সদস্য । এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে ।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ

আন্তঃকম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা ইন্টারনেটের ব্যবহারের জন্য কতগুলো পদ্ধতি আছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো

১. ই-মেইল

যে কোনো ধরনের সংবাদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা খুবই কার্যকর। এ প্রক্রিয়ায় খুব দ্রুত অর্থাৎ ফ্যাক্সের দশ ভাগের একভাগেরও কম সময়ে এবং খরচে তথ্যাদি পাঠানো যায়

২. ওয়েব 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে তথ্য রাখা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পদ্ধতিকে ওয়েব বলে ।

৩. নেট নিউজ

ইন্টারনেটের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত সংবাদ যে কোনো সময় এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্মুক্ত করা যায়।

৪. চ্যাট

এ প্রক্রিয়ার সাহায্যে একাধিক ব্যক্তির সাথে একই সময়ে কথা বলা যায় বা আড্ডা দেয়া যায়।

৫. আর্কি

আর্কির কাজ হলো তথ্যসমূহকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচি আকারে উপস্থাপন করা।

৬. গোফার

তথ্য খুঁজে দেয়ার একটি পদ্ধতি, যার সাহায্য গুরুত্বানুযায়ী তথ্যের সমন্বয় সাধিত হয় ।

৭. ই-ক্যাশ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলে। আসলে ই- ক্যাশ অনেকগুলো আধুনিক লেনদেনের সমষ্টি ।

 

 

তথ্যবিপ্লবে ইন্টারনেট

তথ্য আদান-প্রদানে ইন্টারনেট যুগান্তকারী বিপ্লব এনেছে । ইন্টারনেট চোখের পলকে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় তথ্য পাঠাতে বা তথা এনে দিতে সক্ষম। লেখাপড়া, শিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রে বই অত্যন্ত জরুরি তবে সব বই সব সময় নাগালের মধ্যে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইন্টারনেটের ফলে এখন ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো লাইব্রেরিতে প্রবেশ করা যায় এবং প্রয়োজনীয় উখানি সংগ্রহ করা যায় ।

ইন্টারনেট ভ্রমণবিলাসীদের জন্য বন্ধুত্বরূপ। এটি ভ্রমণ স্থানের আবহাওয়া, হোটেল রিজার্ভ, রেন্ট-এ কার, প্লেনের টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। ইন্টারনেট ডাক্তার বা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে করেছে সহজলভ্য এবং সুলভ। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করা যায় পৃথিবীর ভালো ভালো চিকিৎসকদের সাথে। ফলে ঘরে বসেই পেতে পারি উন্নত চিকিৎসা।

পরামর্শ বা কোনো রেফারেন্স প্রয়োজন হলে সেই আইনজীবী বা আইন ফার্মে ইন্টারনেট কমান্ড করছে। তার তথ্যাদি ঘরে বসে পাওয়া যায়। এতে সময়, অর্থ, শ্রম বহুগুণে সাশ্রয় হয়। ইন্টারনেটের মাধ পৃথিবীর যে কোনো দেশের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, অর্থনৈতিক অবস্থা মুহূর্তের মধ্যে জানা যায়। বিনোদন হিসেবে গান শোনা, খেলা ও সিনেমা দেখা প্রভৃতি ঘরে বসেই সম্ভব এর মাধ্যমে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু :

বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন এর ব্যবহার ছিল সীমিত এবং কেবল ই-মেইলে এর প্রয়োগ ছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন থেকে অনলাইন সংযোগ দেয়া শুরু হলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল জগতে প্রবেশ করে। ২০০০ সালের শুরুতে প্র ৬০ হাজার সংযোগ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে তা ক্রমশ বাড়ছে।

১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বড় শহরগুলোকে সংযুক্ত করার পদক্ষেপ লো হয়। ঢাকার মগবাজার ও গুলশানের টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মধ্যে প্রথম ফাইবার অপটিক সংযোগ স্বাস করা হয় ৷ বর্তমানে শহরগুলোতে আন্তঃএক্সচেঞ্জেগুলোর মধ্যে ফাইবার অপটিক সংযোগ আছে। এছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক এবং সরকারের প্রশাসনিক দপ্তরে এর ব্যবহার ব্যাপক।

বর্তমান অবস্থান

বিশ্বব্যাপী তথ্যবিপ্লবের জাগরণে বাংলাদেশও ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছিল বলা যায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা অনেকটা ভিন্ন। এখন পর্যন্ত গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার, যার ৮০ ভাগের বেশি পরিচালনা করে থাকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ই-মেইলের জন্যই ব্যবহার করে থাকে ইন্টারনেট। এছড় অন্যান্য যে খাতে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো হলো- সহজ ও কম খরচে যোগাযোগ, তথ্য প্রাপ্তি, ফ্যাক্স, ফোন, হোটেল বুকিং, ডাটা এন্ট্রি, ট্র্যাভেল এজেন্সি, চিকিৎসা, গবেষণা, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, রপ্তানিমুখী শিল্পে অর্ডার গ্রহণ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেটের বিপুল তথ্যভাণ্ডারের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্য বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তির । বাংলাদেশে ইন্টারনেট এসেছে সত্যি তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।

সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচার চালাতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি অর্ডার দেয়ার ব্যবস্থাও চালু করতে পারে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের দৃশ্যাবলী, তথ্য, এসব স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা এবং খরচ সম্পর্কেও তথ্য সংবলিত ওয়েভ পেজ তৈরি করতে পারে পর্যটন অধিদপ্তর। সে সাথে কম্পিউটারে বসে হোটেলের সিট এবং প্লেন বা বাসের টিকিট বুকিং এর সুবিধাও দেয়া যেতে পারে। এতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প লাভবান হবে। বাংলাদেশের আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টগুলোর অধিকাংশ ক্রেতা প্রবাসী বাংলাদেশী। ওয়েভ পেজের মাধ্যমে এগুলোর তথ্য সরবরাহ এবং কেনার ব্যবস্থা করা খুব সহজ বিষয়।

 

 

১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় আইএসএন সরাসরি ফলাফল প্রচার করেছিল বিশ্বব্যাপী। এর করেছিল সার্ক ক্রিকেটের ফলাফল। বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্র তাদের ইন্টারনেট সংস্করণ বের করেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদপত্রের গ্রাহক সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ইন্টারনেট বাংলাদেশের জন্য এক সম্ভাবনাময় শিল্প।

বাংলাদেশে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এর ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানীরাই এ শিল্পে অব রাখছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান এবং ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েই সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে আসছে ছাত্ররা। ফলে কর্মক্ষেত্রে জার ভালো ফল দেখাতে পারছে না।

ইন্টারনেট শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশও এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছে। ইন্টারনেটে যদি কারও একটি কম্পিউটারেও কোনো লাইন থাকে তবে খুব সহজেই তিনি ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারবেন। পৃথকভাবে শুধু সংগ্রহ করতে হবে একটি মডেম। এর জন্য খরচ পড়বে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা।

যেসব প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন সেগুলো হচ্ছে আইএসএন, গ্রামীণ সাইবার নেট, প্রশিকা নেট, ব্র্যাক বিডি মেইল, অগ্নি সিস্টেম লি… বিডি অন লাইন লি কাইফনেট, ফান্টনেট, এনসিএল ইত্যাদি। সংযোগ প্রদানের জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই প্রাথমিকভাবে একটি নির্ধারিত ফি গ্রহণ করে। যা পাঁচ থেকে সাত হাজারের মধ্যে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পাঁচশ টাকায় সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশেষ ফি।

অগ্নি সিস্টেমস ছাত্রদের বিনামূলোই সংযোগ দিয়ে থাকে। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রশিকা নেট বিডিএমসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিমিনিট দুই টাকা হিসেবে নিয়ে থাকে। এছাড়াও আইএমএন, গ্রামীণ সাইবার নেট অগ্নি সিস্টেমসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা প্রতিমিনিট দু টাকা নিয়ে থাকে। এ খরচ এখন প্রতিদিনই তুলনামূলকভাবে কমছে। যাদের কম্পিউটার নেই তাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনেক সাইবার ক্যাফে।

এখানে যে কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেতে পারেন। ইন্টারনেট হচ্ছে তথ্যের একটি সুপার হাইওয়ে। এটি একটি তথ্য ব্যাংক। প্রতিদিন এখানে নতুন নতুন গ্রাহক এবং কম্পিউটার যুক্ত হচ্ছে। ইন্টারনেট থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে পারে এমন একটি খাত হচ্ছে বাণিজ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই এ সুযোগ নিতে শুরু করেছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে আকৃষ্ট করছে। তবে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনও পর্যন্ত অর্গলমুক্ত হয়নি। নানা প্রতিবন্ধকতা ঘিরে আছে ইন্টারনেটকে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এখনও অনেক ব্যয়বহুল। নাসা (NASA) থেকে দশ পাতার একটি রিপোর্ট সংগ্রহ করতে এখানে প্রতিমিনিটে এক থেকে দু টাকা খরচ করতে হয় । এ খরচ বিশ্বের অন্য যে কোনো স্থানের খরচের তুলনায় প্রায় দশ গুণ বেশি। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে না আশাপ্রদভাবে।

এছাড়াও VOIP (ভয়েজ ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল), চিস্যাট ইত্যাদি থেকে টিঅ্যান্ডটি উচ্চহারে অর্থ নিয়ে থাকে। যারা ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করছেন যদি টিঅ্যান্ডটি তাদের কাছ থেকে কম খরচ নেন ভিস্যাট স্থাপনের জন্য, তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর খরচও অনেক কমে আসবে। প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছে এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছে অন্যদিকে সরকার বলছে যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ কমে আসবে। সরাসরিভাবেও এখন ইন্টারনেট সুবিধাদানের চিন্তাভাবনা চলছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইন্টারনেটের ভূমিকা

তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বাইছে পৃথিবীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতে তার প্রভাব অনেক আগে পড়লেও আমরা তা থেকে অনেক পিছনে পড়ে আছি। তথ্যপ্রযুক্তিকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে এবং মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, নালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভারত, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে আজ আমরা তথ্যের সুপার হাইওয়েতে যুক্ত হতে পারছি না। আবার সরকারের অনিহার কারণে ফাইবার অপটিকস ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা।

তাই আমাদের প্রচুর টাকা খরচ করে ব্যবহার করতে হচ্ছে ভিস্যাটের লাইন। অথচ ভারত এসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি রূপি উপার্জন করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে। দেশে কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরি বেশ পেয়েছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। জাতীয় আগামী ৩ বছরের মধ্যে গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

 

তথ্য বিপ্লবে সরকারের পদক্ষেপ

কোনো দেশকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুনি ও উচ্ছ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের কোনো বিষয় নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারে অন্যতম নির অঙ্গীকার ছিল তথ্যপ্রযুক্তির সমব্য সর্বোচ্চ বিকাশের অঙ্গীকারের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের শাসনামলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সহায়ক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা গ্রেছে। যেমন

আমাদের করণীয়

গত দু দশকে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে অভাবনীয় সব পরিবর্তন। শিল্প, ব্যবসায়-বাণিয়া অর্থনীতি এবং জীবনযাপন পদ্ধতিকে পাল্টে দিচ্ছে এ তথাবিপ্লব। আর এর সুবিধা ভোগ করছে বিশ্বের দী দেশগুলো। ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের যে সিংহ দুয়ার খুলতে শুরু করেছে তার ফলও ধনী দেশগুলোই বেশি ভোগ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ধনী দেশগুলোর পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে মূলত তাদের রাষ্ট্র, বাজার এবং সমাজের উদ্যোগী ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকার কারণে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সাথে উন্নত দেশগুলোর আইসিটি সেক্টরে এক ধরনের বৈষমা ইদানীং আলোচিত হচ্ছে, যাকে বলা হয় ডিজিটাল বৈষম্য’ । তাই এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে যোগ্যতা দিয়ে এবং তথ্যপ্রযুক্তি নতুন নতুন কৌশল আয়ত্তে এনে আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের যোগ্যতা বরাবরই প্রমাণ করেছে। তাই আমাদের এ তরুণদের দেখ সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কার্যকরী করে তুলতে হচ্ছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দরিদ্র রাষ্ট্র। আমাদের যেমন রয়েছে পুঁজির অভাব তেমনি রয়েছে যুগোপযোগী শিক্ষার অভাব। কিন্তু দেশের বিশাল জনশক্তি আমাদের সম্পদ। এ সম্পদকে সঞ্চ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি এবং আর্থসামাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নে এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য এ মুহূর্তে যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য।

দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাই প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জৌন বিষয়া নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও তথ্যপ্রযুক্তির পর্যাপ্ত ও যথাযথ বিকাশ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে আমাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হবে। সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অধি বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে এটাই সময়ের দাবি।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version