বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী নিয়ে আজকের আলোচনা। সংবিধান হচ্ছে যে কোনো রাষ্ট্রের মূল ও সর্বোচ্চ আইন। সাধারণ অর্থে সংবিধান বলতে কতগুলো নিয়মকানুনের সমষ্টিকে বোঝায় যার আলোকে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের দর্পণস্বরূপ যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল দিক নির্দেশনা বর্ণিত থাকে।
Table of Contents
বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী
সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ আইনের বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে সংগতিহীন হলে সেই আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হবে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্রপরিচালনার যে মূলনীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারিত আছে। মূলনীতিসমূহ; বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বলথযোগ্য না হলেও এগুলো রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থার মৌলিক বিষয়।
এগুলো সাধারণ আইনসমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ সংবিধানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নির্দেশকরূপে কাজ করে। আদালতকে এসব নীতিমালার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয় এবং আদালত সংবিধানের কোনো বিধানকে এসব নীতিমালার পরিপন্থী হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারেন না যদি না এই বিধানের ভাষা আদালতকে এই সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে যে ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে সংবিধানপ্রণেতাগণ অনুরূপ ব্যতিক্রমের অবকাশ রেখেছেন।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থায়ী সংবিধান কার্যকরী হয়। সময়ের প্রয়োজনে পরবর্তীকালে বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের মূল সংবিধান কয়েকবার সংশোধন করা হয় । বাংলাদেশের সর্বশেষ সংশোধনী গ্রহণ করা হয় ২০০৪ সালের ১৬ মে (চতুর্দশ সংশোধনী)। উল্লেখ্য যে, সংবিধানের ১৪২ ধারা বলে এসব সংশোধনীসমূহ আনা সম্ভব হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে— ‘সংসদের আইন দ্বারা এই সংবিধানের কোনো বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে’।
বাংলাদেশে সংবিধান প্রণয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়। ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারি করেন। সে আদেশ অনুযায়ী ১৯৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য হন।
আর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। তারপর ১৯ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হয় এবং তৎকালীন আইনমন্ত্রী কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৭১টি অধিবেশনে শাসনতন্ত্রের খসড়াটি তৈরি করেন এবং ১০ জুন এর শেষ সভায় তা চূড়ান্ত করেন।
তারপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে এবং সে দিনই ড. কামাল হোসেন খসড়া শাসনতন্ত্রটি অধিবেশনে উপস্থাপন করেন । তারপর এর ওপর আলোচনা শুরু হয়। অবশেষে ৪ নভেম্বর খসড়াটি পরিষদে গৃহীত হয়। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিবশন মুলতবী ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রটি কার্যকর হয় । ১৯৭২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৪টি সংশোধনী হয় ।
বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি :
সংবিধানের দশম ভাগে সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান একটি লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় দলিল । তবে ৩টি পদ্ধতি বা ধাপ অনুসরণ করে সংবিধান সংশোধন করা হয় :
ক. বিলে স্পষ্ট শিরোনাম ও তারিখ থাকতে হবে।
খ. জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের দ্বারা বিলটি পাশ হতে হবে।
গ. সংসদ কর্তৃক পাশকৃত বিলে রাষ্ট্রপতি সাতদিনের মধ্যে সম্মতি দিবেন এবং সম্মতি না দিলেও তিনি বিলটিতে সম্মতি দিয়েছেন বলে ধরে নেয়া হবে। তবে সংবিধানের মূল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন আনতে হলে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটের আয়োজন করার বিধান রয়েছে ।
সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী :
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, ২০০৪ সাল পর্যন্ত তাতে ১৪ বার সংশোধনী আনা হয়। চতুর্দশ সংশোধনীসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারই সংবিধানে সর্বোচ্চ ৬টি সংশোধনী এনেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সরকার ৪টি করে সংবিধানে ৮টি সংশোধনী এনেছে। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ। এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্থায়ী সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়া হয়।
১৫ মার্চ ২০০৪ মন্ত্রী পরিষদ সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী বিলটিতে অনুমোদন দিলে ১৭ মার্চ, ২০০৪ প্রথমবারের মতো তা সংসদে উত্থাপন করা হয়।পরে পিএসসির চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের বয়সসীমা বাড়ানো এ তিনটি নয়া সংশোধনী সংযোজনের জন্য ২৫ এপ্রিল, ২০০৪ আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। ২৮ এপ্রিল, ২০০৪ সংশোধিত আকারে বিলটি আবার সংসদে উপস্থাপন করা হয়।
২০০৪ সালের ১৬ মে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী বিল ২২৬-১ ভোটে পাস হয়। সংসদে উপস্থিত ২২৭ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে একমাত্র কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বিল পাশের বিরুদ্ধে ভোট দেন। আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনের এ বিল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছিল। এ বিল পাশের ফলে জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৪৫ এ দাঁড়িয়েছে। নতুন ৪৫ আসন হবে সংরক্ষিত মহিলা আসন ।
নারীদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষণ, সরকারিভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরক্ষণ, সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত নতুন বিধান, অর্থবিলের সংজ্ঞা সহজীকরণ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি সংযোজন করে ‘সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) বিল ২০০৪’ পাস করা হয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৭ মার্চ ২০০৪ প্রথমবার ও ২৮ এপ্রিল ২০০৪ সংশোধিতাকারে দ্বিতীয়বার বিলটি উত্থাপন করেন। ১৬ মে ২০০৫ এটি সংসদে ২২৬-১ ভোটে পাস হয়।
নিচে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর বিষয়বস্তুগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো :
১. ৪৫টি নারী আসন :
সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের তিন দফার পরিবর্তে নতুন একটি দফা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই আইন প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত মহিলাদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষিত থাকবে। সংসদে রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এসব আসনে নির্বাচন হবে। এ সংশোধনের পরও সরাসরি নির্বাচনে যে কোনো আসনে নারীরা অংশ নিতে পারবেন।
সংবিধানে নতুন অনুচ্ছেদ (২৩) সংযোজন করে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদ থেকেই এ আইন কার্যকর হবে এবং অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্বে উল্লিখিত পদ্ধতিতে ৪৫টি নারী আসনে নির্বাচন হবে।
২. প্রতিকৃতি সংরক্ষণ :
বিলে সংবিধানে নতুন একটি অনুচ্ছেদ (৪ক) বহাল করা হয়েছে। ‘প্রতিকৃতি’ শিরোনামে বলা হয়েছে-(১) রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কার্যালয় এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে। (২) (১) দফার অতিরিক্ত কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে।
৩. অর্থবিল :
সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদে অর্থবিল সম্পর্কিত বাংলা সংস্করণে ‘সরকারি অর্থ ব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে, এমন কোনও অর্থবিল বা বিল’ শব্দগুলো ও কমার পরিবর্তে ‘কোনো অর্থবিল, অথবা সরকারি অর্থব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে এমন কোনও বিল’ শব্দগুলো ও কমা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
৪. সংসদ সদস্যদের শপথ ও সিইসির ক্ষমতা বৃদ্ধি :
সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী তিনদিনের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্পিকার শপথ বাক্য পাঠ করাতে ব্যর্থ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন।’
৫. বিচারপতিদের অবসরের বয়স :
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর বয়সসীমা ৬৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়েছে।
৬. পিএসসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবসরের বয়স :
সংবিধানের ১৩৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবসর বয়সসীমা ৬২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়েছে।
৭. সিএজির অবসরের বয়স :
সংবিধানের ১২৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নতুন নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে-‘(১) এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে মহা-হিসাব নিরীক্ষক তাহার দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর বা তাহার পয়ষট্টি বৎসর পূর্ণ হওয়া ইহার মধ্যে যাহা অগ্রে ঘটে, সেই কাল পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।’
উপরিউক্ত বিষয়গুলো সংযোজন করে সংবিধানে চতুর্দশ সংশোধনী বিল ২০০৪ পাস করা হয়। পাস করা বিলটিতে নারী আসন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনসহ সাতটি সংশোধনী রয়েছে। সংবিধানের সংশোধনীগুলো হচ্ছে ৪৮, ৬৫, ৮২, ৯৬, ১২৯, ১৩৯, ১৪৮ অনুচ্ছেদ এবং সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তনা সংযুক্তকরণ।
চতুর্দশ সংশোধনীর বৈশিষ্ট্য :
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনীর ধারাবাহিকতায় চতুর্দশ সংশোধনী বেশ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। চতুর্দশ সংশোধনীতে যে সাতটি সংশোধনী সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১. জাতীয় জীবনে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ :
আমাদের সংবিধানে ১৯৮৯ সালে দশম সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে ৩০টি মহিলা আসনকে ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত করা হয় । এ মেয়াদ সপ্তম সংসদ পর্যন্ত বহাল ছিল কিন্তু অষ্টম সংসদে কোনো মহিলা আসন সংরক্ষিত না থাকায় অষ্টম সংসদে প্রায় তিন বছর সংরক্ষিত আসন শূন্য ছিল। চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে ৪৫টি নারী আসন সংরক্ষণ করে সংসদকে অলঙ্কৃত করা হয় ।
২. প্রতিকৃতি সংরক্ষণ :
দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে প্রতিকৃতি সংরক্ষণে সাংবিধানিকভাবে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল ।
৩. লাভজনক পদে স্থায়িত্ব বৃদ্ধি :
বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক এবং পিএসসির চেয়ারম্যানের মতো লাভজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকালীন সময়সীমা বৃদ্ধি করে জাতীয় জীবনে এসব পদে যোগ্য লোকের সেবা প্রদানের সুযোগ দীর্ঘায়িত করা হয়েছে।
৪. সংসদ সদস্য শপথ :
এ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ত্রুটি ছিল তা পরিহার করা হয়।
৫. রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিফলিত :
সংশোধনীটি যে ক্ষমতাসীন বিএনপি এবং এর জোট সরকারের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রপ্রতিফলিত হয়েছে তা সংশোধনী থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ নারী আসন সরাসরি নির্বাচন না করে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচন যে ক্ষমতাসীনদের লাভ হবে এটা নিশ্চিত। অপরদিকে লাভজনক পদগুলোতে দলীয় লোকদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান নিশ্চিতকরণ।
৬. জনস্বার্থ সম্পর্কিত নয় :
চতুর্দশ সংশোধনীতে ৭টি সংশোধন গৃহীত হলেও তার কোনোটিই জনস্বার্থ সম্পর্কিত নয়। সংশোধনীতে জনস্বার্থকে উপকৃত করে এমন কোনো কথাও উল্লেখ নেই ।
৭. দলীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক ভিত্তি :
সংশোধনটিতে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত ছিল । প্রধান বিরোধী দল বিলটিকে চারদলীয় জোট সরকারের দলীয় সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করে।
উপসংহার :
সংবিধান সংশোধনী সংবিধান রক্ষারই ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশে বিগত ৩২ বছরে যে ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল ক্ষমতাসীন শাসকদের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করার হাতিয়ার। বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীগুলোর বেশির ভাগই সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়নি। অবশ্য বর্তমান গণতান্ত্রিক এবং বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় মতের ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক।
চতুর্দশ সংশোধনীতে সর্বদলীয় সমর্থন না থাকলেও সংসদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সদস্যের সমর্থন থাকায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। চতুর্দশ সংশোধনী কতটুকু প্রাসঙ্গিক ছিল তা হয়তো এখনো বলা যাবে না। সংশোধনীর বিষয়গুলো ব্যবহারের ফলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই ধরে নেয়া হবে সংশোধনী যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সব মিলিয়ে চতুর্দশ সংশোধনী জাতীয় জীবনে সুফল বয়ে আনবে ।
আরও দেখুনঃ