জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার এই গুরুত্ব অনুধাবন করে অধ্যাপক মার্শাল শিক্ষাকে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । একটি সমাজের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা

C.P Snow (1990) তার The Two Cultures and the Scientific Revolution গ্রন্থে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষিত হতে হবে, অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য। বাস্তব অবস্থার তুলনায় কথাটি অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে, বরং কথাটি এমন যে নিজেদের শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে জীবদ্দশায় আমাদের অতল খাদে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনা। প্রত্যক্ষ করতে হবে, তাহলে সেটিই হবে সঠিক। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিক্ষাই সকল উন্নয়নের মূল ভিত্তি। তাই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত সর্বজনীন শিক্ষানীতি এক্ষেত্রে আলোকবর্তিকারূপে একটি শিক্ষিত জাতি বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।

স্বাধীনতাত্তোর বিভিন্ন শিক্ষানীতি

স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭টি শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। যথা

১. বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন (১৯৭২-৭৪)

২. জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ (১৯৭৮-৭৯)

৩. জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৮৩)

৪. বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৮৭-৮৮)

৫. জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি (১৯৯৭)

৬. শিক্ষা সংস্কার কমিশন (২০০১-০২)

৭. জাতীয় শিক্ষা কমিশন (২০০৩-০৪)

শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি

উপরোক্ত শিক্ষানীতিসমূহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলোতেও অনেক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সেসব নীতি ও পরিকল্পনার আলোকে ইতিমধ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সেগুলো হলো

১. বাংলাদেশ উন্মুক্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২. সহশিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে।

৩. ইসলামী শিক্ষা প্রসারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৪. প্রাইমারি স্কুলে ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগ ।

৫ মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাস ও মানের আধুনিকীকরণ।

৬. শিক্ষা প্রশাসনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন।

৭. শিক্ষাক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিউটার চালু।

৮ নারীশিক্ষা প্রসারে উপবৃত্তি প্রদান ।

অবশ্য অগ্রগতির সাথে সাথে এমন কিছু সমস্যাও বিদ্যমান রয়েছে, যা শিক্ষার অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এবং জাতিকে শিক্ষার সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা

 

শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যাসমূহ
১. বই-পুস্তকের সংকট

বই-পুস্তকের সংকট বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম মৌলিক সমস্যা। প্রতি বছর দেখা যায়, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দু মাস অতিবাহিত হলেও ছাত্রছাত্রীদের হাতে শিক্ষাবোর্ডের সকল বই পৌঁছে না। দেশের মুষ্টিমেয় রাঘব বোয়াল নিজস্ব স্বার্থে পুস্তক প্রকাশনাকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের ফলে ছাত্রছাত্রীরা যথাসময়ে তাদের জ্ঞান অর্জনের খোরাক পেতে বঞ্চিত হচ্ছে। এ থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয়। যে, সমগ্র বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি দু-একজনের স্বার্থ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।

২. শিক্ষাঙ্গনে কলুষিত রাজনীতি

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। ‘৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। কিন্তু ‘৭৫ পরবর্তী আদর্শ বিবর্জিত সামরিক-বেসামরিক রাজনীতিকগণ নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। ফলে শিক্ষাঙ্গন পরিণত হয়েছে রণাঙ্গনে। এ পর্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ ছাত্ররাজনীতির কারণে অজস্র ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে। কলুষিত ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করেছে।

৩. সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি

বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ছাত্র নামধারী কতিপয় বখাটে যুবক শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। তারা কতিপয় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে শিক্ষাঙ্গনে টেন্ডারবাজি, দরপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, সন্ত্রাস ও চাঁদা আদায়ে লিপ্ত থেকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা অর্জন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে ।

৪. কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম্য

সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমানে মানসম্মত নয় এমন অনেক কিন্ডার গার্টেন, কোচিং সেন্টার, মোট বই ও প্রাইভেট টিউশনি শিক্ষাব্যবস্থাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে। শহর এলাকায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ নামেমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ৮০ শতাংশ শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত। সে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৫. সেশন জট :

কলুষিত ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সেশন জট প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। অতি সামান্য কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ ছাত্র সংগঠনগুলো বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে দ্বিধা করছে না। ফলে হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া তথাকথিত ছাত্র নামধারীদের পরীক্ষা পেছানো আন্দোলনের ফলে চার বছরের কোর্স সমাপ্ত করতে ন্যূনতম সাত বছর সময় লাগছে। সেশন জটের কারণে অতিরিক্ত তিন-চার বছর সময় ব্যয় করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং সরকার।

৬. পরীক্ষায় নকল ও অসদুপায় অবলম্বন

সারা বছর বই-পুস্তকের সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় থেকে পরীক্ষার পূর্বে বাজারে প্রচলিত কিছুসংখ্যক ছোট আকারের নোটের ওপর নির্ভর করে পরীক্ষার নকল ও অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে পাস করা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষা অর্জনের মৌল উদ্দেশ্যটাই রয়ে যাচ্ছে আবৃত অবস্থায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বেশকিছু সংখ্যক শিক্ষকও এ ধরনের নৈতিকতা বিবর্জিত কাজে জড়িত থেকে ছাত্রছাত্রীর সহযোগিতা করছে। ফলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনেকের কাছেই প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ‘৯৭-এর বৈশিষ্ট্য

১৯৯৯ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রথমে শিক্ষার লক্ষ্য এবং পরে শিক্ষার উন্নয়নে সুপারিশসমূহ উল্লেখ করা হয়

লক্ষ্যসমূহ

১. শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ারে পরিণত করা।

২. শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবোধ জাগ্রতকরণ।

৩. অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করা ।

প্রস্তাবসমূহ

১. চারস্তর বিশিষ্ট শিক্ষা প্রবর্তন করা হবে (ক) শিশু শিক্ষা ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য। (খ) প্রাথমিক শিক্ষা প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত । (গ) মাধ্যমিক স্তর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। (ঘ) উচ্চ শিক্ষা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।

২. শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলা এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে থাকবে ইংরেজি ।

৩. ধর্মশিক্ষা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে থাকবে।

৪. প্রাথমিক শিক্ষা হবে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক

৫. নবম শ্রেণী থেকে শিক্ষা হবে দ্বিধাবিভক্ত —

(ক) ৩ বছর মেয়াদি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও (খ) ৪ বছর মেয়াদি সাধারণ শিক্ষা ।।

৬. অনার্স কোর্স হবে ৪ বছর মেয়াদি।

৭. নবম শ্রেণী থেকে কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ।

৮ এস এসসি ও এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষায় মৌখিক, ব্যবহারিক ও নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতি চালু করতে হবে।

৯. শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬০ বছর করতে হবে।

১০. শিক্ষাগৃহ ও শিক্ষার উপকরণ বৃদ্ধি করতে হবে ।

১১. শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনশিক্ষা পরিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা পরিদপ্তরকে একীভূত করতে হবে।

১২. শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের ব্যয় ৫% থেকে ৭%-এ উন্নীত করতে হবে ।

১৩. মোট ব্যয় বরাদ্দের ৬০% প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ২৫% বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং ১৫% উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।

১৪. শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে এবং ব্যয় নির্বাহের জন্য ১০% থেকে ১৮% এবং শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ ৭% থেকে ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হবে।

১৫ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূর করতে হবে।

 

জাতীয় শিক্ষানীতি ও বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা

 

জাতীয় শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট (২০০৪)

১৯৯৯ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা ছিল ২৫ বছর আগের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে একে আরো ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর ২১ অক্টোবর ২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সে মোতাবেক ১৫ জানুয়ারি ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞাকে প্রধান করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করে, যা গত ৩১ মার্চ ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। উক্ত শিক্ষা কমিশন যেসব সুপারিশ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো নিম্নরূপ

  • শিক্ষা স্তর হবে চার ভাগে বিভক্ত।

ক. প্রাথমিক শিক্ষা, খ, মাধ্যমিক শিক্ষা, গ. উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও ঘ. উচ্চ শিক্ষা

  • স্কুল পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বে পাঁচ বছর বয়সী সকল শিশুকে স্কুলে আনার ব্যবস্থা করা।
  • স্কুল ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে আগামী ১০ বছরের প্রতি বছরে ১০০টি করে মোট ১০০০টি প্রাথমিক স্কুল এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি বছর ২৫টি নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা।
  • কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও স্কুলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা।
  • সাধারণ, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম—এ তিন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল পাঠ্য বিষয়ে সমতা আনা।
  • শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।
  • মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে চালু বহুমুখী শিক্ষার পরিবর্তে একমুখী ও সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।
  • কোচিং সেন্টার ও নোট বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা।
  • উচ্চ শিক্ষায় সেশন জট কমাতে শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপ্তিকাল কমিয়ে আনা।
  • প্রাথমিক স্কুলের মতো পর্যায়ক্রমে এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা ।
  • বিসিএস-এ মাদ্রাসা শিক্ষা ক্যাডার প্রবর্তন করা।

উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও কমিশন ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে সরকারের সঙ্গে সমাজের অপরাপর অংশের আলোচনার সুপারিশসহ শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে ও ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নীতি-বিধান, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

শিক্ষা বিস্তারে কতিপয় সুপারিশ

বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা ছিল ৩০ বছর আগের। বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে একে আরো ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা এ শিক্ষানীতিতে অনুপস্থিত শিক্ষা সম্প্রসারণে কতিপয় সুপারিশ নিচে বর্ণিত হলো

১. সমাজ ও রাষ্ট্রীয় চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাঠ্যক্রম ও শিক্ষান্তর নির্ধারণ করা উচিত।

২. ধর্মীয় মূল্যবোধকে নৈতিকতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।

৩. প্রাথমিক শিক্ষায় স্কুল ত্যাগ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. মাদ্রাসা শিক্ষাকে উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত করা।

৫ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্ত করা।

৬. বেন ড্রেন বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৭. নকল রোধ করার জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিকে পুনর্বিন্যাস করা।

৮. নোট বই, টিউশনি ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা।

৯. শিক্ষকদের দায়িত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা ।

১০. শিক্ষা প্রশাসনকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করা ।

১১. শিক্ষার সুযোগ ও উপকরণ সুবিধা বৃদ্ধি করা।

১২. সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হতে হবে সৎ, নীতিবান, যোগ্য ও দক্ষ মানুষ গড়া।

১৩. সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ তার জিডিপির ২ শতাংশ শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করলেও এর উল্লেখযোগ্য অংশ অপচয় হচ্ছে। রিপোর্টটিতে শিক্ষা প্রসারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীশিক্ষা বিস্তারের প্রতি জোর দেয়া হয়।

উপসংহার :

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার সম্প্রসারণ অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে সাম্প্রতিককালে শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকার প্রতিটি বাজেটেই শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে আসছে। দেশে সাক্ষরতার হার বাড়াবার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান মৌলিক সমস্যাসমূহের প্রতিকার সম্ভব হলে সার্বিক শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি নৈতিক গুণাবলী অর্জন ও মানব সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment