তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।
Table of Contents
তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পবিপ্লবের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন পৃথিবীতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি দূরকে এনেছে চোখের সামনে, পরকে করেছে আপন, আর অসাধ্যকে সাধন করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। কারণ একবিংশ শতাব্দীর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুইই আবর্তিত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিকে ঘিরে।
তথ্যপ্রযুক্তিই আগামী দিনে জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। বিশ্বায়নের প্রশস্ত আঙিনায় তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল অবদানের ফলে সম্ভাবনাময় যে নয়া অর্থনীতির আদল গড়ে উঠছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্যপ্রযুক্তি কি?
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনার আগে তথ্যপ্রযুক্তির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও এর কয়েকটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার।
তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সময়কে তথ্যপ্রযুক্তি বলা হয়। কম্পিউটিং, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
তথ্যপ্রযুক্তির কয়েকটি বিশেষ দিক
ডেটাবেস উন্নয়ন প্রযুক্তি সফটওয়্যার উন্নয়ন প্রযুক্তি, নেটওয়ার্ক, মুদ্রণ ও বিপ্রেমাফিক প্রযুক্তি, তথ্যভাণ্ডার প্রযুক্তি, বিনোদন প্রযুক্তি, শিক্ষণ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থ ইত্যাদি সবই তথ্যপ্রযুক্তির এক একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
তথ্যপ্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য
তথ্যপ্রযুক্তির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়।
- তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সময় বাড়ার সাথে সাথে কাজের খরচ কমতে থাকে।
- তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র ও কাজের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
- উন্নত প্রযুক্তি লেনদেন ও তথ্য যোগাযোগে দ্রুত পরিবর্তন সাধন করে ।
- তথ্যপ্রযুক্তি চিকিৎসা, শিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের গতিকে ত্বরান্বিত ও সহজ করে।
- তথ্যপ্রযুক্তি উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে অপচয় হ্রাস করে।
- তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও বর্তমান বাংলাদেশ/তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের বর্তমান অবস্থা :
গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে অভাবনীয়া সব পরিবর্তন । তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তির এ জীবনকাঠির স্পর্শে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। গত দশ বছরে এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি যে বাংলাদেশের জানাও সম্বাবনাময় প্রযুক্তি, এ কথা আজ সবাই উপলব্ধি করছে। তরুণ প্রজন্য, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, ইপিবি, বিসিসি, বিসিএস, নন- রেসিডেন্ট বাংলাদেশীদের সংগঠন টেকবাংলা প্রভৃতি সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ গত দশ বছরে এগিয়েছে।
বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যে জীবনযাত্রার মান বদলে দিতে পারে তা বিশ্বাস করতে এখন আর কেউ ভুল করছে না। তাই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে এখন অনেক বেড়েছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ছে। দেশে এখন কম্পিউটার হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ থেকে ৮ হাজারের মতো। সারা দেশে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের শোরুম রয়েছে সহস্রাধিক। ঢাকাতেই গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও শতাধিক।
আমাদের দেশে বর্তমানে কম্পিউটার মেলা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, ওয়েব ডিজাইন প্রতিযোগিতা এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রদর্শনী অহরহ হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশের শহরগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সাইবার ক্যাফে একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ইলেকট্রনিক কমার্সের যাত্রা শুরু হয়েছে। অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জোরেশোরেই কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সরকারের পদক্ষেপ
কোনো দেশকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিকাশের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের শাসনামলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সহায়ক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন—-
- তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সর্বামো প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহা বাড়ানো। আর তাই দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হচ্ছে। প্রায় সারা দেশ ডিজিটাল টেলিফোনের আওতায় চলে আসছে। ইতোমধ্যেই দেশের প্রতিটি জেলায় ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। শিগগিরই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
- তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রয়াসে সরকার ঢাকার প্রাণকেন্দ্র কারওয়ান বাজারে ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্লোরে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি ‘আইসিটি ইনকিউবেটর’ স্থাপন করেছে।
- বিদেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে ‘আইসিটি বিজনেস। প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।
- তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে কালিয়াকৈরে ২৬৫ একর জমিতে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রতি রেলওয়ের ফাইবার অপটিক লাইন সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
- দেশের সকল অঞ্চলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার এবং এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাৰ লক্ষ্যে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা কোর্স প্রবর্তন এবং কম্পিউটার প্রদান কর্মসূ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে আইসিটি ইন্টারশীপ কর্মসূচি। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থ উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা
তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে উন্নত দেশগুলোতে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারতে তার প্রভাব অনেক আগে পড়লেও আমরা হা থেকে অনেক পেছনে পড়ে আছি। তথ্যপ্রযুক্তিকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে এবং মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভারত, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে আজ আমরা তথ্যের সুপার হাইওয়ের সাথে যুক্ত হতে পারছি না।
আবার সরকারের অনীহার কারণে ফাইবার অপটিকস ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা। তাই আমাদের প্রচুর টাকা খরচ করে ব্যবহার করতে হচ্ছে ভি স্যাটের লাইন। অথচ ভারত এ সকল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি রুপি উপার্জন করছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে।
দেশে কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরি বেশ বেড়েছে। প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় আগামী ৩ বছরের মধ্যে সাড়ে হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্ভাবনাময় সফটওয়্যার শিল্প :
বাংলাদেশে বর্তমানে সফটওয়্যার শিল্প সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিক্ষ হিসেবে দেখা দিয়েছে। হার্ডওয়্যার নির্মাণের সঙ্গে এখনো বাংলাদেশ তেমনভাবে জড়িত হয়নি। দেশে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট তিনটি ক্যাটাগরিতে হচ্ছে। এগুলো হলো—কাস্টমাইজড সফটওয়্যার, মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ও ওয়েব সফটওয়্যার। এর মধ্যে দেশে শিক্ষা ও বিনোদন। কম্পিউটারভিত্তিক মাল্টিমিডিয়ার বাজার অতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
দেশের ১৬ শতাংশ সফটওয়্যার ফার্ম তাদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ভুটান, কানাডা, সাইপ্রাস, দুবাই, জার্মানি, ভারত, মালয়েশিয়া, কেনিয়া | যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সফটওয়্যার রপ্তানি হচ্ছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প
বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার কি প্রদানের জন্য বিপুল সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কোনো মুবর্তী আর বেকার থাকছে না। দেশ-বিদেশে এখন কম্পিউটার প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও আইটি কর্মীদের বিপুল চাহিদা দেখা দিয়েছে।
তারা সহজেই ভালো উপার্জন করতে পারছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়নের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। ভারতের আইটি কর্মীরা বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে আর উপার্জন করছে কোটি কোটি ডলার । তাই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকার সমস্যা দূর করতে হলে এর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য করণীয়
গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে অভাবনীয় সব পরিবর্তন শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং জীবনযাপন পদ্ধতিকে পাল্টে দিচ্ছে এই তথ্যপ্রযুক্তি। আর এর সুবিধা ভোগ করেছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। ইলেকট্রনিক বাণিজ্যের যে সিংহদুয়ার খুলতে শুরু করেছে তার সুফলও ধনী দেশগুলোই বেশি ভোগ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ধনী দেশগুলোর পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে মূলত তাদের রাষ্ট্র, বাজার এবং সমাজের উদ্যোগী ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকার কারণে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সাথে উন্নত দেশগুলোর আইসিটি সেক্টরে এক ধরনের বৈষম্য ইদানীং আলোচিত হচ্ছে। ইংরেজিতে এক বলা হচ্ছে Digital Divide বাংলায় ডিজিটাল বৈষম্য। তাই একবিংশ শতাব্দীর এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে যোগ্যতা দিয়ে এবং তথ্যপ্রযুক্তির নবতর কৌশল আয়ত্তে এনে ।
আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের যোগ্যতা বারবারই প্রমাণ করেছে। তাই আমাদের এই তরুণদের মেধা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কার্যকরী করে তুলতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রসার
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এজন্য বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করে তাকে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় রূপান্তরিত করতে হবে। প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার কারিকুলামকে যুগোপযোগী ও সর্বাধুনিক রাখার জন্য একটি স্থায়ী তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে।
দেশ সেরা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ এই কমিশনের সদস্য হবেন। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও যাতে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানার্জনের সমান সুযোগ-সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা খাতে সর্বাধিক বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
গ্রামভিত্তিক লাগসই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলা
বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। দেশের সিংহভাগ যুবদের বসবাসও গ্রামেই। সুতরাং এই বিশাল সংখ্যক গ্রামবাসীকে শিক্ষিত, সচেতন ও তথ্যপ্রযুক্তির আনে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি তাদের শ্রম ও মেধাকে কাজে না লাগাতে পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণ কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বিশ্বে টিকে থাকার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই গ্রামভিত্তিক লাগসই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
জাতীয় তথ্য অবকাঠামো গঠন
জাতীয় তথ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা ব্যতীত বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের অংশীদার হওয়া সম্ভব নয়, যে রকম সংযোগ সড়ক ছাড়া মহাসড়কে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ত অবকাঠামো ব্যতীত গ্রামীণ বাংলাদেশ তথ্য বৈষম্যের শিকার হবে, যা বাজার অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ খাতে সুবিধালাভের সম্ভাবনাকে সংকুচিত করে ফেলবে। ফলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নতুন অর্থনীতির অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্য অবকাঠামোর মেরুদণ্ড। শক্তিশালী ও সুবিস্তৃত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যতীত তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন একেবারেই অসম্ভব। অথচ বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থান পৃথিবীর একেবারে নিচের দিকে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তাই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা
- টেলিনেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বার্ষিক লক্ষ্য নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
- টেলি নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (TRC) সর্বজনীন সেবা লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া ।
- টেলিঘনত্ব ও টেলিনাগালের হার বৃদ্ধি করা।
- টেলিযোগাযোগ খরচ সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আনা
- দ্রুতগতির তথ্য সংযোগ (High speed data network) প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
- জরুরিভিত্তিতে ডাকঘর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণগ্রন্থাগার, রেলস্টেশন, স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার, হাট-বাজার, এনজিও শাখায় ইন্টারনেট স্থাপন করা।
- সর্বজনীন টেলিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টিএন্ডটিকে (T&T) সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া।
- অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- জরুরি ভিত্তিতে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপন করা।
- মোবাইল টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সকলের জন্য উন্মুক্ত করা
- বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মধ্যে আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করা ।
- দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের খরচ নির্দিষ্ট করা।
- কন্ঠ ও তথ্য যোগাযোগকে (Voice & Data Communication) সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা।
- সর্বোপরি নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ।
মানবসম্পদ উন্নয়ন
দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ সাধন সম্ভব নয়। তাই মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে
- ঘোষিত ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা।
- বাজারের চাহিদার প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার কারিকুলাম দ্রুত নবায়নের ব্যবস্থা করা।
- সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা।
- ডিগ্রি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা।
- বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
- ইংরেজি শিক্ষাকে প্রযুক্তি শিক্ষা হিসেবে গুরুত্ব দেয়া।
- বাস্তবভিত্তিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
- তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষক ও প্রশিক্ষকবৃন্দের যথাযথ সম্মানী নিশ্চিত করা।
- ছাত্র ও কর্মজীবীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করা।
- দ্রুত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুতের ব্যবস্থা করা।
- পর্যায়ক্রমে দেশের সব স্কুলে ‘কম্পিউটার ল্যাব’ চালু করা।
- মৌলিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি চালু করা
বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের। যুগে জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি আমরা কত দ্রুত সাড়া দেব তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের বাংলাদেশের ভাগ্য। তাই আমাদের উচিত অতি দ্রুত তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প, ব্যবসা- বাণিজ্য, ব্যাংকিং ও অর্থনীতি চালু করা, আর এজন্য আমাদের করণীয় হবে
- সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে শতকরা ১৫ ভাগ অভ্যন্তরীণ মূল্য সুবিধা নিশ্চিত করা।
- সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা
- দেশে নিয়মিত সফটওয়্যার ডিজাইন ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আয়োজন করা।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ান দেশসমূহে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়া ও বাণিজ্যিক অফিস স্থাপন করা ।
- সফটওয়্যার শিল্পে যৌথ উদ্যোগকে পাঁচ বছরের জন্য কর অবকাশের সুবিধা দেয়া।
- সফটওয়্যার কোয়ালিটি ইনস্টিটিউট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা ।
- সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক বাজারসমূহে ব্যবসায়িক সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা ।
- সকল অফিস-আদালতে বাধ্যতামূলক ই-মেইল ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- আধুনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জরুরি কর্মসূচি গ্রহণ করা
- ই-কমার্সভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে জোরদার করা।
- বাংলাদেশ ভিত্তিক ই-কমার্স কনটেন্ট তৈরি উৎসাহিত করা ।
- জনগণের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা।
- স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগীদের ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা।
- বাংলা ভাষায় ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য সেবা চালু করা ।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণ
সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ, যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের কোনো বিকল্প নেই । আর এজন্য করণীয় হলো
- ব্যাপক কৌশলগত পরিকল্পনাভিত্তিক Banking Automation নিশ্চিত করা।
- রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সম্পূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক করার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকে Automated Clearing House অবিলম্বে চালু করা।
- ২০০৫ সালের মধ্যে ব্যাংকসমূহের সকল উপজেলাভিত্তিক শাখাগুলো নেটওয়ার্কের আওতায় আনা।
- ই- কমার্স Payment sever পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ সরকারব্যবস্থা গঠন
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন সাধন করার জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা। আর এ জন্য করণীয় হলো
- সরকারি তথ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
- সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে তাগুতিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা চালুর মাধ্যমে সফটওয়্যার শিল্পের স্থানীয় বাজার সৃষ্টি করা।
- সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা আঞ্চলিক Video Conferencing System গড়ে তোলা ।
- সরকারি ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়াকে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া Web-এর আওতায় আনা।
- সরকারি বিভিন্ন সেবা তথা আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স, ট্রেডমার্ক, নাগরিকত্ব নিবন্ধন, স্বত্বাধিকার ও জমি নিবন্ধন সেবা ইন্টারনেটের আওতায় আনা।
- সরকারি সুবিধা বিশেষ করে বেতন, অবসর ভাতা ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা।
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের দায়িত্ব কার
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিকে সকল প্রকার উন্নয়নের মূল বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। আর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশের মূল দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে ।
এজন্য যত রকমের আইনগত অবকাঠামো, অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দরকার তা সরকারকে যথাসম্ভব কম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ধনী ও শিল্পপতিদেরকেও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটানো কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
উপসংহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বে সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত প্রসারমান ও মূল্যবান শিল্প। তাই একবিংশ শতাব্দীর জটিল ও কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির পর্যাপ্ত ও যথাযথ বিকাশ ঘটেনি। তাই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যুবদের বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদেরকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অচিরেই বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে খুধা ও দারিদ্রমুক্ত হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নি অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে এটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা।
আরও দেখুনঃ