Site icon Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

প্রশাসনিক সংস্কার ও বাংলাদেশ রচনা

প্রশাসনিক সংস্কার ও বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করবো আজ। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে নতুন হলেও জাতিগত বিবেচনায় এর ইতিহাস সুপ্রাচীন। দেশটি প্রায় ২০০ বছর যাবৎ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন এবং ২৫ বছর যাবৎ পাকিস্তানের শাসনাধীন ছিল। ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে প্রবর্তিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা বর্তমান সময়কার স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রশাসন রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যতম উপাদান।

প্রশাসনিক সংস্কার ও বাংলাদেশ

সরকারের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রশাসনই মূল ভূমিকা পালন করে। দক্ষ, গতিশীল এবং যুগোপযোগী প্রশাসনের অভাবে দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার তাৎপর্যের কারণেই বিজ্ঞজনেরা একে নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করে থাকেন। একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রশাসন কীভাবে অগ্রগতিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এটা অনুসন্ধান করতে গিয়েই প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হয়।

 

 

প্রশাসনিক সংস্কার :

বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেরই একটি নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণকামী রাষ্ট্র বলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে প্রশাসনিক কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমানে গতিশীল ও পরিবর্তনশীল সমাজে প্রশাসনিক কাজের পরিধির ব্যাপকতার ফলে প্রশাসনিক কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সামজিক প্রয়োজন তথা রাষ্ট্রীয় চাহিদা এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপটের সাথে সঙ্গতি রেখেই প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয় । এর একেই বলা হয় প্রশাসনিক সংস্কার বা Administrative Purification |

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই সুষ্ঠু ও সুন্দর প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশে সচিবালয় পুনর্গঠন ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের প্রণীত বিভিন্ন আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাঠামোগত রূপ প্রণয়ন করা হয়, যা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ হিসেবে বিবেচিত। আর এ বিকেন্দ্রীকরণ ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রশাসনিক সংস্কার।

পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে, বিশেষত সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু কিছু প্রশাসনিক পরিবর্তন, ও পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে, যা প্রশাসনিক সংস্কারের আওতাভুক্ত।

 

 

কেইডেন (১৯৯১) প্রশাসনিক সংস্কারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘It is the induced systematic improvement of public sector & its operational performance.’ অর্থাৎ ‘এটা হচ্ছে সরকারি খাতের এবং এর সম্পাদিত কার্যাবলির প্ররোচিত পদ্ধতিগত উন্নয়ন সাধন।

জাতিসংঘ প্রদত্ত (১৯৮৩) সংজ্ঞানুযায়ী, It is the deliberate use of authority and influence to apply new measures to an administrative system so as to change its goals. structures and procedures with a view to improving it for development purposes.”

Jon Quals প্রশাসনিক সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, যা সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । তিনি বলেন, ‘It a deliberate attempt to change both (a) the structure and procedures of public bureaucracy; and (b) attitudes and behaviour of public bureaucrats involed to promote organizational effectiveness and attain national goals.

তার সংজ্ঞার অর্থ করলে দাঁড়ায় : ক. সরকারি আমলাতন্ত্রে অবকাঠামো ও পদ্ধতিসমূহ এবং খ. সরকারি
আমলাদের মনোভাব ও আচরণ, যা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকারিতা উন্নয়নে এবং জাতীয় উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনে
ব্যাপৃত এ ধরনের পরিবর্তন আনয়নের একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টাই হচ্ছে প্রশাসনিক সংস্কার। প্রশাসনিক সংস্কার মূলত সরকারি উদ্দেশ্য অনুযায়ী সার্বিকভাবে সরকারি ক্ষেত্রের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তা নানাভাবে শাসক ও শাসিতের মধ্যকার সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।

 

 

প্রশাসনিক সংস্কারের আবশ্যকতা :

সমাজের সতত পরিবর্তনশীল চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্রই এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তবে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসন- পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং চাহিদাসমূহ মোকাবিলার জন্য এ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি জনসাধারণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি মূলত দু ভাবে প্রভাবান্বিত : ১. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার অনমনীয়তা এবং ২. আমাদের ব্যবহারগত পদ্ধতিসমূহ।

আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে অনেকে অকর্মণ্য সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। আবার অনেকে পদ্ধতিগত অনমনীয়তা হিসেবে বিবেচনা করেন।

আমাদের দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যাবলি সাধারণত আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু প্রচলিত আইনে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেক বেশি ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে । এর ফলে আইনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে বা প্রায় সকল ক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রতি এবং সমাজের প্রতি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আইনি কর্তব্য সৃষ্টি হয় না, সৃষ্টি হয় আইনি কর্তৃত্ব।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রশাসনিক দুর্নীতি ব্রিটিশ আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রায় সকল স্তরের কর্মকর্তার মধ্যে তা সংক্রামক ব্যাধির মতো বিরাজ করছে। আজ দেশের জনগণকে প্রশাসনিক দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে প্রতি পদে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। এ অন্যায়, অবিচার আর দুর্নীতি থেকে জনগণকে মুক্ত করতে প্রশাসনিক সংস্কারের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের সরকার অনেকাংশেই আমলানির্ভর আর আমলানির্ভর সরকার আমলাতন্ত্রের নামান্তর। গণতন্ত্র আর গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্য আমলাতন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়। এবং এর ফলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়। আবার দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক আমলাদের কাছে অন্যায় ও বেআইনি আবদারই আমলাদের দুর্নীতিবাজ করার জন্য অনেকাংশে দায়ী।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সাধারণত মাঠে-ময়দানে বক্তৃতা ও বিবৃতিদানে পটু। দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যা সম্পর্কে তারা তেমন একটা ওয়াকিফহাল নন। অন্যদিকে আমলাতন্ত্র দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কাজের জন্য দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে।

তাই আমলাতন্ত্র চায় না রাজনৈতিক সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করুক। অন্যদিকে রাজনৈতিক সরকারও আমলাদের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। ফলে বিদ্যমান প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি হয়, যে কারণে সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

তাছাড়া বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিও একটি সমস্যা এবং সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থকে পর্যুদস্ত করে। তাই এ ধরনের বাস্তবতায় দেশও জনগণের স্বার্থে প্রশাসনিক সংস্কার একান্ত আবশ্যক।

 

 

সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়সমূহ : বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যসমূহই প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার বর্তমান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কমপক্ষে ২১টি কমিশন প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য গঠিত হয়েছে। এসব কমিটি সংস্কারের উদ্দেশ্য নানাবিধ সুপারিশমালা পেশ করেছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো সুপারিশই পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়িত হয়নি। মূলত আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক পদ্ধতি থেকেই অধিকাংশ সংস্কার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দৃঢ় সিদ্ধান্তের অভাব, পরিবর্তনের ব্যাপারে অনীহা এবং বর্তমান অবস্থা অপরিবর্তিত রাখার প্রবণতার কারণেই মূলত সংস্কার কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয় ।

নিম্নবর্ণিত কারণসমূহকেও প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় :

স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে আজ পর্যন্ত গঠিত ২১টি Public Service Reorganization Commission গঠিত হয়। এসব কমিশন ৫০০-এর মতো সুপারিশমালা পেশ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, আমলাদের তীব্র বিরোধিতা এবং সংস্কারের প্রতি ঐকান্তিকতাহীন প্রবণতা সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

 

 

প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কতিপয় সুপারিশ :

বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য নিম্নবর্ণিত সুপারিশমালা বিবেচনায় আনা যেতে পারে :

 

১. সরকারি ক্ষেত্রসমূহের সীমা নির্ধারণ :

স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশের সরকারের আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৩৮টি, যেখানে মালয়েশিয়ায় ২৪টি এবং কোরিয়ায় ২৫টি। বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছে। কিন্তু সরকারের আয়তন বাড়লেও গুণগত মান আদৌ বাড়েনি। এজন্যই সরকারের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ প্রয়োজন।

এজন্য নিম্নবর্ণিত চারটি পদক্ষেপ নিতে হবে : ক. সরকারের আয়তন ছোট এবং যথাযথ করা; খ. বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বৃদ্ধি করা; গ. স্থানীয় সরকারসমূহের প্রতিপালন; ঘ. ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ বৃদ্ধিকরণ।

 

২. জবাবদিহিতা এবং প্রতিবেদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ (Enhancing Accountability and Responsiveness of the Govt.) :

বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থায় পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পর্যন্ত কোথাও জবাবদিহিতার লেশমাত্র নেই।

এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ব্যবস্থানি গ্রহণ করা যেতে পারে :

ক. Individual Responsibility থাকতে হবে;

খ. সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কর্মসম্পাদনের কর্তৃত্ব দিতে হবে;

গ. Monitoring এবং Supervision-এর ব্যবস্থা থাকতে হবে;

ঘ. গণমাধ্যমের Accessibility থাকতে হবে;

ঙ. নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

চ. ন্যায়পালের ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে;

ছ. পার্লামেন্টে স্ট্যান্ডিং কমিটি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে;

জ. Customer Service Standards প্রতিষ্ঠা করতে হবে;

ঝ. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে; ঞ. দুর্নীতি দূর করতে হবে।

 

৩. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি :

প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনয়নে যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা হলো :

ক. Job description নির্দিষ্ট থাকতে হবে;

খ. কাজের গতিপ্রকৃতি প্রকাশ করতে হবে;

গ. বর্তমান প্রচলিত ‘Secret Act’ বাতিল করতে হবে;

ঘ. Discretionary power হ্রাস করতে হবে;

ঙ. আর্থিক সংশ্লেষণ আছে এমন সব বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

 

৪. দক্ষতা বৃদ্ধি :

প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা আবশ্যক :

ক. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে;

খ. প্রশাসনে উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে;

গ. নিয়োগ পদ্ধতি আধুনিক করতে হবে, এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার ব্যবস্থা থাকতে হবে;

ঘ. শিক্ষানবিশকালকে গুরুত্বের সাথে বিচার করতে হবে;

ঙ. Motivation এবং Inventives প্রদানের ব্যবস্থা করতে করে;

চ. Automation এবং Information Network system (INS) প্রবর্তন করতে হবে;

ছ. বিভিন্ন সার্ভিসের মাঝে বিরাজমান বৈষম্য দূর করতে হবে।

 

 

৫. গতিশীলতা ও কার্যকারিতা স্থবির হয়ে পড়া বাংলাদেশের প্রশাসনে গতিসঞ্চার এবং কার্যকর করতে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে :

ক. প্রতিটি কর্মসম্পাদনে একক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব প্রদান করতে হবে;

খ. দ্রুত এবং যথাযথ logistic Support প্রদান করতে হবে;

গ. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিনটি পর্যায় ধার্য করতে হবে;

ঘ. Performance Auditing ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে;

ঙ. পুরাতন ও জটিল আইনসমূহ সংস্কার করতে হবে;

চ. চুক্তিভিত্তিক নিয়োগব্যবস্থা বাতিল করে চাকরিতে Promotion & Incentives ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

 

৬. প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ :

প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত দুটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

ক. উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চিহ্নিতকরণ এবং কর্মকাণ্ড হাতে নেয়ার পর জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

খ. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

 

৭. নিয়ন্ত্রণমূলক ও আইনগত সংস্কার :

প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা ও আইনগত সংস্কারে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে :

ক. সরকারি অফিসসমূহে অনর্থক কালক্ষেপণ যেন না হয় সেজন্য নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করতে হবে;

খ. আইন মন্ত্রণালয়ে Clearing house প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা সব ধরনের আইন-কানুনের হিসাব রাখে;

গ. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে;

ঘ. Low Reform Commission-কে কার্যকরী করতে হবে;

ঙ. Courtসমূহের গতি এবং ক্ষমতা বাড়াতে হবে;

চ. Judiciary-এর উন্নয়ন সাধন করতে হবে;

ছ. Lower Courtসমূহের ওপর Supervision এবং monitoring জোরদার করতে হবে;

জ. শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে।

 

৮. বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্কারসমূহ :

প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সেজন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

ক. সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।

খ. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পেশাগত দিক দিয়ে দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে।

গ. Civil Servants হচ্ছে agents of change বা পরিবর্তনের প্রতিনিধি। অতএব তাদেরকে পূর্ণমাত্রায় স্বীকৃতি দিতে হবে।

ঘ. সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যমসমূহ যেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে তা নিশ্চিত করতে হবে ।

ঙ. সংস্কার কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে হাতে নিতে হবে। হঠাৎ কোনো ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিলে তা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্কারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কার্যকরী সংস্কার সাধনের জন্য অত্যন্ত দক্ষ এবং নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির সদস্যরা হবেন সত্যিকার অর্থে নিবেদিতপ্রাণ। আমূল পরিবর্তন না এনে বরং ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনতে হবে।

আমলাদের পাশ কাটিয়ে কোনো সংস্কার কর্মসূচিই সার্থক করা সম্ভব হবে না । এজন্য সংস্কার হতে হবে এমনভাবে যেন আমলারা তা সহজে মেনে নেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সরকারের আন্তরিকতা এবং সরকারি কর্মচারীদের সহযোগিতাই যথাযথ ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

কমিটি গঠন এবং প্রস্তাবনা পেশ করাই আসল কথা নয়, বরং বাস্তবায়নই আসল কথা। আমাদের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আইনবিদ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের ওপর এ সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়ন নির্ভরশীল। তাই প্রথমে আমাদের রাজনীতিবিদের দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে, নতুবা প্রশাসনিক সংস্কার অধরাই থেকে যাবে।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version