বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি রচনা

বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিঃ বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। বাংলাদেশে যেসব সামাজিক সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে দারিদ্র্য প্রধান সমস্যা। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে এ দেশের সমাজজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত।

Table of Contents

বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি

বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি

দারিদ্র্য আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করছে। ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারছে না এ দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্রোর প্রভাবে আমাদের দেশের মানুষ মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম করছে।

কাজেই দারিদ্র্য বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচিসমূহের পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বের দাবিদার।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি

 

দারিদ্র্য:

দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক বিষয় একে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। আভিধানিক অর্থে ‘দারিদ্র্য্য’ বলতে অভাব বা অনটনকেই বোঝায়। দারিদ্র্য মানে মৌলিক সামর্থ্যের অভাব। ন্যূনতম খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবসমূহ মৌলিক সামর্থ্যের অভাবের আওতায় পড়ে বস্তুত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরিদ্র হলো সেই ব্যক্তি, যে তার আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে নিতান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার ন্যূনতম মানও বজায় রাখতে পারে না।

বর্তমানে দারিদ্র্য পরিমাপে ‘দারিদ্র্যসীমা’ ধারণাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই হিসাবে যারা দৈনিক
২১২২ কিলো ক্যালরির কম খাবার পায় তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। আর যারা ১৮০৫ কিলো ক্যালরির কম খাবার পায় তারা চরম দারিদ্র্যের শিকার।

সমাজবিজ্ঞানী গিলিন-এর মতে, ‘যাদের জীবনযাত্রার মান তাদের সমাজনির্ধারিত জীবনযাত্রার নিচে তারাই দরিদ্র।’

দারিদ্র্যের উল্লিখিত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রভাব খুব বেশি। তাই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি:

যদিও বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষীত সকল নীতি-পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিগত প্রায় সব সরকারই বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তবুও বাংলাদেশে দারিদ্রা পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক।

বিভিন্ন তথ্য মতে, দেশে দারিদ্র্য্য ক্রমহ্যসমান হলেও এখনো দারিদ্র্যের উপস্থিতি সুবিস্তৃত ও গভীর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত থানা আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ, ২০০০-এর প্রাণনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দৈনিক মাথাপিছু ২১২২ কিলোক্যালরি গ্রহণ পরিমাপে ২০০০ সালে পরী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪২.৩ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং দৈনিক ১৮০৫ কিলোক্যালরি গ্রহণ পরিমাপে ১৮৭ শতাংশ ছিল চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে।

১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল ৬১.৯ শতাংশ এবং ২০০০ সালে তা নেমে আসে ৪২.৩ শতাংশে। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে গ্রামাঞ্চলে চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল ৩৬.৭ শতাংশ এবং ২০০০ সালে তা নেমে আসে। ১৮ ৭ শতাংশে। অপরদিকে ২০০০ সালে শহরাঞ্চলে ৫২.৫ শতাংশ দারিদ্র্য এবং ২৫.০ শতাংশ চরম দারিদ্র্য্য বিরাজমান ছিল। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে তা ছিল যথাক্রমে ৬৭.৭ শতাংশ এবং ৩৭.৪ শতাংশ।

পক্ষান্তরে ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ে ৬২.৬ শতাংশ দারিদ্র্য এবং ৩৬.৮ শতাংশ চরম দারিদ্র্য বিরাজমান ছিল। ২০০০ সালে তা নেমে আসে যথাক্রমে ৪৪.৩ শতাংশ ও ২০.০ শতাংশে।

এ দেশের দারিদ্র্যের হার খুব ধীরে হলেও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তবে অঙ্ক যা-ই বলুক, এখনো বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। তাদের সংখ্যা যত দ্রুত কমা উচিত ছিল তা কমেনি। প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি ভালো হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমেনি। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশের ধনী-দরিদ্র্যের সম্পদের ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া ।

 

ধনী-গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি:

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেলেও দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। দেশে ধনী আরো ধনী এবং গরিব আরো গরিব হচ্ছে। ১৯৯৫-৯৬ সালে দেশের সর্বোচ্চ ধনী মাত্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ছিল মোট জাতীয় আয়ের ২৩.৬২ শতাংশ। মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০০০ সালে তা বেড়ে হয় ৩০.৬৬ শতাংশ। অপরদিকে ১৯৯৫-৯৬ সালে দেশের সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ছিল মোট জাতীয় আয়ের ০.৮৮ শতাংশ।

২০০০ সালে তা আরো কমে ০.৬৭ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ সবচেয়ে গরিব জনগোষ্ঠীর আয় কমে গেছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪ শতাংশ) সবচেয়ে ধনী এই পরিবারগুলোর পরে যারা আছে, সেই ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় গত পাঁচ বছরে ৭ শতাংশ কমে ৭৬ শতাংশ থেকে ৬৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।

১৯৯৫-৯৬ সালে সর্বোচ্চ ধনী ৫ শতাংশের আয়ে পরিমাণ ছিল সবেচেয়ে গরিব ৫ শতাংশের আয়ের তুলনায় ২৭ গুণ বেশি। ২০০০ সালে তা বেড়ে ৪ গুণ হয়েছে। সমীক্ষার তথ্যে দেখা যায়, সবচেয়ে গরিবদের মধ্যেও শহর-গ্রামের বৈষম্য বেড়েছে শহরের চেয়ে গ্রামীণ গরিবদের আয় কমেছে অনেক বেশি হারে।

অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় আয় বন্টনের ক্ষেত্রে গরিব জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত রাখা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে আমাবলকে উপেক্ষা করাই এই বৈষম্য বৃদ্ধির কারণ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দারিদ্র্য বিমোচনের বাহারি কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। শহরগুলোতে এক শ্রেণীর মানুষের ভোগবিলাসের পাশাপাশি সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাহীন জীবনযাপন প্রকটভাবেই এই বৈষম্যের বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

 

BangladeshGurukul.com Logo 252x68 px White Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

 

সমাজে দারিদ্র্যের প্রভাব:

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ বর্তমানে দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত হবার কারণে এ দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে দারিদ্র্য অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা দারিদ্র্যের প্রভাবমুক্ত। এ দেশের প্রতিটি সমস্যার সাথেই দারিদ্র্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে দারিদ্র্যের বিরূপ প্রভাবের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো নিচে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. দারিদ্রের ব্যাপকতার ফলে দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী অম্ল, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদনসহ তাদের জীবনের কোনো মৌলিক চাহিদাই সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না।

২. যত মানুষ তত রোজগার এই ধারণার বশবর্তী হয়ে দরিদ্র জনগণ অধিক সন্তান জন্ম দেয় বলে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক ভাঙন, আত্মহত্যা, যৌতুকপ্রথা, পতিতাবৃত্তি, অপরাধপ্রবণতা প্রভৃতি দারিদ্র্যের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. দারিদ্র্যের ব্যাপকতার কারণেই বাংলাদেশে কৃষি খাত, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, ভারী শিল্পসহ ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটছে না।

৫. দারিদ্র্যের প্রভাবে দেশে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বার্ধক্য, অকালমৃত্যু, অন্ধত্ব, দুর্বলতা, অসুস্থতা প্রভৃতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬. দারিদ্রোর প্রভাবে দেশে সামাজিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ, যুব অসন্তোষ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হরতাল, ধর্মঘট প্রভৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৭. দারিদ্র্যের কারণে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারায় দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলছে।

৮. দারিদ্র্যের প্রভাবে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি অর্জন করা যাচ্ছে না।

এক কথায় বলা চলে, দারিদ্রা হলো সকল সামাজিক সমস্যার মূল উৎস এবং আমাদের দেশে জাতীয় উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দারিদ্র্য শুধু একটি সামাজিক সমস্যাই নয়, বরং বহু সামাজিক সমস্যার অনুদাতাও। তাই দারিদ্রা বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক অভিশাপ।

 

BangladeshGurukul.com Logo 252x68 px Dark Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

 

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ:

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ব্যাপকতার জন্য কোনো একক কারণ দায়ী নয় বরং বহুবিধ কারণেই এ দেশে দারিদ্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিস্তারের প্রধান কারণগুলো হলো দীর্ঘ সময় ধরে সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা শোষিত হওয়া, অনুন্নত কৃষিব্যবস্থা, অনগ্রসর শিল্পব্যবস্থা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, কুসংস্কার ও ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপকতা, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পদের অসম বণ্টন, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা, ভয়াবহ বেকারত্ব, ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার, বাস্তবমুখী নীতি ও পরিকল্পনার অভাব, মহিলাদের কর্মসংস্থানের অভাব, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ব্যাপক আকারে দুর্নীতি ইত্যাদি ।

দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি:

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর যাতে দারিদ্র্য লাঘব এবং টেকসই উন্নয়ন হয়, সেজন্য তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে মাথাপিছু আয় এবং সঞ্চয় বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার। পল্লী অঞ্চলে বিভিন্ন অকৃষি খাতসহ শহর অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রয়োজন

বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি এবং তাদের উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি (এনজিও) পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি রয়েছে। এ সকল কর্মসূচি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উৎপাদন স্বত্ব (Entitlement) বৃদ্ধির সাথে তাদের ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যথা— কৃষি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা ইত্যাদির দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি রয়েছে।

এছাড়া সরকারের গৃহীত কাজের বিনিময়ে খাদ্য, ভিজিডি কর্মসূচি গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ/রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কর্মসূচি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে শিক্ষা সম্প্রসারণ কর্মসূচি যথা-শিক্ষার জন্য খাদ্য, বিশেষ বৃত্তি ও আর্থিক সাহায্য, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা সরাসরি শিক্ষার ব্যয়ভার লাঘব করছে। সমাজকল্যাণ, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমানে সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নত জীবনযাপনে উৎসাহিত করছে।

 

Gurukul Online Learning Network Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN
Gurukul Online Learning Network Logo

 

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি কর্মসূচি:

বাংলাদেশ সরকার দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

 

১. দারিদ্র্য বিমোচনে নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি

চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সরবরাহ এবং তাদের আয় বর্ষনকারী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব বাজেট থেকে সম্পদের সংস্থান করছে।

 

২. দারিদ্র্য বিমোচনে আবাসন প্রকল্প

গ্রামাঞ্চলের ভূমিহীন, গৃহহীন, দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার ৪৪৭.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

 

৩. দারিদ্র্য বিমোচন ও ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প

ছাগল পালনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দারিদ্র্য বিমোচন ও ছাগল উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ছাগল পালনের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হবে। ২১৭.৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

 

৪. বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি

দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে দশজন সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ ও দরিদ্র ব্যক্তিকে মাসিক একশত টাকা হারে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এতে দেশের চার লক্ষাধিক দরিদ্র বয়স্ক ব্যক্তি উপকৃত হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর সার্বিকভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে।

 

৫. গৃহায়ন তহবিল

দারিদ্র্য বিমোচনে নির্দিষ্ট কর্মসূচি হিসেবে গৃহহীন, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর গৃহায়নের জন্য গৃহায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে ।

 

৬. কর্মসংস্থান ব্যাংক

দেশের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন লাভজনক ও উৎপাদনমুখী খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাংকের কার্যক্রমের ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে তাঁত, হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

 

৭. দুস্থ মহিলা ভাতা কর্মসূচি

অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলাদের জন্য ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু আছে। এই প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে ২ লক্ষাধিক দরিদ্র, দুস্থ, অসহায়, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

 

৮ দরিদ্র ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য গৃহায়ন কর্মসূচি

এ কর্মসূচির আওতায় ৬টি বিভাগীয় শহরে ৬টি শান্তি নিবাস স্থাপন করা হচ্ছে, যার প্রতিটিতে ১০০ জন অসহায় ষাটোর্ধ্ব বয়সের মানুষ বসবাস করবে। তারা সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য, কাপড় চিকিৎসা ও বিনোদন সুবিধাসহ সুস্থ থাকার প্রশিক্ষণ পাবেন।

 

৯. আশ্রায়ন প্রকল্প

দেশের ছিন্নমূল তথা গৃহহীন জনগোষ্ঠীর জন্য আত্মকর্মসংস্থান ও গৃহায়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আশ্রায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওতায় ৫০,০০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়দানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উন্নয়ন বাজেটের আওতায় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি:

সরকারি উদ্যোগে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ওপরের কর্মসূচিসমূহ ছাড়াও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরাসরি দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখার লক্ষ্যে আদর্শ গ্রাম, সমন্বিত মৎস্য কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, পশুসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমে আত্মকর্মসংস্থান, গ্রামীণ মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি বহুমুখীকরণ ও নিবিড়করণ, তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকরণ, সামাজিক ক্ষমতায়ন, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, পল্লী বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ স্যানিটেশন প্রকল্প, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, মসজিদভিত্তিক দারিদ্র্য বিমোচন, পল্লী মাতৃকেন্দ্রের মাধ্যমে জনসংখ্যা কার্যক্রম জোরদারকরণ, সম্প্রসারিত পল্লী সমাজকর্ম, দরিদ্র মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

অন্যান্য সংস্থার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি:

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

 

দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওসমূহের কর্মসূচি:

বাংলাদেশে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, কারিতাস, স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রভৃতি এনজিওর কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব এনজিওর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো ঋণ প্রদান, শিশু ও বয়স্কদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মহিলাদের অধিকার সম্বন্ধীয় আইনগত পরামর্শ প্রদান, মৎস্য ও পশুসম্পদ উন্নয়ন, রেশম সম্পদ উন্নয়ন, সেচ কর্মসূচি, নলকূপ স্থাপন ও বিতরণ, পরিবেশসম্মত কৃষি, সামাজিক বনায়ন ও গৃহায়ন কর্মসূচি ইত্যাদি ।

 

দারিদ্র্য বিমোচনের আশাব্যঞ্জক দিকসমূহ:

একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো দুর্ভিক্ষ আর দুর্যোগের দেশ। বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল দুঃশাসনের দেশ। পৃথিবীর দরিদ্রতম তিনটি দেশের একটি ছিল বাংলাদেশ। আশার কথা এই যে, বর্তমানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে হলেও পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসার পর বিগত দশক ধরে দারিদ্র্য বিমোচনের সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় বেশ কিছু সাফল্য এসেছে যা ইউএনডিপি কর্তৃক প্রকাশিত ‘Fighting Human Poverty Bangladesh Human Development Report 2000’ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—

* প্রাথমিক শিক্ষা ও নারীশিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে গমন ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি

* সার্বিক সাক্ষরতার হার (বয়স্ক ও গণশিক্ষা) বৃদ্ধি

* মহিলাপ্রতি উর্বরতার হার হ্রাস

* শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস

* গড় আয়ু বৃদ্ধি

* শিশু অপুষ্টি হ্রাস

* নারীর ক্ষমতায়নের পরিবেশ উন্নয়ন

* দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি

* সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও শক্তি বৃদ্ধি

* সামাজিক পুঁজির উল্লেখ মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি জনসংগঠনের বিকাশ

* গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অভ্যুদয় ইত্যাদি সাফল্য ও অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।

 

দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতার জন্য করণীয়:

দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি ও সফলতা অর্জিত হলেও বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রভাব ও বিস্তার এখনো অত্যন্ত ভয়াবহ ও ব্যাপক।

দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ সংগঠিত, পরিকল্পিত, পর্যাপ্ত এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পক্ষতা নির্ভর না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সফলতা অর্জিত হচ্ছে না। নিচে বাংলাদেশে দারিদ্র্যে বিমোচনে সফলতা লাভের জন্য কয়েকটি উপায়ের কথা উল্লেখ করা হলো

  • ধনী-গরিবের মাঝে বিদ্যমান ব্যাপক বৈষম্য দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
  • শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় আয় বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যে কোনো মূল্যে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচনের বাস্তবমুখী নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে তা স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
  • কৃষি, শিল্প প্রভৃতি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
  • যে কোনো মূল্যে দেশের সকল খাতে বিদ্যমান দুর্নীতি বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রতিরোধ, প্রতিকার, উন্নয়ন ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • কর্মমুখী ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  • রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
  • মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে।
  • আইনের শাসন, সুবিচার, সুশাসন ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।
  • প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের পর্যাপ্ততা ও সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • হরতাল, ধর্মঘট, সন্ত্রাস, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি বন্ধ করে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের জনগণকে দারিদ্র্যের চরম অভিশাপ
থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।

 

উপসংহার

দারিদ্র্য বাংলাদেশের একটি জটিল ও মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। দারিদ্র্যই বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির পথে প্রধান প্রতিবন্ধক এবং দেশের হাজারো সমস্যার জন্মদাতা। তাই যে কোনো মূল্যে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ও জটিল বিষয়। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন। বাংলাদেশে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দেশের সরকার ও সর্বস্তরের জনগণকে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment