Site icon Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

শিশুশ্রম ও বাংলাদেশের শিশুশ্রমিক | ভাষা ও সাহিত্য | বাংলা রচনা সম্ভার

শিশুশ্রম ও বাংলাদেশের শিশুশ্রমিক

শিশুশ্রম ও বাংলাদেশের শিশুশ্রমিক : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম একটি গুরুতর ও জটিল সামাজিক সমস্যারূপে বিরাজ করছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় সমাজে শিশুশ্রমের আধিক্য রাজনীতিবিদ, সমাজচিন্তাবিদ, আইনবিদ ও নীতি- নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে।

 

 

Table of Contents

শিশুশ্রম ও বাংলাদেশের শিশুশ্রমিক

 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) কর্তৃক প্রকাশিত ১৯৯৯ সালের এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে ১৫ কোটি ৩০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে, যাদের মধ্যে শতকরা ৪৬ ভাগ মেয়ে। সারা বিশ্বে কর্মরত প্রতি ৫ জন শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৩ জন শিশুই এশিয়ার । অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুশ্রম একটি জটিল ও ব্যাপকতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী দেশের মোট শ্রমিকের শতকরা ১২ ভাগ শিশু শ্রমিক। শিশুর জীবন, তার পরিবার, সমাজ, দেশ এমনকি মানবজাতির জন্য শিশুশ্রমের প্রভাব শুভ ও কল্যাণকর নয় । তাই এ সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এখনই সচেষ্ট হতে হবে। অন্যথায় বিপর্যন্ত মানবতার মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের সমাজজীবন নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর হয়ে উঠবে।

শিশু ও শিশুশ্রমের ধারণা

শিশুশ্রম ধারণাটির ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপট হিসেবে শিশু কাকে বলা হবে, তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ শিশু সনদে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সকলেই শিশু। এ সংজ্ঞানুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশুর দলে রয়েছে। এই হিসেবে শিশু সম্পর্কিত সকল আইন ও নীতি ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবার মতো শিশুর একক কোনো সংজ্ঞা নেই। জাতীয় শিশুনীতিতে শুধু ১৪ বছরের কম বয়সীদের শিশু ধরা হয়েছে। সংবিধিবদ্ধ আইনসমূহের ধারা অনুযায়ী ১৭ বছরের চেয়ে অনেক কম বয়সীদের শিশু হিসেবে ধরা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ বছর পর্যন্ত। পেনাল কোডের ধারা অনুযায়ী ১৬ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার বাংলাদেশের কয়েকটি আইনে সাধারণভাবে ১৫ বছরের কম বয়স্কদের শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।

 

 

শিশুশ্রম

বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তালাভের অধিকার এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অধিকার থেকে বঞ্চিত যে কোনো শিশুই শিশুশ্রমিক। আয় করার জন্য কাজ করতে গিয়ে শিশুরা তাদের বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী বিপদ, ঝুঁকি, শোষণ, বঞ্চনা ও আইনের জটিলতার সম্মুখীন হলে সেই কাজকে শিশুশ্রম বলা হয়। শিশুশ্রমের কতিপয় বৈশিষ্ট্য থেকে এর সংজ্ঞা নিরূপণ করা যেতে পারে।

Social Work Dictionary (1995-NASW)-র সংজ্ঞানুযায়ী, ‘Child labour is paid or forced employment of children who are younger than a legally defined age.

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে শিশু শ্রমের ব্যাখ্যা দেয়। হয়েছে। উক্ত ব্যাখ্যানুযায়ী, ‘যখন কোনো শ্রম বা কর্মপরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্য বা দৈহিক, মানসিক আধ্যাত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায় তখন জ শিশুশ্রম হিসেবে বিবেচিত হবে।

উপরোক্ত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শিশুশ্রম হলো শিশুদের এমন লাভজনক কাজে নিয়োগ করা যা তাদের স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশের জন্য বিপজ্জনক।

বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুশ্রম বলতে শুধু শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত শিশু শ্রমিকদের বোঝায় না, বরং শিল্প-কারখানার বাইরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যা শিশুদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে, শিশুস্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্য ক্ষতিকর, যে পরিবেশে কাজ করলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, সেসব কাজে নিয়োজিতদের শিশুশ্রম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

এরূপ বিপজ্জনক বা শোষণমূলক কাজে নিযুক্ত শিশুরা প্রায় আবশ্যম্ভাবীরূপে শিক্ষা, বিশ্রাম ও অবকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ধরন

১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং ইউনিসেক (UNICEF) পরিচালিত এক জরিপ (র‍্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব চাইল্ড লেবার সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ) অনুযায়ী বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০১ ধরনের অর্থনৈতিক কাজে শিশুরা শ্রম দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কুলি, হকার, রিকশাশ্রমিক, পতিতা, সমকামিতায় বাধ্য হওয়া, ফুল বিক্রেতা, আবর্জনা সংগ্রাহক, ইট-পাথর ভাঙ্গা, হোটেল শ্রমিক, বুননকর্মী, মাদক বাহক, বিড়িশ্রমিক, কালাই কারখানার শ্রমিক, বেডিং স্টোরের শ্রমিক ইত্যাদি।

এই সমীক্ষায় শিশুশ্রমের ধরন পুরাতন জেলা শহরে ২০১, নতুন জেলা শহরে ১৮৭, থানা সদরে ১৩৩, পার্বত্য এলাকায় ২৩ এবং পল্লী এলাকায় ৯৫ ধরনের। ‘ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম’ শীর্ষক আরেক সমীক্ষায় দেখ যায়, কিছু বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা নিয়োজিত রয়েছে। এ সকল কাজের মধ্যে রয়েছে শিশুবর্তী, ইলেকট্রিশিয়ান, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের কারখানায় কাজ এবং মাদকদ্রব্য বিক্রি ও বহন ইত্যাদি।

বাংলাদেশে শিশুশ্রম পরিস্থিতি

শিল্প বিপ্লবের সামাজিক অভিশাপ হলো শিশুশ্রম। শিল্পবিপ্লবের ফে গৃহকেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে সুসংগঠিত শ্রমিক দল নিয়ে গড়ে ওঠে বৃহৎ কারখানা। ইংল্যান্ডের শিল্পপতিরা তখন দরিদ্র দেশগুলো থেকে পেশাদার দালালের মাধ্যমে শিশুশ্রমিক সংগ্রহ করত। তখ নামমাত্র মূল্যে বিদেশ থেকে শিশুশ্রমিক নিয়ে আসা হতো। শিশুরা নামমাত্র শিক্ষানবিশ বা অ্যাপ্রেনটিস হিসেবে পরিচিত ছিল। বাস্তবে তারা ছিল ক্রীতদাসের মতো। ১৭৯৫ সালে মানবতাবাদী ড. অ্যাইকেন লিখেছেন, ‘যন্ত্রের আবিষ্কার শ্রম বাঁচিয়েছে ঠিকই কিন্তু কেড়ে নিয়েছে পরিবার থেকে শিশুকে

বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ এবং বস্তিবাসী শহুরে শিশুদের মধ্যে আর্থ- সামাজিক অবস্থানগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সকলেই কঠোর শ্রমের শিকার। এ দেশের দরিদ্র পরিবারের এক বৃহত্তর অংশের অর্থনীতি শিশুশ্রমের ওপর টিকে আছে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহ্যগতভাবেই শিশুরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়ে আসছে। গ্রামবাংলার শিশুরা কৃষিকাজে পিতামাতাকে সাহায্য করছে এটি একটি সাধারণ চিত্র। শহরের শিশুরা তাদের এম মেধা মনন ঢেলে দেয় বিভিন্ন কলকারখানায়, গার্মেন্টস শিল্পে, বিড়ি কারখানায়, ওয়ার্কশপে। তারা এ কাজ করে বন্দরে, গঞ্জে, হাটবাজারে, পথেঘাটে।

বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী দেশের মোট শ্রমিকের শতকরা ১২ ভাগ শিশু শ্রমিক । নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশুদের ধরে এ হিসাব দেয়া হয়েছে। অসংগঠিত খাতে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকদের ধরা হলে এ সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। শহরাঞ্চলে চরম দারিদ্র্য ও বঞ্চনার মাঝে ১৫ বছরের কম বয়সী ১৯৯০ সালে প্রায় ২৯ লাখ শিশু শ্রমিক ছিল।

১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে শিশু শ্রমিক ছিল ২.৫ মিলিয়ন এবং ১৯৮১ সালের আদমশুমারিতেও অনুরূপ সংখ্যক ছিল। ১৯৯৫-৯৬ এবং ১৯৯৯- ২০০০ সালের শিশু শ্রমিক জরিপের প্রধান তথ্যাদি থেকে বাংলাদেশে শিশুশ্রমের বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রধান প্রধান তথ্যাবলি নিচে উল্লেখ করা হলো।

 

 

শিশু শ্রমিক বৃদ্ধির প্রবণতা (১৯৯০-২০০০)

শিশু শ্রমিকের (৫-১৪ বছর) মোট সংখ্যা ১৯৯০-৯১ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী ছিল ৫.৮ মিলিয়ন। ১৯৯৯-২০০০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৯ মিলিয়নে উপনীত হয়েছে। এ সময় শিশুশ্রমের হার মোট শ্রমশক্তির শতকরা ১১.৩ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২.৯ ভাগে পৌঁছে।

শিশু শ্রমিকদের জীবনমান

বাংলাদেশের শহুরে শিশু শ্রমিকদের জীবনমান পরিমাপক এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৫৬ ভাগ শিশু শ্রমিক ভাসমান, ৫৩ ভাগ দিনে দুবেলা আহার পায়, ৪৭ ভাগ তিনবেলা খেতে পায়, ৫৬ ভাগ ভাত, ৪৪ ভাগ রুটি বা অন্যান্য খাবার, ৬১ ভাগ ভগ্ন বা রশ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী, ৩৯ ভাগ মাঝারি স্বাস্থ্যের অধিকারী, ৬২ ভাগ শিশু শ্রমিকের দিনে আয় ২০ টাকা, ২১ ভাগের আয় দিনের ২০-৩০ টাকা এবং ১৩ ভাগের আয় দিনে ৩০ টাকার ওপরে।

শিশুশ্রমের প্রভাব

শিশুশ্রম শিশুর জীবনে এক অমানবিক অধ্যায়। শিশুরা কর্মে নিয়োজিত হওয়ার পরিণাম হয়তো তাৎক্ষণিক লাভ, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। কেননা শিশুশ্রম শিশুর শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগগত, সামাজিক ও নৈতিক জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। শিশুশ্রমের একটি ইতিবাচক দিক হলো পারিবারিক আয়বৃদ্ধি। কিন্তু গভীরতর ব্যাখ্যায় এরূপ ইতিবাচক আয় বৃদ্ধির চেয়ে সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ক্ষতির দিকটিই বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাবে ব্যাপকতর হতে দেখা যায়। যেসব ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় সেগুলো নিচে আলোচিত হলো

১. শিশুস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

শিশুশ্রম শিশুর সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও শারীরিক বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করে। শিশুশ্রম শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এতে তাদের স্বাস্থ্যহানি, অপুষ্টি, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার শিশু শ্রমিকের কর্ম পরিবেশ তার দৈহিক ও মানসিক বিকাশের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

২. দুর্ঘটনাজনিত ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক কর্মপরিবেশে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকেরা কেমন প্রতিকূল কর্মপরিবেশে কাজ করে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা হতে পারে নিম্নরূপ

ক. দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাজ করা।
খ.মজুরিবিহীন বা ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম মজুরিতে নিয়োগ
গ. সাপ্তাহিক বন্ধ বা বাৎসরিক ছুটির অনুপস্থিতি।
ঘ. কর্মের স্থানে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস, পানি,বিশ্রাম কক্ষ, মলমূত্র ত্যাগের সুব্যবস্থার অনুপস্থিতি।
ঙ. চিকিৎসার সুবিধার অভাব।
চ করে মাঝে বিরতির অভাব।
ছ. পেশাগত গতিশীলতার সুযোগের অনুপস্থিতি। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার নিকট থেকে শিশু শ্রমিকের পিতামাতা ঋণ বা অগ্রিম পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকে। এরূপ পরিস্থিতিতে কাজের চাপ বা কর্মপরিবেশ অসহনীয় হলেও শিশু তা থেকে মুক্তি পেতে পারে না।
জ. পেশাগত নিরাপত্তার অনুপস্থিতি।

শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে শিশুরা বিভিন্ন বিপজ্জনক ও অরক্ষিত কাজ এবং যন্ত্রপাতি রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে এসে থাকে। ফলে শিল্প দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে অনেক শিশুই ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তায় পতিত হয়। ১৯৯৬ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, কাজ করার সময় আগুনে পোড়া, চোখে আঘাত লাগা ও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় ৪৫ শতাংশ শিশু হাতে এবং ২৭ শতাংশ শিশু পায়ে আঘাত পাচ্ছে। শিশুকালে এসব আঘাত ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা হ্রাস করে কর্মলাভে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।

৩. মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়

শিশু শ্রমিকেরা পরিবার এবং স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশ থেকে কর্ম সময়ে বিচ্ছিন্ন থাকে। এতে তাদের সামাজিকীকরণ ত্রুটিপূর্ণ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ সমস্যাগ্রস্ত হয়। এরূপ অবস্থায় তাদের ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিচ্যুত আচরণ, অপরাধপ্রবণতা ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি বাড়ে।

৪. অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিতে জীবন গঠন

শিশু শ্রমিকেরা প্রধানত দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। এরা শ্রমদান কাজে নিয়োজিত হতে গিয়ে শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তাদের অনেক চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায় এবং ভবিষ্যতেও ত্রুটিপূর্ণ শ্রমশক্তি হিসেবে তারা গঠিত। হয় । আর এটি হলো অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিতে জীবন গঠন যা ভবিষ্যতে বিকশিত ও সম্ভাবনাময় জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে অন্যতম অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এর ফলে তাদের দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপনের সম্ভাবনা বাড়ে।

৫. নিরক্ষরতা অজ্ঞতা ও অশিক্ষা সমস্যার উদ্ভব ও বিস্তার :

শিশুশ্রম বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির হার কমিয়ে দেয়। এতে নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার হার বাড়ে। আর নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার মধ্যে অশিক্ষাও বাড়ে। ১৯৯১ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ঢাকা শহরের ৭০ শতাংশ শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়ে যায় না এবং ৫০ শতাংশ কখনো যায়নি। যে ৫০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে গমন করেছিল তারা আবার বড়জোর তিন বছর পড়াশোনা করে বিদ্যালয় ত্যাগ করে। শহর এলাকায় ৮০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও এতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। সুতরাং শিশুশ্রমের সাথে শিশুশিক্ষার একটা বিপরীত সম্পর্ক তৈরি হয়।

৬. জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

শিশুশ্রম জাতীয় অর্থনীতি নানাভাবে সংকটাপন্ন করে। এতে বেকারত্ব সৃষ্টি হয় এবং অসম কটন ব্যবস্থার প্রসার হয়। স্বল্প মজুরিতে শিশুশ্রমের সহজপ্রাপ্যতা প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে। অন্যদিকে মজুরির হার কমে যায় বলে দরিদ্র শ্রেণী তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে আয়ের অসম বণ্টন বেড়ে যায়।

 

 

৭. জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়

নিম্ন আয়ভুক্ত বা দরিদ্র পরিবারে শিশু শ্রমিকদের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাবা-মা অধিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত হয়। পরিণামে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে এরূপ অবস্থা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক। ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ব্যাহত হয়।

৮. অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি

শিশুশ্রম শুধু শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক নয়, বরং সমাজে এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলো শিশুশ্রমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সৃষ্টি হয়। যেমন কিশোর অপরাধ প্রবণতার অন্যতম কারণ হলো শিশুশ্রম। বিশেষ করে যেসব শিশু রাস্তায় কুলি ও দিনমজুরের কাজ করে এবং কাজে নিয়োজিত, তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, গৃহের শিশু শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের চুরির কাজে নিয়োজিত থাকে। শিশু নির্যাতনের শিকার শিশু শ্রমিকরা সমাজের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে।

সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, সমাজজীবন ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের
অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের কারণ

শিশুশ্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দারিদ্র্যের ফসল আবার একই সাথে তা দারিদ্র্যের কারণও বটে। তবে অনেক সময় প্রথাগত কারণও এর পশ্চাতে ক্রিয়াশীল। বস্তুত পরিবারের আর্থিক সংকটই শিশুদের শিশু শ্রমিক হিসেবে উপার্জনে নিয়োজিত হতে বাধ্য করে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের এক তথ্যে দেখা যায়, ৪৩ শতাংশ শ্রমজীবী শিশু পারিবারিক চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে শহরে স্থানান্তরিত হয়ে শিশু শ্রমিক হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশে শিশু শ্রমবৃদ্ধি পাওয়ার মুখ্য কারণ।

ইউনিসেফের ‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ১৯৯৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, The vast majority are pushed into work that is often damaging to their development by three key factors the exploitation of poverty: the absence of education; and the restriction of tradition. যদিও দারিদ্র্য, শিক্ষা-সুযোগের অভাব এবং প্রচলিত প্রথাকে শিশুশ্রমের অন্যতম প্রধান কারণরূপে চিহ্নিত করা যায়, তথাপি বাংলাদেশের মতো একটি বহুমুখী সমস্যাক্লিষ্ট দেশে শিশুশ্রম বৃদ্ধির জন্য আরো বহুবিধ কারণকে বিবেচনায় আনা যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রমের সুনির্দিষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারের শিশুরাই নিজের এবং পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে কর্মে নিযুক্ত

২. চরম দারিদ্র্যের ছোবলে অভিভাবকরা শিশুদের স্কুলের পরিবর্তে কর্মক্ষেত্রে পাঠাতে বাধ্য হয়:

৩. শিক্ষার জন্য প্রাসঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করার অক্ষমতা;

৪. শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা;

৫. শিশুশ্রমের ক্ষতিকর পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতা;

৬. যেখানে শিশুর জন্য শিক্ষার উদ্যোগ ব্যর্থ হয় সেখানে বিকল্প উদ্যোগের অভাব;

৭. শিশুর অধিকার সংরক্ষণে আইনগত পদক্ষেপের দুর্বলতা;

৮. প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সহায়-সম্বলহীন হওয়া;

৯. বালিকা শিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ;

১০. অতিরিক্ত জনসংখ্যা;

১১. ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি;

১২. কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ;

১৩. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরমুখী প্রবণতা এবং বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে শিল্প-কারখানা কেন্দ্রীভূত হওয়া;

১৪, বয়স্ক শ্রমিকদের বেকারত্ব বৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,

১৫. গৃহহীন ও ভাসমান জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি ইত্যাদি।

 

 

শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রম

শিশুশ্রম প্রতিরোধ এবং শিশু অধিকার বাংলাে সংবিধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আইএলওর সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। একই সাথে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ১৯৯০-এর অনুসমর্থনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শিশ্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পরি বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনসমূহ হলো শিশু শ্রমিক (শ্রমের অঙ্গীকার) ১৯৩৩ শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন ১৯৩৮; কারখানা আইন ১৯৩৪, সড়ক পরিবহন শ্রমিক আইন ১৯৬১ কারখানা ১৯৬৫ ইত্যাদি।

এসব আইনে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র ও কাজের ধরন অনুসারে বয়স নির্ধারণ করে 1 শিশুশ্রম নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুনীতিতে ঝুঁকিপূর্ণ। দৈহিক শ্রম, শোষণ, দূষিত পরিবেশ ও শ্রমের অপব্যবহার বন্ধ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আবার ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক পর্যায়ে শিশু সম্পর্কিত তৃতীয় সার্ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের প্রস্তরে ২০০০ সালের মধ্যে বিপজ্জনক বৃত্তিতে শিশুশ্রম (মুচলেকাবদ্ধ শিশুশ্রমসহ) এবং ২০১০ সালের মধে পুরোপুরি শিশুশ্রম নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়।

কিন্তু বাস্তবে এসব আইন ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নানারকম সামর্থ্যগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কথা সে দিলেও আইনসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের জনবল স্বল্পতা, আইন প্রয়োগে কঠোরতা প্রয়োগে অপারগতা এবং নিজস্ব কার্য কর্মকৌশল উদ্ভাবন-অনুসরণে অদক্ষতা ইত্যাদি সমস্যার কারণে এসব উদ্যোগ সফলতা পায়নি।

অপরদিকে জনসমর্থনের অভাব ও শ্রম আইন প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। এর কারণ শিশুশ্রম আইনের যৌক্তিকতা এবং শিশুশ্রমের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জনগণের কম উপলব্ধি। এ ব্যাপারে কার্যকা পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তৎপর হতে হবে।

বাংলাদেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধের উপায়

শিশুদের শ্রমে নিয়োগ ও উপার্জনে বাধ্য করা অমানবিক নয়, অবিচারও বটে। তারপরও শিশুশ্রম বেড়েই চলেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশুশ্রম ক্রমবৃদ্ধির গতি লক্ষণীয়। তাছাড়া উন্নত বিশ্বেও শিশুশ্রম রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও জাতিসংঘ শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সনদ প্রণয়ন করেছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থাসমূহ শিশুশ্রম প্রতিরোধে যতই সোচ্চার হচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও যেন ততো বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশে শিশুশ্রম সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ প্রতিকারমুখী পন্থায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। তাই শিশুশ্রম প্রতিরোধে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার

১. শিশুকল্যাণমূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ;

২. আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ;

৩. শ্রম ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন

৪. পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং

৫ শিশু অধিকার সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন।

উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের জন্য নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা যেতে পারে

১ ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি ও উদবুদ্ধুকরন কর্মসূচি গ্রহণ,

২. সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ;

৩. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় শিশু-কিশোরদের অন্তর্ভুক্তকরণ;

8. দারিদ্র্য দূরীকরণে শিশু অভিভাবকদের জন্য আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প গ্রহণ;

৫ নিয়োগকর্তাদের শিশু আইন বিষয়ক জ্ঞানে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ;

৬. প্রচলিত আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও আইনের কার্যকর প্রয়োগ;

৭. সকল শিশুর জন্য নিবন্ধীকরণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ।

 

 

বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকদের সমস্যাসমূহ

বাংলাদেশে শ্রমজীবী শিশুরা বিভিন্ন ক্ষতিকর কাজের সাথে জড়িত এবং মনিবপক্ষ কর্তৃক অর্থনৈতিক শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত। এই সকল শিশুদের প্রতি তারা নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অসম্মানজনক আচরণ করে। আবার কখনো কখনো এসব শিশুদের যৌন শোষণ, নির্যাতন করতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। এদেশে এই চিত্র শুধু শহুরে পরিবেশেই নয়, গ্রামীণ পরিবেশেও দেখা যায় । নিচে বাংলাদেশের শিশুশ্রমিকদের সমস্যাসমূহ আলোকপাত করা হলো

১. বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে যে, ১৪ বছর বয়সে, এমনকি তারও আগেই ছেলেমেয়েরা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং কাজ করার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায় ।

২. শিশু শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ গৃহকর্মে নিয়োজিত। এদের অধিকাংশই মেয়ে। মেয়েশিশুদের
অনেকেই শারীরিক নির্যাতন এবং সেই সঙ্গে মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অন্য শিরো
যে অধিকারগুলো ভোগ করে, তারা সে অধিকার ভোগ করতে পারে না।

৩. অনেক শিশুই বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত। যেমন তাদের বিপজ্জনক উপকরণ নিয়ে কাজ করতে হয়, কাঁচশিল্পে আগুনের সংস্পর্শে কাজ করতে হয় অথবা যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই সেখানেও কাজ করতে হয়

৪. শোষণমূলক যেসব অবস্থায় শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে হয়, তার মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে অতি
দীর্ঘ সময় থাকা, নিম্ন মজুরি এবং দৈহিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি ।

৫. যেহেতু দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয় তাই কর্মজীবী শিশুরা বেশ কিছু মৌলিক অধিকার যেমন— শিক্ষা, বিশ্রাম এবং খেলাধুলার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

৬. শ্রমজীবী শিশুদের অধিকার রক্ষায় প্রচলিত আইনসমূহের দুর্বল প্রয়োগ এবং আইন প্রয়োগকারীমসংস্থার উদাসীনতা।

শিশু শ্রমিকদের সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান

১. প্রতিটি জেলার ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুরা যত ধরনের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে।

২. শ্রমজীবী প্রতিটি শিশুর পড়াশোনার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আনুষ্ঠানিক এবং উপানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের শিক্ষার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

৩. যেসব পরিবার শিশুদেরকে গৃহকর্মে নিয়োজিত করে সেসব পরিবারের সদস্যদের উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা কাজে নিয়োজিত শিশুদেরকে কিছু কিছু সুযোগ দেয়। যেমন —

শিশুদের কাজের পরিমিত সময় নির্ধারণ করা এবং দিনে তাদের কয়েকবার কাজ থেকে অবসর দেয়া। নিজ নিজ পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে শিশু শ্রমিকদের দেখা-সাক্ষাৎ এবং ছুটির দিনগুলোতে নিয়মিতভাবে পরিবারের সঙ্গে তাদের সময় কাটানোর সুযোগ দেয়া। প্রতি নির্দিষ্ট হারে যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক দেয়া নিশ্চিত করা। শ্রমজীবী শিশুদের প্রতি সশ্রদ্ধ, সদয় এবং সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের জন্য নিয়োগদাতা পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রাণিত করা। যেসব কাজ শিশুদের বয়স এবং বিকাশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় তাদের দিয়ে সেসব কাজ না করানো।

৪. বিশেষ কোনো কর্মক্ষেত্রে কর্মরত শিশুরা শোষিত বা নির্যাতিত হলে সে ক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মাধ্যমে নিয়োগকর্তাদের সচেতন করে তোলা।

৫. শিশু নির্যাতনের যে কোনো ঘটনাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করা ।

৬. শ্রমজীবী শিশুর প্রকৃত সংস্থা নির্ধারণে এবং শ্রমজীবী শিশুর আর্থ-সামাজিক অবস্থা অনুধ্যানে (Study) গভীর অনুসন্ধান পরিচালনা করা।

৭. শিশুশ্রম ও শিশু অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার

শিশুশ্রম একটি অপ্রিয় বাস্তবতা। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য পরিবেশগত অবনতি এবং অন্যদের দায়িত্বহীনতা থেকেই শিশুশ্রমের পরিমাণ বাড়ছে। শিশুশ্রম শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে অবশ্যই বর্জনীয়। শিশুশ্রমের ফলে শিশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে, শিক্ষাবিস্তারে প্রতিবন্ধকতার শী হয়, উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, সামাজিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষিলতা আসে, শিশুর ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা  লোপ পায়। অথচ শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ।

তাই দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সকল শিশুকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য যে কোনো মূল্যে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে এবং শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে ।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version