বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ রচনা

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করা নিরুৎসাহ দেই। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

Table of Contents

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বর্তমানে এক বহুল আলোচিত বিষয় ‘বিশ্বায়ন’ ধারণাগত অর্থে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় “বিশ্বের আন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ।

উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবের ফলে বিশ্বের সম্পদ ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের দেশসমূহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গঠনের মধ্য দিয়ে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্বিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহ। এ দেশগুলো তাদের অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে বিশ্বায়নের সঠিক পথে এগোতে পারছে না।

তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়নের প্রভাব সম্পর্কে পর্যালোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি বিষয়।

 

বিশ্বায়নের অর্থ ও প্রকৃতি

গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন ধারণাটি এসেছে ইংরেজি গ্লোবাল থেকে, যার অর্থ বিশ্বব্যাপী। আর এই গ্লোবাল ধারণা থেকেই মূলত গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন ধারণার উদ্ভব। বিশ্বায়নের অর্থ বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রূপ। কারো কাছে বিশ্বায়ন কর্মপদ্ধতির এক নতুন দিগন্ত, কারো কাছে এক ধরনের নতুন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা, যাতে প্রাক্তন সব ধ্যান-ধারণা সেকেলে ও অচল বলে বিবেচিত।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়ন বলতে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে একাত্মতা বোঝায়। “উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়, প্রতিবন্ধকতা থাকবে না শুল্ক ও বাণিজ্যে, একমাত্র মুক্ত বাণিজ্যেই জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোত্তম পন্থা – এরূপ অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথ ধরেই জন্মলাভ করেছে মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা দানা বেঁধেছে বিশ্বায়ন।

খুব সাধারণভাবে বিশ্বায়ন হলো দ্রব্য উৎপাদন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির আন্তঃদেশীয় অবাধ প্রবাহ। এ সংজ্ঞায় বিশ্বায়নকে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক, তথাবিপ্লব যোগাযোগ, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্বকে প্রভাবিত করে। সাধারণ অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বায়ন হচ্ছে সমগ্র বিশ্বকে একটি মাত্র বিশাল বাজারে একত্রীকরণ। এ ধরনের একত্রীকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার সকল প্রকার বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা দুরীভূত হয়।

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় যে মূল বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলো হলো বাজার সম্পর্কীয় আইন সরকারি বায় হ্রাস, সরকারি নাম, বেসরকারিকরণ এবং সরকারি সম্পদ ধারণার বিলোপ সাধন। এখানে বিশ্বায়নকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান ধারায় বিশ্বায়ন হলো স্নায়ুযুদ্ধের অবসান এবং পূর্ব ইউরোপ ও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির ওপর উদার গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির আধিপত্য বিস্তারকারী বার্তাবাহক স্বরূপ।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

সম্প্রতি বিশ্বায়নকে দুটো ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রথমত, এটি আন্তঃআঞ্চলিক ও আন্তঃমহাদেশীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাকে একই সূত্রে মাণিত করেছে। এটি ি ভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন ও সম্পর্ক জোরদার করে। এখানে বিশ্বায়নকে বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক উন্নয়নের সেতুবন্ধন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মোট কথা, বিশ্বায়ন আজ একটি বহুমাত্রিক প্রত্যয়। আর বহুমাত্রিক প্রতায় হিসেবে বিশ্বায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন বিশ্বজুড়ে শক্তি ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার পটভূমি হলো লাগামহীন ‘বিশ্বায়ন’ যার অবধারিত পরিণতি হচ্ছে অর্থনৈতিক মাৎস্যন্যায়’।

মাৎস্যন্যায় শব্দের অর্থ হলো বড় মাছ কর্তৃক ছোট মাছকে খেয়ে ফেলা। আর এখানে বিশ্বায়নের মাধ্যমে তুলনামূলক বিচারে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতিকে গ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ধনী রাষ্ট্রগুলো আরো ধনী ও গরিব রাষ্ট্রগুলো আরো গরিব হবার এই প্রক্রিয়াকে বিশ্বায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সামগ্রিক বিশ্লেষণে আমরা বলতে পারি, বিশ্বায়ন এমন একটি ধারণা, যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু রকম প্রভাবই রয়েছে। এটি একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের দাবিদার, অন্যদিকে তেমনি উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ।

বিশ্বায়নের কারণ

বিশ্বায়নের কারণ বহুবিধ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মুনাফা অর্জন ও আর্থিক আধিপত্য বিস্তার। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গ্লোবাল কোম্পানিসমূহের সম্পদের এক বিশাল অংশই নিজ দেশের (Home country) বাইরে অবস্থিত এবং কোনো কোনো গ্লোবাল কোম্পানির বিক্রির সিংহভাগই অনুষ্ঠিত হয় বহির্বিশ্বে। বিশ্বায়নের অন্যান্য কারণসমূহ নিম্নরূপ:

 

১. ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী

গতিশীল যোগাযোগ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক সঞ্চালন এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে সময় ও দূরত্বের ব্যবধান এতই হ্রাস পেয়েছে যে, একটি বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিচরণ বর্তমানে কোনো কষ্টসাধ্য ব্যাপারই নয়।

 

২. দেশীয় বাজারের অপর্যাপ্ততা

বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কাছে নিজ দেশীয় বাজার ছোট ও অপর্যাপ্ত বলে প্রতীয়মান হতে পারে। যে সকল দেশের নিজস্ব বাজার খুবই ছোট সে সকল দেশে সৃষ্ট বৃহৎ কোম্পানি অচিরেই বহির্বিশ্বে বাণিজ্য প্রসার ঘটাতে বাধ্য হয়।

 

৩. আকর্ষণীয় পণ্যের বাজার বিস্তৃতি

যে কোনো আকর্ষণীয় পণ্যের বাজার সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিব্যাপ্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ কোকাকোলা বা টয়োটা গাড়ির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

 

৪ সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল ব্যবহার

উন্নত বিশ্বে শ্রম ও কাঁচামাল ব্যয়বহুল বিধায় অনেক বড় কোম্পানি গ্লোবাল কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণে আগ্রহী হয়।

 

৫. বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধি

অনেক ক্ষেত্রে হাইটেক শিল্প-কারখানা তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে এত অর্থ যায় করে যে, তাদের উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য নিজনা বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে দুনিয়াব্যাপী বাজার সম্প্রসারণে তৎপর হওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

৬. বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস

কোনো একক দেশে বিনিয়োগ অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হতে পারে। এরূপ ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সিদ্ধান্ত সুফল বয়ে আনতে পারে।

 

৭. পরিবহন ব্যয় হ্রাস

অনেক কোম্পানি পরিবহন ব্যয় হ্রাসকল্পে বহির্বিশ্বে উৎপাদন সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য পরিবহন নিঃসন্দেহে ব্যয়সাধ্য। সুতরাং পরিবহন বায় যাতে কোনো দেশে পণ্যের অযথা মূল্যবৃদ্ধির কারণ না ঘটায় সে লক্ষ্যে ঐ দেশেই বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ পণ্যের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে ।

 

৮. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্ভব

World Bank, WTO, IMF EEC, NAFTA, SAPTA, ASEAN ইত্যাদি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের মাধ্যমে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া যে বহু গুণে ত্বরান্বিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি

বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রার প্রায় সকল ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। বিশ্বায়নের বিস্তারকে নিম্নোক্তভাবে আলোচনা করা যেতে পারে:

 

১. প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন

শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই এই ধরনের বিশ্বায়ন শুরু হয়েছে। ঐ সময়ে যে সকল যুগান্তকারী যান্ত্রিক আবিষ্কার সাধিত হয় তার ফলে পৃথিবীর মানুষ পরস্পরের কাছাকাছি আসতে শুরু করে। যান্ত্রিক উৎপাদন থেকে যান্ত্রিক যাতায়াত ও যোগাযোগের সুফল ভোগ করতে মানুষ তৎপর হয়ে ওঠে। পৃথিবীর এক প্রান্তে তৈরি পণ্য অপর প্রান্তে সহজলভা হয়। আর এভাবেই ঘটে প্রযুক্তিগত বিশ্বায়নের বিস্তার।

 

২. তথ্যগত বিশ্বায়ন

এরূপ বিশ্বায়নের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। বিগত দুই দশকে এর অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। যদিও প্রযুক্তির সাথেই এর সম্পর্ক তবু যোগাযোগের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক উন্নয়নের ফলে বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্য আদান প্রদানে প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বায়নের গতিকে বহু গুণে ত্বরান্বিত করেছে। ঘরে বসেই মুহূর্তের মাঝে সারা বিশ্ব পরিক্রমণ এখন আর কোনো দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। ইন্টারনেট, ই-মেইল, ই-কমার্সের বদৌলতে এখন ঘরে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাচ্ছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া হয়েছে গতিময় ।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

৩. অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন

প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত বিশ্বায়নের ফলে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন আবির্ভূত হয়েছে মহীরুহ হয়ে। মূলধন লগ্নি, শ্রম নিয়োগ, উপকরণ স্থানান্তর, বাজার উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মকাও এখন আর দেশের গণ্ডি মেনে চলছে না। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে যেভাবে প্রভাবিত করছে তাতে কোনো একটি দেশের পক্ষে আর বিচ্ছিন্ন থাকা সম্ভব নয়।

বহুজাতিক কোম্পানির আবির্ভাব অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উপস্থাপন করেছে মানুষের কাছাকাছি। বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক হচ্ছে জোরনার অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, শুধু ইন্টারনেটের বদৌলতে জ্ঞানভিত্তিক যে অর্থনীতি তৈরি হয়েছে তাতে ২০০০ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই আয় হয়েছে ৮৩০ বিলিয়ন ডলার। ভারত ২০০৮ সাল নাগাদ শুধু সফটওয়্যার রপ্তানি করে বছরে আয় করবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

8. সামরিক বিশ্বায়ন

আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল সিস্টেমসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর যে কোনো দেশকে আগ্রাসনের শিকারে পরিণত করা বর্তমানে খুবই সহজ। তবে। এর ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব নিরাপত্তার নামে আমেরিকা-ব্রিটেন মহাশক্তি বর্তমানে যে কোনো সময় পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলে আগ্রাসন চালাতে সক্ষম।

 

৫. পরিবেশগত বিশ্বায়ন

মানুষের কর্মকাণ্ড, বিশেষত শিল্প ও সমরাস্ত্র সংক্রান্ত আচার-আচরণে পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ বিভিন্ন দূষণের কারণে গাছপালা, মাটি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক দেশের পরিবেশ দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ ।

 

৬. সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ অনেক ক্ষেত্রে অপসংস্কৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে। নিজেদের সামাজিক মূল্যবোধ অনেক ক্ষেত্রেই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বৃহৎ শক্তি যে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে তার ফলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে ।

 

বিশ্বায়নের প্রভাব

বিশ্বায়নের ধারণা ক্রমে পরিব্যাপ্তি লাভ করছে। বিশেষত অর্থনীতি ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এর প্রভাব ব্যাপকাকারে ছড়িয়ে পড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশমান ধারা বাজার ব্যবস্থাকে বিস্তৃত করছে। উৎপাদন ও বিপণনে রোবট, কম্পিউটার ও স্যাটেলাইটের ব্যবহার বিশ্বের উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নয়নের নবতর ধারা সূচিত করেছে। ফলে পণ্য ও সেবার উন্নত মান ও সহজলভ্যতা যেমন বেড়েছে, তেমনি হ্রাস পেয়েছে উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশসমূহ এক্ষেত্রে তীব্র ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বিশ্বায়নের প্রভাবকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এ দুভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।

 

ইতিবাচক প্রভাব

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে আজ পৃথিবী যে সত্যি সত্যিই ছোট হয়ে আসছে তার প্রমাণ পেতে বেশি দূর যেতে হয় না। ঘরে বসেই কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বদৌলতে সমগ্র পৃথিবীর খোঁজখবর পাওয়া যায়। আবার সকালের নাস্তা ঢাকার সেরে বিমানে চড়ে জেদ্দা পৌঁছে লাঞ্চ সেরে আবার রওয়ানা হয়ে লন্ডনে গিয়ে রাতের খাবার এবং পরের দিন সকালে নিউইয়র্কে নাস্তা করা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সবই বিশ্বায়নের ইঙ্গিত বহন করে। বিশ্বায়নকে তাই উপেক্ষা করা দুরূহ। বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ

১. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন

বিশ্বায়নের প্রভাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে । বিভিন্ন মাত্রাভেদে এ পারস্পরিক নির্ভরতাই বিশ্বায়নের পক্ষে একটি বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বায়নের ফলে ইউরোপের দেশসমূহ ইতিমধ্যে এক হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে পাসপোর্ট ও ভিসা ব্যবস্থা উঠে গেছে।

পাশাপাশি চালু হয়েছে একক মুদ্রা ইউরো। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা অবাধ বাণিজ্য ও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া জোরদার করে নীতি ও আইন প্রণয়ন করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোট গঠনের স্রোত বইছে। বিশ্বায়নের ইতিবাচক আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিল্পোন্নত ৮টি দেশ গঠন করেছে জি-৮। আবার তৃতীয় বিশ্বের ১৩৩টি দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছে ৭৭ জাতি গ্রুপ’।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১৮টি দেশ গঠন করেছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা এপেক। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য গঠিত হয়েছে ১০টি রাষ্ট্রের ইসলামী সম্মেলন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক জোট ইকো। বাংলাদেশও বিশ্বায়নের প্রতি সাড়া দিয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক জোট ও ব্যবস্থার সাথে একীভূত হচ্ছে। যেমন—সার্ক, সাফটা, বিসমটেকসহ বিভিন্ন গ্লোবাল ফ্রন্টের সক্রিয় সদস্য হচ্ছে বাংলাদেশ। এভাবেই বিশ্বায়নের প্রভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হচ্ছে ।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

২. বৃহদায়তন কর্মকাণ্ডের সুবিধা

বিশ্বায়নের ফলে যে বৃহৎ বাজার ব্যবস্থার ব্যাপ্তি হয়েছে, তাতে বৃহদায়তন উৎপাদন ও বিপণন সহজসাধ্য হয়েছে। এতে একদিকে হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদন ব্যয়, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুনাফার পরিমাণ ।

 

৩. ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ ও বিশেষায়ন

বিশ্বায়নের ফলে ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ ও বিশেষায়নের ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি দেশ তার আপেক্ষিক সুবিধা অনুযায়ী উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত থাকতে পারছে।

 

৪. গ্লোবাল ভাবমূর্তি উন্নয়ন

গ্লোবাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে সর্বত্র পণ্যের একই রূপ ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। এতে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে, কোকাকোলা বা পেপসির এ জাতীয় গ্লোবাল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যার ফলে বিশ্বব্যাপী এদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

 

৫ জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার স্থানান্তর

কথায় বলে, Think globally act locally অর্থাৎ “চিন্তা করুন বিশ্বব্যাপী, কাজ করুন কাছাকাছি। বর্তমান বিশ্বে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে যে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অন্যান্য দেশ সহজেই নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারছে। কারণ বিশ্বায়নের প্রভাবে বর্তমানে বিশ্ব জ্ঞানভাতার সকলের জন্যই উন্মুক্ত।

 

৬. অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি

বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য সহজসাধ্য হয়েছে। ই কমার্সের বদৌলতে আলাদা মাত্রা ও গতি সঞ্চারিত হয়েছে এ অবাধ বাণিজ্যে। পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের সাথে ব্যবসায়ের কাজ অতি দ্রুত সমাধা করা এখন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।

 

৭. আন্তর্জাতিক সংঘাত হ্রাস

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের দেশগুলো একে অপরের ওপর বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে কোনো দেশই নিজেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারে না। এতে যে বিশ্বায়নের বন্ধন রচিত হয় তা আন্তর্জাতিক সংঘাত হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

৮. বিশ্বব্যাপী সুস্থ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি

বিশ্বায়নের অর্থ নিজের সম্পদ বিশ্বের কাছে তুলে দেয়া নয়, বরং বিশ্বের সম্পদ নিজের কাজে লাগানো। এ কারণে পৃথিবীর যে দেশ যত উন্নত সে দেশ বিশ্বায়ন থেকে তত বেশি উপকৃত। বস্তুত বিশ্বায়নই পারে বিশ্বব্যাপী একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে সম্যা বিশ্বকে একটি উন্নত বিশ্রামে’ রূপান্তরিত করতে।

 

বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব

বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহে। এ কারণেই এসব দেশের কৃষক সম্প্রদায়, শ্রমিক শ্রেণী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণীর লোকেরা বিশ্বায়নবিরোধী আন্দোলনে রসদ যোগায়। নিচে সংক্ষেপে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো:

 

১. অর্থনৈতিক শোষণ ও মেধাপাচার

মুক্তবাজার অর্থনীতির আওতায় বিশ্বায়ন উন্নত দেশের জন বিশ্বসম্পদের দ্বার খুলে দিলেও দরিদ্র বা পশ্চাৎপদ দেশের জন্য তা একটি বড় অভিশাপস্বরূপ। বিশ্বায়নের ফলে দরিদ্র দেশের মেধা ও সম্পদ অবাধে পাচার হচ্ছে ধনী দেশে। এতে গরিব দেশ। হচ্ছে আরো গরিব, আর ধনী দেশ হচ্ছে আরো ধনী।

 

২. অসম প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি

বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মাঝে অসম প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সকল দেশের শিল্প ও শিল্পের অবকাঠামো দুর্বল সে সকল দেশ শিল্পোন্নত দেশের আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হচ্ছে। শিল্পে পশ্চাৎপদ দেশসমূহের বহু শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেকার হচ্ছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক।

 

৩. রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন

বিশ্বায়নের ফলে গরিবে দেশগুলোর পক্ষে তাদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা করাও একটি দুঃসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে। ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফ্যাক্স ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোনো গোপনীয় দলিল সংবাদ, তথ্য অতি দ্রুত বিদেশী প্রতিপক্ষের হাতে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রেও পশ্চাৎপদ দেশগুলোই মার খাচ্ছে ধনী দেশগুলোর কাছে।

 

৪. শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয়

বিশ্বায়ন শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গরিব দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নত বিধায় অনুন্নত দেশসমূহকে তা থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ অন্যদিকে ভেঙে পড়ছে তাদের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রযুক্তির ভিত্তি।

 

৫. সাংস্কৃতিক বিপর্যয়

বিশ্বায়নের ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তৈরি হচ্ছে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ধনী দেশসমূহের অপসংস্কৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে গরিব দেশের যুবশ্রেণী ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহের নিজস্ব সংস্কৃতি ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ।

 

৬. বেকার সমস্যা বৃদ্ধি

বিশ্বায়নের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব দেশে ভয়াবহ বেকারত্ব দেখা দিচ্ছে।

 

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

বিশ্বায়ন ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের সম্পদ ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এমন সব সুযোগ তৈরি হয়েছে যার ফলে অনগ্রসর দেশের উদ্যমী মানুষের আরও বহুগুণ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য দ্রুত বেড়েছে এবং কিছু কিছু উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো এর থেকে অনেক লাভবান হয়েছে।

কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব দেশগুলো এবং বিশেষ করে আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলো এ থেকে সুবিধা পায়নি। উরুগুয়ে চুক্তির ফলে যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চালু হয়েছে তার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো রাজনৈতিক ও অন্যবিধ চাপের মুখে তাদের বাজার শক্তিধর দেশসমূহের জন্য ক্রমে উন্মুক্ত করে দিয়েছে, কিন্তু গরিব দেশগুলো তাদের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশগুে কাছ থেকে নতুন কোনো বাজার সুবিধা পায়নি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে তাদের আধিপত্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। সত্যিকার অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন আর বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্যাধীন বিশ্ব পুঁজিবাদ যে এক কথা নয় এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

বিশ্বায়নের ধারণা বর্তমান বিশ্বে এমন একটি অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়ায় পরিণত হতে যাচ্ছে, যা থেকে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহ অদূর ভবিষ্যতে সরে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ এ সকল দেশে শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়নে তেমন কার্যকর ও টেকসই অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

বিশ্বায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তাদের রপ্তানি পণ্যের দাম কম পাচ্ছে এবং শ্রমিকদের মজুরির হারও কম রাখতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের ওপর পর্যায়ক্রমে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার কঠোর বিধিমালা এবং পাশ্চাত্যের মানবাধিকারের ধুয়া।

 

বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্প্রসারণের উদ্যোগ

মুক্ত বাণিজ্যের প্রসারের ধুয়া তুলে যে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে সারা বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস চলছে প্রকৃতপক্ষে তার আড়ালে রয়েছে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্প্রসারণের আয়োজন।

শিল্পোন্নত দেশগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, ঐসব দেশের মহাশক্তিধর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জাল বিস্তার অবাধকরণ, উন্নত দেশগুলোর উদ্বৃত্ত পুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার সন্ধানে তৃতীয় বিশ্বের যে কোনো দেশে অবাধে প্রবেশ ও নির্বিঘ্নে প্রস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য খনিজ দ্রব্য, বনজ দ্রব্য, কাঁচামাল, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি আহরণ নির্বিঘ্নকরণ – এগুলোই বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। আর বিশ্বায়নের নামে এ সকল উপাদানেরই সম্প্রসারণ চলছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর সস্তা শ্রমশক্তি ব্যবহারের জন্য উন্নত দেশগুলোর পুঁজি এ সকল দেশে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, অথচ তাদের অদক্ষ কিংবা আধাদক্ষ শ্রমিকদের উন্নত বিশ্বের দেশগুলো আমদানি করতে চাচ্ছে না। তৃতীয় বিশ্ব থেকে মেধাপাচারে এদের উৎসাহের শেষ নেই, কিন্তু সাধারণ শ্রমিকদের অভিবাসন ঠেকাতে এরা নিজ নিজ দেশগুলোতে নিত্যনতুন আইনি বাধা-নিষেধের দেয়াল খাড়া করে চলেছে।

একদিকে পুঁজি চলাচলকে অবাধ করার জন্য Multilateral Agreement Investemnt (MAI) বাস্তবায়নের জন্য চাপাচাপি বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্যকে ধরে রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের জন্য তৃতীয় বিশ্বকে চাপ প্রদান করছে।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পরিবেশ দূষণকারী হলো যুক্তরাষ্ট্র, তারপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের স্থান। অথচ তারাই এখন পৃথিবীর পরিবেশের রক্ষক সেজে তাদের আজ্ঞাবহ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার মাধ্যমে। উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নের সাথে পরিবেশ সংরক্ষণের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে বারবার।

বিশ্বায়নের নামে উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলোকে বৈদেশিক ঋণের অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে এর ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক দেশেই . মুদ্রাবাজারের পতনের পাশাপাশি প্রধান প্রধান স্টক মার্কেটেও ধস অব্যাহত রয়েছে। অবাধ পুঁজি চলাচলের ফলে মুদ্রাবাজারে ফটকাবাজির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফের নেতৃত্বে যেভাবে এই সংকটের সমাধান খোঁজা হয়েছে, তাতে শিল্পোন্নত দেশের অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পায়।

তাই বলা যায়, বিশ্বায়নের গতিপ্রবাহ খুবই অসম। এর সুবিধাভোগী দেশ, কোম্পানি ও সম্প্রদায়ের সংখ্যা খুবই সীমিত। এ প্রক্রিয়ায় বছরে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ দরিদ্র দেশগুলো থেকে ধনী দেশে চলে যায়। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও কল্যাণমুখী বাজেট বরাদ্দ কর্তন করা হয়। এর বোঝা বইতে হয় এ সকল দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবই সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি লক্ষ্য করা যায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদের স্পর্শ করছে কিন্তু এর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করার মতো পরিবেশ বা উপাদানসমূহ বর্তমানে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই।

ফলে অবাধ বাজারের নামে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দাতা গোষ্ঠীর বিভিন্ন কঠোর শর্ত আরোপের কারণে দেশীয় মুদ্রা ও পুঁজির বাজার কোনো সুসংহত কাঠামো অর্জন করতে পারেনি। দেশে রপ্তানির পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। অন্যদিকে এ দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, মানব উন্নয়নকে বাদ দিয়ে কখনো বিশ্বায়ন সম্ভব নয়। যেসব দেশের মানব উন্নয়ন সূচক অত্যন্ত কম তারা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন সূচক নিম্ন অবস্থানে বিদ্যমান। তাই বর্তমান অবস্থায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই দুরূহ ব্যাপার।

বিশ্বায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কম দামে ভালো পণ্য উৎপাদন করে বাজার দখল করা। এক্ষেত্রে আমাদের পণ্য ভারতের কাছে মার খাচ্ছে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট অংশের সাথে বাণিজ্যে বাংলাদেশ টিকতে পারে না, সেখানে বিশ্বায়নের ফলে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সাথে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভ

উন্নত বিশ্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজারে প্রবেশের তাগিদ দিচ্ছে। অথচ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে এশিয়ার মুদ্রাবাজার ক্রমাবনতিশীল উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রাবাজারের পতনের পাশাপাশি এসব দেশের প্রধান প্রধান স্টক মার্কেটেও ধস অব্যাহত রয়েছে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামোবেষ্টিত বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটুকু স্থায়িত্ব অর্জন করার ক্ষমতা রাখে তা চিন্তার বিষয় অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বজনীন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তাই বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড় না করিয়ে বিশ্বায়নে অনুপ্রবেশ দেশের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে।

 

বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে শুরু হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংলাপ। উরুগুয়ে রাউন্ডে সেই সংলাপের সমাপ্তি টানা হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও। এই সংস্থা সৃষ্টির মধ্য দিয়েই বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায়। বিশ্বায়নের শুরুতেই সারা বিশ্বে এমন ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, বাজার অর্থনীতি সারা পৃথিবীর মানুষকেই এমন এক বস্তুগত উন্নয়নের সন্ধান দেবে যে, তারা পশ্চিমা উন্নত দেশের নাগরিকদের মতোই জীবনযাপন করতে পারবেন। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক পরিবেশে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষই সুন্দর এক জীবনের সন্ধান পাবেন।

কিন্তু এখন বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারছে তাদের এ স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। বিশ্বায়নের নামে মুক্তবাজার অর্থনীতি জনগণকে কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারছে না। মানুষের খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, আয় ও সুযোগের বৈষম্য বেড়েই চলছে। একদিকে সমৃদ্ধি অন্যদিকে দারিদ্র্য পাশাপাশি হাঁটছে।

পৃথিবীতে এত প্রাচুর্য এবং এত দারিদ্র্য কখনো একত্রে অবস্থান করেনি। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যেসব সুবিধা দেবে বলে বিশ্বায়নের পথে যাত্রার শুরুতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাস্তবে সেসব তো দেয়ইনি, উল্টো ‘শ্রমমান’ ও ‘পরিবেশের মান’ এর নামে নয়া সংরক্ষণবাদের হুমকি দিতে শুরু করে।

আর এসব কারণেই বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো খুব সহজে মেনে নিতে পারছে না উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর চাপিয়ে দেয়া বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া। কারণ বিশ্বায়নের ফলে এসব দেশের নাগরিকদের একটি বড় অংশ সনাতনী সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের চাকরির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। আর এসব দেশের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন সম্মেলনে ।

১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের তৃতীয় সভা পণ্ড হয়েছে আর কানকুন সম্মেলনও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই পণ্ড হয়েছে। এসব সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য যে ঐক্য ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছে তার তাৎপর্য অপরিসীম। এর ফলে দরিদ্র দেশগুলোর সাথে সমঝোতা না করে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া যে চালু রাখা সম্ভব হবে না তা ধনী দেশগুলোর নেতারাও বুঝতে শুরু করেছেন। তাই বিশ্বায়নের গতিপ্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ গতিধারা কেমন হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

এত কিছু সত্ত্বেও মনে হয় একুশ শতকের শুরুতে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের বিকল্প নেই। এর ইতিবাচক ধাপগুলো (যেমন- তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, কম দামে পণ্য ভোগ, শিক্ষার সুযোগ) পেতে হলে বাজার অর্থনীতিকে আরো সমাজনৈতিক ও কল্যাণমুখী হতে হবে। সমাজের অবহেলিত-দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহণ বাদে বাজার প্রসারিত হতে পারে না। এছাড়াও ধনী দেশগুলোকে গরিব দেশগুলোর প্রতি আরো উদার হয়ে সকল প্রকার বৈষম্য নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে। তাহলেই কেবল বিশ্বায়নের প্রকৃত সুফল সকল ভোগ করতে পারবে।

 

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ

 

বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর করণীয়

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশ্বায়নের তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হলে কতগুলো নীতি- নির্ধারণী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন—

১. রাষ্ট্রকে ভৌত কাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির কাজে লাগে তেমন অবকাঠামো (যেমন—টেলিযোগাযোগ বা তথ্য-হাইওয়ে) উন্নয়নে সবিশেষ যত্নবান হতে হবে।

২. সামাজিক খাতে দক্ষ বিনিয়োগ করে যেতে হবে। অবহেলিত মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যেতে হবে। এই বিনিয়োগ যাতে দক্ষভাবে খরচ হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। দারিদ্র্য নিরসনে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।

৩. তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে উৎসাহ ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে যেতে হবে। শিল্পায়নের স্থবিরতা দূর করে কৃষি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নে মনোযোগ দিতে হবে। ক্ষুদে উদ্যোক্তা, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের কি করে প্রযুক্তিনির্ভর করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

৪. সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় শাসনের গুণগত মান বাড়াতে হবে।

৫. দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন ও জবাবদিহিতাসম্পন্ন সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

৬. পরিবেশ সচেতন কর্মপরিধি বাড়িয়ে রাষ্ট্রকে মানবিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে হবে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার

আধুনিক সভ্যতার গতিশীল চক্রের এক অবশ্যম্ভাবী ফল বিশ্বায়ন । তাই বিশ্বায়নকে নবা উপনিবেশবাদ বলে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বায়নকে যত নেতিবাচক বিশেষণেই ভূষিত করা হোক না কেন, বিশ্বায়ন এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে। তাই এরূপ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো রাষ্ট্রই দূরে থাকতে পারে না।

তবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া বিশ্বায়নের পথে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। আর অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন তখনই ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে যখন এর সুফল সর্বত্র সমানভাবে স্টন করা যাবে। এজন্য প্রয়োজন সুষম মানের সম্পদ উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো। তবেই বিশ্বায়নের পথে বাংলাদেশের যাত্রা হবে ফলদায়ক।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment