রংপুর ও উত্তরাঞ্চলে প্রতিরোধযুদ্ধ – এস.এম. আব্রাহাম লিংকন : ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর সমস্ত রংপুর শহরজুড়ে আনন্দের চাপা উত্তেজনা ছিল। এদিন সকালে রংপুর সেনানিবাসে আলোচনার নামে রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল হক এম.এন.এ. অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান এম.এন.এ. ও ডা. সোলায়মান মণ্ডল এম.এন.এ. কে সেনাবাহিনীর দুটি জীপে নিয়ে যায়। তাঁদের ফেরত না দিয়ে পরবর্তীকালে গ্রেফতার দেখানো হয়।

একই সময়ে গাইবান্ধায় মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তে হাসান ইমাম টুলুর নেতৃত্বে গাইবান্ধা ট্রেজারি থেকে ২০০ রাইফেল গোলাবারুদ ও স্থানীয় আনসার ক্যাম্পের অস্ত্র সংগ্রাম কমিটির নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। পরে ঐ সকল অস্ত্র ইসলামীয়া হাই স্কুল ও গাইবান্ধা কলেজ মাঠের প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে প্রশিক্ষণের জন্য বিতরণ করা হয়। গাইবান্ধা কলেজের অধ্যক্ষ অহিদ উদ্দিন আহমেদ কলেজের রোভার স্কাউটের তিনশত কাঠের ডামি রাইফেল প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য সংগ্রাম কমিটিকে দিয়ে দেন।
২৬ তারিখের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বার্তা প্রেরণ করলে তা সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে, ভোরে ওয়ারলেস কেন্দ্রের কর্মীদের মাধ্যমে বার্তাটি পেয়ে যান এম.এন.এ. লুৎফর রহমান, ওয়ালিউর রহমান এম.পি.এ. । পলাশবাড়ি এফ.ইউ. ক্লাবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করা হয়। ঢোলভাঙ্গাতে সাবেক সেনা সদস্য মোকাররমের নেতৃত্বে সামরিক কৌশল আয়ত্তের গতি পায়। ঐ সময় আমলাগাছির বলরাম কর্মকার কয়েক হাজার বল্লম তৈরি করে দেন প্রশিক্ষণের জন্য।
গোবিন্দগঞ্জে রণজিত মোহন্তের নেতৃত্বে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সাঘাটা থানায় বোনারপাড়া হাইস্কুল মাঠে আনসার কমান্ডার আফতাব হোসেন দুদু, আব্দুল হালিম ও ওয়ারেছ সহস্রাধিক যুবক নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন। তারা সাঘাটা থানা ও রেলওয়ে থানার অস্ত্র সংগ্রহ করেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পাক আর্মি সৈয়দপুর থানার বাঙালি ওসি আবুল ফজলকে অপসারণ করে থানার সাব-ইন্সপেক্টর বিহারি জামাল উদ্দিনকে ওসির দায়িত্ব দেয়। পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করে। অবাঙালিরা সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকে। পরিস্থিতির কারণে বাঙালিরা অনেকে আত্মগোপন করেন।
বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, গোলাহাট, মুন্সিপাড়া, ইসলামবাগ এলাকায় প্রচুর বোমা বিস্ফোরণ হয়। শহরের বোমা বিস্ফোরিত এলাকায় সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে আর্মি এসে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যায় কার্ফু জারি হয়। ঐদিন বিহারিদের চোরা-গোপ্তা হামলায় রেলকর্মচারী আব্দুল আজিজ, শমসের আলী (কারপেন্টার) খালাসি বছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ কাজী
নামে চারজন বাঙালি নিহত হন। পাকিস্তান আর্মি নীলফামারীতে অবস্থান নিলে শহরে গড়ে উঠা বাঙালি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। একইদিনে ডোমার হাইস্কুলে ২৬ মার্চ/৭১ মানচিত্র খচিত লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুল হক এবং চিলাহাটি রেল স্টেশনে ও মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয়ে এ.কে.এম. জাকারিয়ার নেতৃত্বে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় কিশোরগঞ্জ থানায় ওসি ছিলেন একজন উর্দুভাষী অবাঙালি। বাঙালির স্বাধিকার অর্জনকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় কটূক্তি করতেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হলে কিশোরগঞ্জ থানায় ছুটে আসে শত শত জনতা। তাদের দাবি থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে।

ছাত্র নেতা শরিফুল ইসলাম ওসি সাহেবকে থানার পাকিস্তানি পতাকা নামাতে বলেন। তাঁর দাবি জনতার দাবিতে পরিণত হয়। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রবল দাবির মুখে বিহারি ওসি বাধ্য হয়ে নিজেই পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ফেলেন। পাকিস্তানের পতাকার বদলে সেদিন কিশোরগঞ্জের বুকে ছাত্রলীগের নেতা এসরারুল হক বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। “
২৬ মার্চ কুড়িগ্রামে দিনভর মিছিল হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের। কুড়িগ্রাম কলেজ থেকে মিছিল বেরিয়ে শহর প্রবেশ করে। রেয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া এম.এন.এ. আহাম্মদ হোসেন সরকার মোক্তারসহ মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃস্থানীয়দের সাথে শহরের পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠক মহকুমা প্রশাসক মামুনুর রশীদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে প্রায় সকলই অবগত হন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন পরিস্থিতির আলোকে নিজেদের এলাকায় (বাড়ি) ফিরে গেলে শহরের পরিস্থিতি ভুতুড়ে হয়ে পড়ে। আনসার অ্যাডজুটেন্ট অসহযোগের সময় কুড়িগ্রামে ছিলেন না। এরূপ অবস্থায় ব্যাংক ও শহর অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় আনসার, মোজাহিদ ও বাঙালি ইপিআরদের দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংক ও ট্রেজারি রক্ষায়। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও ট্রেজারি আনসারের পক্ষে মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিউদ্দিন আহমেদকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বেসরকারি হাইকমা ও মহকুমা সংগ্রাম কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
রৌমারী সি.জি. জামান হাই স্কুল মাঠে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ২৬ মার্চ সকাল বেলা উত্তোলন করা হয়। ব্যবসায়ী ফজলুল হক খানের দেওয়া কাপড় দিয়ে রৌমারী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ন্যাপ নেতা আজিজুল হকের স্ত্রী রিজিয়া বেগমের নিজ হাতে পতাকা সেলাই করেন। উল্লেখ্য রিজিয়া বেগম আরও একটি পতাকা তৈরি করে দিয়েছিলেন যা আসাম বিধান সভার সামনে উত্তোলন করা হয়েছিল। বর্তমানে রংপুর সেনানিবাস যাদুঘর ‘শাশ্বত বাংলা’য় সেই সেলাই মেশিনটি সংরক্ষিত আছে।
অপরদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক আইন পুনর্বহালের ঘোষণা বেতার মারফত প্রচারিত হয়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার জবাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে এবং রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতির আলোকে কুড়িগ্রাম মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সদস্যগণ আহম্মদ আলী বকসীর বাসভবনে স্থাপিত সংগ্রাম কমিটির কার্যালয়ে মিলিত হন সন্ধ্যায়।
সেখানে ২৮ মার্চ গওহর পার্ক মাঠে (বর্তমানে মজিদা কলেজ মাঠে) একটি জনসভা করে জনগণকে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঐ দিন রংপুর শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যার প্রতিরোধে টগরাইহাট রেলস্টেশনে স্লোগান মুখর হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা রংপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্যে তিন মাইল এলাকার রেল লাইন উপড়ে ফেলে।
২৭ মার্চ রংপুর জেলার সামরিক লড়াইয়ে একটি ব্যাপকভিত্তিক জাগরণ তৈরি করেছিল তিস্তা ব্রিজ যুদ্ধ। তিস্তা ব্রিজটির দখল নেয়া ছিল সামরিক দিক থেকে পাকিস্তানিদের জন্য জরুরি। কারণ তিস্তা অতিক্রম করে বৃহত্তর কুড়িগ্রাম মহকুমার নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলে পাকিস্তানিদের জন্য ভারতীয় সৈন্যের হুমকি প্রবল ছিল।
তিস্তা ব্রিজ এর সোজা উত্তরে ভারতীয় সীমান্ত মোঘলহাট-গীতালদহ, উত্তর পশ্চিমকোণে বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা সহজে অতিক্রম করা যায়। আর তিস্তা নদী অতিক্রম করতে না পারলে সমগ্র কুড়িগ্রাম মহকুমা ও রংপুর সদর মহকুমার উত্তর পূর্বাংশ পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে যাবে। প্রভৃতি কারণে সামরিক কৌশলগত অবস্থান উপলদ্ধি করে পাকিস্তানিদের যেমন জরুরি ছিল তিস্তা ব্রিজের নিয়ন্ত্রণ অনুরূপভাবে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি যোদ্ধাদের জন্য জরুরি ছিল পাকিস্তানিদের ঠেকাতে তিস্তা ব্রিজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পাকিস্তানিদের কাছে খবর ছিল বাঙালিরা ইতোমধ্যেই তিস্তা ব্রিজের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে। বাঙালি ইপিআর, আনসার, ছাত্র যুবক, মোজাহিদ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক সৈন্য সেখানে বাঙালিরা সমাবেশ করে। কুড়িগ্রাম থেকে কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ-এর নেতৃত্বে আনসার এবং ইপিআর-এর আনিস মোল্লা, সুবেদার ওহাব, আতাহার আলী মল্লিক, এরশাদ আলী সংগৃহীত অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অপরদিকে ২৭ মার্চ রংপুরের প্রখ্যাত আইনজীবী (ভাসানী) ন্যাপ নেতা মাহফুজ আলী জররেজ মিয়াকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার মুন্সিপাড়াস্থ বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় ক্যান্টনমেন্টে।
লালমনিরহাট শহরে বিহারিরা অর্থ ও সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী ছিল। থানা সংগ্রাম কমিটি বিহারিদের অস্ত্র সংগ্রাম কমিটির কাছে জমা করার জন্য অনুরোধ করলে বিহারিরা কর্ণপাত করেন নাই। অস্ত্র জমা নিতে সংগ্রাম কমিটির একটি মিছিল রেলওয়ে আপইয়ার্ডে গেলে জিয়ারত আলী নামে এক মুদি দোকানদার মিছিলে গুলি করলে শাহজাহান নামে এক বাঙালি যুবক শহিদ হন। শাহাজানের মৃত্যুর খবরে সমগ্র লালমনিরহাটবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা আপইয়ার্ড ঘেরাও করে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ঐদিন সংগৃহীত অস্ত্র দিয়ে থানা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় মডেল স্কুল মাঠে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়।
একইদিন রৌমারীতে থানা সংগ্রাম কমিটির একটি জরুরি সভা হয়। সভায় রৌমারীর যুবকদেরকে সম্মুখসমরের জন্য প্রস্তুত করে তোলার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক রৌমারী হাই স্কুল মাঠে এলাকার উৎসাহী যুবকদেরকে একত্রিত করে শারীরিক কসরতসহ কাঠের তৈরি ডামি রাইফেলের মাধ্যমে অস্ত্র পরিচালনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
ইতিপূর্বে ১১ মার্চ ভুরুঙ্গামারী জয়মনিরহাট ইপিআর হেড কোয়ার্টারের পাশে অবস্থিত নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়িতে বসে ইপিআর আনিস মোল্লার নেতৃত্বে জয়মনিরহাট ক্যাম্প দখল করার পরিকল্পনা হয়, কিন্তু ক্যাম্প দখল করার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেদিন ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীকালে জয়মনিরহাট ইপিআর ক্যাম্পের ইনচার্জ এবং ওয়ারলেস অপারেটরকে মেরে ২৭ মার্চ সকাল বেলা মুক্তিযোদ্ধারা জয়মনিরহাট ক্যাম্প দখল করে নেন। জয়মনিরহাটে ইপিআরদের একটি ওপি কেন্দ্র ছিল। ওয়ারলেস অপারেটর সে সময় উঁচু টাওয়ারে বসে ডিউটি করছিলেন। তাকে টাওয়ার থেকে নেমে আসতে বললেও তিনি নিচে নেমে আসতে রাজি না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা টাওয়ারের নিচে খড়কুটো জ্বালিয়ে অপারেটরকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে।
২৭ মার্চ চিলমারী থানায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে বালাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সুবেদার নুরুজ্জামান চাকুরিতে না ফিরে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি সে সময় ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। রুহুল আমিন, আব্দুল জলিল, আবুল কাশেম চাঁদসহ ২০-৩০জন যুবক প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
গাইবান্ধায় রংপুর থেকে বগুড়াগামী পাকিস্তান আর্মি পলাশবাড়ি এলাকায় রাস্তায় জনতা যে বেড়িকেড তৈরি করেছিল তা ভাঙতে না পেরে পলাশ বাড়ি থানার কালিবাড়ি হাটে জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে আব্দুল মান্নান নামে গিরিধারী গ্রামের এক তরুণ এবং পুলিশের দুজন বাঙালি সিপাহী শহিদ হন। ঐদিন নীলফামারীর এক জনসমাবেশ জলঢাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন জলঢাকা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাদের হোসেন।
জলঢাকা ছিল মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতা কাজী আব্দুল কাদেরের বাড়ি। তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় জলঢাকায় মুসলিম লীগের প্রভাব ছিল অত্যন্ত বেশি। কাজী কাদেরের ছত্রছায়ায় স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতাও ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু সে সব ভীতিকে জয় করে স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ প্রাণের পতাকা তুলেছিল।
নীলফামারীতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হলেন মো. আমিন বি. এস. সি. এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জমসেদ আলী মিয়া। কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী (সংসদ সদস্য), মো. শফিয়ত হোসেন, মোশাররফ হোসেন মিয়া, মকবুলার রহমান চৌধুরী, মো. মনছুর আলী, শফিকুল আলম, দুলাল চৌধুরী, আব্দুল হক মাস্টার প্রমুখ।
সংগঠক হিসেবে আমিন বি.এস.সি. আফছার উদ্দিন আহমেদ (এম.এন.এ.), অ্যাড. নুরুল হক, আনছারুল হক দানু, ইলিয়াছ হোসেন, মিজানুর রহমান চৌধুরী (সাবেক এম.পি.), মোহাম্মদ আলী ফিরিঙ্গী, ডা. শফিয়ত হোসেন, মো. জমশেদ আলী, মাহতাব উদ্দিন সরকার এবং দীপক কুমার সাহা প্রমুখ। ১১
Table of Contents
২৮ মার্চ আদিবাসী ও বাঙালিদের রংপুর সেনানিবাস আক্রমণ ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি:
মার্চের উত্তাল দিনগুলোতে জেলাব্যাপী রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলো জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে ধাবিত করার জন্য বিশেষ প্রচার প্রচারণা শুরু করেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম.এন.এ. ও এম.পি.এ.-রা ছাড়া ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে রফিকুল ইসলাম গোলাপ, হারেস উদ্দিন সরকার, ইলিয়াস আহমেদ, মাহবুবুল বারী, অলক সরকার, আব্দুর রহমান, আব্দুল আউয়াল টুকু, মুখতার ইলাহী (শহিদ), জিয়াউল হক সেবু, নজরুল ইসলাম হক্কানী, জাকির হোসেন সাবু, নূরুল হাসান, রোস্তম আলী, আকবর আলী, জায়েদুল হক, ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া নেতৃবৃন্দের মধ্যে খালেকুজ্জামান চৌধুরী, নুরুল রসুল চৌধুরী, মুফতি বেঙ্গুবর রহমান, আব্দুল মান্নান, ছাত্র ইউনিয়ন মেনন এর শেখ শাহী ও নূর আহমেদ টুলু।
ভাসানী ন্যাপ নেতাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা রাখেন অ্যাডভোকেট কাজি মহাম্মদ এহিয়া, মাহফুজ আলী জররেজ (শহিদ) ন্যাপ ওয়ালী কাজি আব্দুল হালিম, মোহাম্মদ আফজাল, শামসুজ্জামান, মুনিরুজ্জামান, আবু জাফর মুকুল, রহমত কবিরী, তৃপ্তি রায় চৌধুরী (তিপাইদি)।
কমিউনিস্ট পার্টি নেতা মণিকৃষ্ণ সেন, আমজাদ হোসেন, শংকর বসু, জিতেন দত্ত, ছয়ের উদ্দিন প্রমুখ। ঐ সকল দলের নেতা কর্মীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা সমিতি করে জনগণকে বেগবান করার দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পালন করেন।
রংপুর সেনানিবাসের চারদিকের গ্রামে বিশেষ করে বদরগঞ্জ শ্যামপুর, মিঠাপুকুর, রাণী পুকুর, জায়গীর, দমদমা, নিসবেতগঞ্জ, মানজাই, রানীহাট, রূপসী, তামফাট, জয় আনোয়ার, পালিচড়া, বুড়ির হাট, গঙ্গাচড়া, লালবাগ, গণেশপুর, দামোদরপুর, পাগলাপীর, সাহেবগঞ্জ, বাহার কাছনা এলাকাগুলো রংপুরের কাছাকাছি হওয়ায় ঐ এলাকার মানুষ-জন শহরের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের উত্তাপের সাথে নিত্য যোগাযোগ রাখত।

ঐ অঞ্চলে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির গণসংগঠন কৃষক সমিতির শক্তিশালী অবস্থান ছিল। সংগঠনটি তামাক, পাট, ইক্ষু চাষীদের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়তই লড়াই সংগ্রাম করত। সে কারণে কৃষক সমিতির শক্ত অবস্থান ছিল ঐ এলাকার জনগণের উপর, তাছাড়া সাওতাল, ওরাওঁ আদিবাসীদের সাথে কমিউনিস্টদের নিবিড় সম্পর্ক থাকার সুবাদে ঐ সকল এলাকায় বামপন্থিরা স্বাধীনতার গতি প্রকৃতি নিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকে।
তখন সেখানে নেতা ছিলেন জিতেন দত্ত, ছয়ের উদ্দিন, শংকর বসুরা। স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৭ মার্চ পর্যন্ত রংপুরের নেতারা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করা হবে এ ধরনের কোনও ঘোষণা না দিলেও প্রচার ছিল জনগণ সংগঠিত হতে পারলে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের বাঙালি সৈনিকরা সহযোগিতা করবে ফলে ক্যান্টনমেন্টের পাকসেনাদের পরাজিত করা যাবে। এ প্রসঙ্গে ইপিআরের রংপুর সেক্টরের উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দীনের বিশেষ ভূমিকা ছিল।”
তিনি পরিস্থিতির আগাম অনুধাবনে ২৫ মার্চ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তিস্তা অভিমুখে যাওয়ার আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি মাহিগঞ্জের মোল্লা মাস্টারকে নিয়ে সেন পাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমানের সাথে বৈঠক করে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেন। পরে রংপুর ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্তে মোল্লা মাস্টারকে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দেন। নওয়াজিস উদ্দিনের সেদিনের সে ইঙ্গিত ধরেই সেনানিবাস আক্রমণের ভিত্তি রচিত হতে থাকে।
মোল্লা মাস্টার পরক্ষণই নিশবেতগঞ্জে শেখ আমজাদের সাথে দেখা করে এ বিষয়ে শেখ আমজাদ এম.পি.এ., সিদ্দিক হোসেন, রাণীপুকুরের আব্দুল গণি এবং মজিবর মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করেন। এতদ্ব্যতীত প্রচার ছিল রংপুর সেনানিবাসে খাবার, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ফুরিয়ে গেছে এ খবর চারদিক ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ বাঙালিরা মনে করে ক্যান্টনমেন্টে সেনারা বেশ নাজুক অবস্থায় আছে।
অতঃপর জনতা ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে। সেদিন বাঙালি ও আদিবাসীদের মিলিত আক্রমণকে পাকিস্তানিরা প্রতিরোধ করে বুলেট বেয়নেট দিয়ে। তাদের আক্রমণে বাঙালি ও আদিবাসীদের রক্তে রংপুর সেনানিবাস রঞ্জিত হয়।
২৮ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার পর এ অঞ্চলের মানুষ ভীত, আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় এবং গ্রামের যুবকসহ সর্ব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। সে সময় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা ছিল মুখ্য। রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট খাটো প্রতিরোধও গড়ে উঠেছিল। রংপুর উইং হেডকোয়ার্টার থেকে যে সমস্ত বাঙালি ইপিআর পালাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তারা প্রায় সকলেই হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি এবং অনেকেই নিহত হন।
ভুরুঙ্গামারী এলাকার বাঘভাণ্ডার বিওপির পাকিস্তানি হাবিলদার সুফি খানের নেতৃত্বে মইদাম, শিলকুড়ি, শালঝোড় বিওপির অবাঙালি ইপিআররা কয়েকজন বাঙালি ইপিআরকে নিরস্ত্র ও বন্দি করে। তারা ১৫/১৬ জন কোম্পানি থেকে অস্ত্রসহ ফুলবাড়ি দিয়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছিল। বিহারি অধ্যুষিত লালমনিরহাট রুটকে নিরাপদ ভেবে সে পথেই অগ্রসর হচ্ছিল তারা। জনতা অবাঙালিরা বাঙালি ইপিআর জোয়ানদের বন্দি করে নিয়ে যাচ্ছে এরূপ খবরে তাদের পিছু ধাওয়া ও প্রতিরোধ করে।
ফুলবাড়ির বদরুজ্জামান মিয়া, লালমনিরহাটের ছাত্রনেতা লুৎফর রহমান, মোজাহিদের আজিজুল হকসহ হাজার হাজার ছাত্র জনতা অবাঙালি ইপিআরদের ঘিরে ফেলে, সাপটিবাড়ি মাটিয়া মসজিদের কাছে তাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ফুলবাড়ি থেকে যাওয়া ইপিআরের লুৎফর রহমান শহিদ হন। ১৩ পরে নিয়ে এসে মসজিদের কাছে দাফন করা হয়। তিনিই ফুলবাড়ির প্রথম শহিদ। তাঁর তাঁকে ফুলবাড়িতে আদি বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। ঐ যুদ্ধে অবাঙালি ইপিআর ৮ জন (মতান্তরে ৫ জন) নিহত হয়।
একই দিন কুড়িগ্রামের গওহর পার্কে এক বিশাল জনসভা হয়। জনসভায় খায়রুল আলম নামক এক যুবক নিজ হাতে তৈরি করা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনতাকে উৎসাহিত করেন। এরপর সন্ধ্যায় ঘোষপাড়াস্থ আহম্মদ আলী বকসীর গোডাউনে অনুষ্ঠিত সংগ্রাম কমিটির সভায় সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি ‘সামরিক হাইকমান্ড’ গঠন করা হয়। হাইকমান্ডের সদস্য ছিলেন সাতজন যথাক্রমে আহাম্মদ হোসেন সরকার, সভাপতি, মহকুমা আওয়ামী লীগ; রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া এম.এন.এ., আহম্মদ আলী বকসী, মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও আব্দুস সামাদ। ১*
এই বেসরকারী হাইকমান্ড পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ এবং ইপিআরদের সংগঠিত করতে থাকে। আনসার ও থানা থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র এবং স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত রাইফেল ও বন্দুক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করে। এসব অস্ত্র দিয়ে তারা কুড়িগ্রামে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ছাত্রনেতারা বিভিন্ন ইপিআর ক্যাম্পে গিয়ে বাঙালি ইপিআরদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করার জন্য আহ্বান জানান।
২৮ মার্চ সকাল বেলা সোনাহাট বি.এস.এফ. ক্যাম্প থেকে নিয়ে আসা অস্ত্র বঙ্গসোনাহাট ইপিআর ক্যাম্পে রাখা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউদ্দিন আহমদ এর নির্দেশে অস্ত্রগুলো সোনাহাট ক্যাম্প থেকে নিয়ে ট্রাকের মাধ্যমে কুড়িগ্রামে প্রেরণ করেন। পরে ইপিআরের সুবেদার আরব আলী, বোরহান উদ্দিন, আনসারের মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল ওহাব প্রমুখ অস্ত্রগুলি নিয়ে তিস্তা ডিফেন্সে অংশ নেন।
২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে সংগ্রাম কমিটির সাথে এস.ডি.ও. মামুনুর রশিদ এবং এস.ডি.পি.ও. জালাল উদ্দিন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের সাথে দেখা করে মুক্তিসংগ্রামের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। তারাও মহকুমা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকেন। এর ফলে সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনের স্বাতন্ত্র্য বিলীন হয়ে যায়। এর ভিতর দিয়ে জনতার প্রশাসন চালু হয় এর নেতৃত্ব দেন গঠিত সংগ্রাম কমিটি ও হাইকমান্ড। ১৫
ঐদিন ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রাথমিক পর্যায়ে ভূরুঙ্গামারী ডিগ্রী কলেজ, ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনাহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। সে সময় আব্দুল কাদের ব্যাপারীর দোকানকে কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভূরুঙ্গামারী থানায় কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ আলী (সিও রেভিনিউ) প্রাথমিক পর্যায়ে ভূরুঙ্গামারীতে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন।
লালমনিরহাটে আগের দিন বিহারিদের গুলিতে নিহত বাঙালি শাহাজানের নামাজে জানাজা লালমনিরহাট হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হাজার হাজার ছাত্র জনতা অংশ নেয়। শহিদ শাহাজান মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটের প্রথম শহিদ। ১৬
২৯ মার্চ আহাম্মদ হোসেন সরকারের বাড়িতে মহকুমা প্রশাসক মামুনুর রশিদ, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ নেতৃস্থানীয় এবং সংগ্রাম কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একই দিন কুড়িগ্রামের গওহর পার্কে এক বিশাল জনসভা হয়। জনসভায় খায়রুল আলম নামক এক যুবক নিজ হাতে তৈরি করা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনতাকে উৎসাহিত করেন। এরপর সন্ধ্যায় ঘোষপাড়াস্থ আহম্মদ আলী বকসীর গোডাউনে অনুষ্ঠিত সংগ্রাম কমিটির সভায় সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি সামরিক হাইকমান্ড’ গঠন করা হয়।
হাইকমান্ডের সদস্য ছিলেন সাতজন যথাক্রমে আহাম্মদ হোসেন সরকার, সভাপতি, মহকুমা আওয়ামী লীগ; রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া এম.এন.এ. আহম্মদ আলী বকসী, মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও আব্দুস সামাদ। * এই বেসরকারী হাইকমান্ড পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ এবং ইপিআরদের সংগঠিত করতে থাকে।
আনসার ও থানা থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র এবং স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত রাইফেল ও বন্দুক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করে। এসব অস্ত্র দিয়ে তারা কুড়িগ্রামে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ছাত্রনেতারা বিভিন্ন ইপিআর ক্যাম্পে গিয়ে বাঙালি ইপিআরদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করার জন্য আহ্বান জানান।
২৮ মার্চ সকাল বেলা সোনাহাট বি.এস.এফ. ক্যাম্প থেকে নিয়ে আসা অস্ত্র বঙ্গসোনাহাট ইপিআর ক্যাম্পে রাখা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউদ্দিন আহমদ এর নির্দেশে অস্ত্রগুলো সোনাহাট ক্যাম্প থেকে নিয়ে ট্রাকের মাধ্যমে কুড়িগ্রামে প্রেরণ করেন। পরে ইপিআরের সুবেদার আরব আলী, বোরহান উদ্দিন, আনসারের মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল ওহাব প্রমুখ অস্ত্রগুলি নিয়ে তিস্তা ডিফেন্সে অংশ নেন।
২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে সংগ্রাম কমিটির সাথে এস.ডি.ও. মামুনুর রশিদ এবং এস.ডি.পি.ও. জালাল উদ্দিন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের সাথে দেখা করে মুক্তিসংগ্রামের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। তারাও মহকুমা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকেন। এর ফলে সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনের স্বাতন্ত্র্য বিলীন হয়ে যায়। এর ভিতর দিয়ে জনতার প্রশাসন চালু হয় এর নেতৃত্ব দেন গঠিত সংগ্রাম কমিটি ও হাইকমান্ড। ১৫
ঐদিন ভুরুঙ্গামারী থানায় প্রাথমিক পর্যায়ে ভূরুঙ্গামারী ডিগ্রী কলেজ, ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনাহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। সে সময় আব্দুল কাদের ব্যাপারীর দোকানকে কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভূরুঙ্গামারী থানায় কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ আলী (সিও রেভিনিউ) প্রাথমিক পর্যায়ে ভূরুঙ্গামারীতে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল
সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। লালমনিরহাটে আগের দিন বিহারিদের গুলিতে নিহত বাঙালি শাহাজানের নামাজে জানাজা লালমনিরহাট হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হাজার হাজার ছাত্র জনতা অংশ নেয়। শহিদ শাহাজান মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটের প্রথম শহিদ। ১৬
২৯ মার্চ আহাম্মদ হোসেন সরকারের বাড়িতে মহকুমা প্রশাসক মামুনুর রশিদ, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ নেতৃস্থানীয় এবং সংগ্রাম কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অবাঙালি ইপিআরদের বন্দি করার সিদ্ধান্ত হয় প্রয়োজনে তাদের হত্যা করে রংপুরের দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয় সীমান্তের সকল বাঙালি ইপিআরদের কুড়িগ্রামে সমবেত হওয়ার জন্য। ১৭
৩০ মার্চ রংপুরের ইপিআর উইং এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দীন ২৫ মার্চের নারকীয় ঘটনার বিষয়ে আগাম পরিস্থিতি অনুধাবনে ইপিআর রংপুর সেক্টর থেকে পাকিস্তানিদের নজর এড়িয়ে তিস্তা নদী অতিক্রম করে গোপনে পাকিস্তানিদের এবং বাঙালির সংগ্রামের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করতে থাকেন। তিনি ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রায় গোপনেই ছিলেন। ঐদিন তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ঘড়িয়াল ডাঙ্গা থেকে কুড়িগ্রামে চলে আসেন।
অতঃপর তিনি মহকুমা সংগ্রাম কমিটি ও সামরিক ক্ষেত্র দেখার জন্য গঠিত কমান্ডের সাথে আহাম্মদ আলী বকসী সাহেবের বাসায় এক বৈঠকে মিলিত হন। তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রংপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধ এক নবতর পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হয়। একজন সামরিক কর্তা ব্যক্তির অংশগ্রহণ রংপুর জেলার পূর্ব ও পূর্ব উত্তর ও পূর্ব দক্ষিণ অঞ্চলের বাঙালির বুকে অসীম সাহস যোগায়।
ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দীন তিনি ইপিআর উইং এর অধীনস্থ সাপোর্ট প্লাটুনের অধিনায়ক নায়েব সুবেদার নূর মোহাম্মদ, চিলমারীতে অবস্থানরত সুবেদার আব্দুল মান্নান, মোগলহাটে অবস্থানরত সুবেদার আরব আলী, পাটগ্রামে অবস্থানরত সুবেদার বোরহান উদ্দিনকে অবাঙালি ইপিআরদের হত্যা করে ৩১ মার্চ কুড়িগ্রামে এসে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন।
১৮ বৈঠকে সামরিক বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়। বৈঠকে তিস্তা ডিফেন্স রক্ষা করা তিনি প্রধান কর্তব্য স্থির করে সেখানে আরও অস্ত্র ও শক্তি বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন।
৩০ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী রংপুর সেনানিবাস থেকে বের হয়ে শহরসহ গ্রামগঞ্জে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ব্যাপক গণহত্যা চালায়, অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর মহল্লা গ্রাম ধ্বংস করে ফেলে। ১৯
৩১ মার্চ কুড়িগ্রাম মহকুমা এবং রংপুর মহকুমার অধীন বর্ডার আউটপোস্ট এ দায়িত্বরত বিভিন্ন ইপিআর কোম্পানির বাঙালি জোয়ানরা পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করে কুড়িগ্রামে আহাম্মদ আলী বকসী সাহেবের ঘোষপাড়ার গোডাউনে সমবেত হন। সেখানে ইপিআরের রংপুরের উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দীন যোগদেন। সেখানে স্থানীয় আনসার, পুলিশ, মোজাহিদ ছাত্র যুবকদের নিয়ে একটি সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।
কৌশলগত কারণে সামরিক হেডকোয়ার্টার বকসী সাহেবের গোডাউন থেকে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে আওয়ামী লীগ সভাপতি আহাম্মদ হোসেন সরকার (মোক্তার) সাহেবের টগরাইহাটের বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে সেখান থেকেই সকল সামরিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল।
অপরদিকে একইদিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স কাউনিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে বাঙালি সেনা ও ছাত্ররা কৌশলগত অবস্থান নেয়। তাঁরা পিছু হটে তিস্তা রেল সেতুর কুড়িগ্রাম প্রান্তে (উত্তরে) পজিশন নেয়। তাঁরা রেল সেতুর মাঝের স্লিপার তুলে লাইনে গাছের গুড়ি তুলে দেন।
একই সময়ে পাকিস্তান আর্মির নায়েক সুবোদার আলতাফ ওরফে আফতাব ৩১ মার্চ সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট এ পাকবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের আক্রমণের সময় একপ্লাটুন সৈন্য নিয়ে গাইবান্ধা মহকুমার নিকটস্থ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় ছিলেন।
পরবর্তীকালে তিনি সেখান থেকে নিজ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গাইবান্ধা দিয়ে গোটা প্লাটুন নিয়ে রৌমারীর চরাঞ্চলে পৌঁছে ক্যাম্প তৈরি করেন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি। সেখান থেকে তিনি রাজিবপুর, কর্তিমারীসহ রৌমারীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন। তার সাহসী কার্যক্রম তাকে সমগ্র রৌমারী এলাকায় সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত করে। তিনি আশ-পাশের মুক্তিক্যাম্পগুলোর সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় স্থাপন করেন।
১ এপ্রিল কৌশলগত কারণেই তিস্তা ব্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা ছিল ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ ও ১১ নং সেক্টরের অধীন তিস্তা নদীর পূর্বপাড় এবং ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম পাড় রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কুড়িগ্রাম মহকুমায় সংগ্রাম কমিটির ২৮ মার্চের সিদ্ধান্তের আলোকে তিস্তা ব্রিজে প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলার জন্য ২৮ মার্চ রাত্র থেকেই ইপিআরের ওহাব ও আনসারের মহকুমা কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদসহ ছাত্রদের একটি টিম পাঠিয়ে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেন।
তিস্তা ব্রিজের প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরিতে গোকুন্ডা ও রাজপুর, ঘড়িয়ালডাঙ্গা এলাকার সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া ছিল। মহকুমা শহর এবং লালমনিরহাট থানা থেকে রাজনৈতিক নেতারা মাঝে মধ্যে এলেও মূল ভূমিকা রাখেন আনসার, ইপিআর ও স্থানীয় ছাত্র যুবকরা। ২১ সেই সময় ইপিআরের ক্যাপ্টেন নওয়াজিস উদ্দিন কুড়িগ্রামে সংগ্রাম কমিটির সাথে যোগদিলে মুক্তিযোদ্ধারা আরও সাহসী হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিস্তা ব্রিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও ব্যাপক করা হয়। সেখানে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী, কালিগঞ্জ, মোঘলহাট, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট, এমন কী রংপুর সেক্টরের অধীন দিনাজপুর থেকে এসে ইপিআরগণ তিস্তা ডিফেন্সে যোগদেন। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট শহরকে পাকবাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে ২৮ মার্চ থেকেই তিস্তা ব্রিজের উত্তর মুখে কার্যকর প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলেন। ইপিআরের সার্বিক যোগদানে তা আরও শক্তিশালী হয়।
২ এপ্রিল তিস্তা প্রতিরোধ :
তিস্তা ব্রিজের উত্তরপ্রান্তে আনসার, ইপিআর, স্বাধীনতাকামী জনগণ ভাঙা রেলওয়ে ওয়াগান, গাছের গুড়ি দিয়ে রেলপথে অবরোধ সৃষ্টি করে। তিস্তা ব্রিজের কুড়িগ্রাম প্রান্তে কয়েক কিলোমিটার রেললাইনও তুলে ফেলা হয়। ঐদিন বিকাল তিনটার দিকে পাকিস্তানের সেনা অফিসার মেজর এজাজ মোস্তফা ১৫ জন সৈন্যের একটি টিম নিয়ে কাউনিয়া থানার ওসিসহ তিস্তা ব্রিজে রেকি করতে আসে তখন মুক্তিবাহিনী ওৎ পেতে ছিল, পাকিস্তানি টিম ১০০ গজের মধ্যে (নাগালের মধ্যে) এলে ইপিআরের হাবিলদার ওহাব প্রথম গুলিবর্ষণ করেন। এর পর উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি পাল্টা গুলি হয়।
সেদিন মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে মেজর এজাজ মোস্তফা ও কাউনিয়া থানার ওসিসহ ১৫ জন পাক সেনা নিহত হলে অন্য পাকিস্তানিরা পালিয়ে যায়। ঐদিন মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি সেনারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে শেলিং শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা জবাব না দেয়ায় সহজেই পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট রেঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে, তখন মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পিত আক্রমণ করলে বেশকিছু পাকিস্তানি তিস্তা ব্রিজে খতম হয়।
পাকিস্তানিরা বাঙালির প্রতিরোধ ভাঙতে প্রচুর গোলাগুলি করলেও সেদিন তিস্তা ব্রিজ দখল নিতে পারে নাই। সেদিনের যুদ্ধে বাঙালি ইপিআর সৈন্য বরিশালের সন্তান আতাহার আলী মল্লিক এবং নোয়াখালির এরশাদ আলী নামের দুজন ইপিআর সৈনিক শহিদ হন। প্রথমে শহিদ হন আতাহার আলী মল্লিক তাঁর কিছুক্ষণ পরেই একঝাঁক বুলেট বাংকার ভেদ করে এরশাদ আলীর শরীর বিদীর্ণ করে।
তাদের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও তিস্তার ব্রিজের প্রতিরোধ যুদ্ধের বিজয় বাঙালিদের প্রবল আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সেদিন অন্য পাকিস্তানিরা পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। তবে বাঙালি প্রতিরোধকারীরা বুঝতে পারেন তিস্তা ব্রিজ বেশি সময় তাঁদের দখলে রাখা সম্ভব হবেনা। পাকিস্তানি মেজর এজাজ মোস্তফার মৃত্যুতে এ অঞ্চলে বহুগুণে বৃদ্ধিপায় পাকিস্তানিদের হিংস্রতা।
অন্যদিকে ২ এপ্রিল ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়ে রৌমারীর সিজি জামান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ন্যাপনেতা আজিজুল হক, এম.পি.এ. নুরুল ইসলাম পাপ্পু মিয়া, ফজলুল হক খানসহ স্থানীয় নেতাদের ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডারগণ তুরা পাহাড়ে ডেকে নিয়ে যান। তাদের সাথে বৈঠকে ভারতীয় কমান্ডারগণ জানান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার লে. কর্নেল এইচ. এম. এরশাদ রংপুরে নিজ বাসভবনে ছুটিতে আছেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য প্রতিনিধি মারফত যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
৩ এপ্রিল কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট দখলের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তিস্তা ব্রিজের দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ব্যাপক গোলা বর্ষণ করে। ২০ কিন্তু বাঙালির প্রবল প্রতিরোধে সেদিনও ব্যর্থ হয়।
৪ এপ্রিল পাকবাহিনীর একটি রেজিমেন্ট হারাগাছ দিয়ে লালমনিরহাট প্রবেশ করে বিমানবন্দরের দখল নেয়। লালমনিরহাটে গণহত্যাসহ শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতির মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের এ কোম্পানি কুলাঘাটে, বি কোম্পানি রাজারহাটে, সি কোম্পানি কালিগঞ্জে, ডি কোম্পানি সাপটিবাড়ি বাজারে ডিফেন্স নেয়। সুবেদার আরব আলী দায়িত্ব নেন এ, বি এবং ডি কোম্পানির এবং সি কোম্পানির দায়িত্ব নেন সুবেদার বোরহান। ২৪
৫ এপ্রিল সকালে কুড়িগ্রাম চিলড্রেন পার্কে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই ঘোষণার পর কুড়িগ্রাম শহর ফাঁকা হতে থাকে মানুষ জন নিজেদের বা আত্মীয়স্বজনদের গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। সে সময় মানুষ তাদের কোন সম্পদ সাথে নিতে পারেন নাই। জেলা ও মহকুমা শহরের প্রতিটি বাড়িতে মানুষ জন মাটি খুঁড়ে গর্ত করে।
কিছু বাক্স-পেট্রায় করে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের দৃষ্টিতে পড়ায় অনেক বাড়ির গর্ভেও সে সকল জিনিস খোয়া যায়। আবার অনেক জিনিস নয় মাসের যুদ্ধে তদারকির অভাবে ঝড়-বৃষ্টিতে মাটির সাথে মিশে গিয়ে বিনষ্ট হয়।
৫ এপ্রিল কৌশলগত কারণে মুক্তিবাহিনীর রংপুর হেড কোয়ার্টার আহাম্মদ হোসেন সরকারের টগরাইহাটের বাড়ি থেকে নাগেশ্বরীতে স্থানান্তর করা হয়। ক্যাপ্টেন নওয়াজিস উদ্দিনও নিজের অবস্থান নাগেশ্বরীতে স্থানান্তর করেন। একই দিনে মওলানা ভাসানী রৌমারী দিয়ে নদীপথে আসামের মানকার চরে প্রবেশ করেন। ২৫
৭ এপ্রিল সুবেদার আলতাফ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে গাইবান্ধায় আসেন। তিনি ছিলেন একজন অসম সাহসী যোদ্ধা। তার আগমনে তরুণ যুবকদের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তিনি গাইবান্ধা কারাগার থেকে সকল বন্দিকে মুক্তিদেন। অপরদিকে কুড়িগ্রামে পাকবাহিনী জেলখানার পুলিশদের হত্যা করে রংপুরের দিকে ফিরে যায়।
৮ এপ্রিল রংপুর সেক্টর ঘোষণা :
ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ কুড়িগ্রামে ৮ এপ্রিল ফিরে এসে মহকুমা প্রশাসক মামুনুর রশীদ, রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া (এম.এন.এ.) সহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নিয়ে কুড়িগ্রামে একটি বৈঠক করেন। তখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ কোনো সংহতরূপ নেয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে একমাত্র কমান্ডের অধীনের সব কিছু চলছিল।
কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী এম.এন.এ. মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুর রব এম.এন.এ. (মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ) মেজর সফিউল্লাহ (সেক্টর কমান্ডার, এস ফোর্স অধিনায়ক), মেজর খালেদ মোশাররফ (সেক্টর কমান্ডার, কে ফোর্স অধিনায়ক) প্রমুখ সামরিক কর্মকর্তারা হবিগঞ্জ জেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে বসে প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেন।
কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে তাদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগ তখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। প্রতিটি এলাকাতেই তখন যুদ্ধ চলছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। নওয়াজেশ উদ্দিন রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট প্রভৃতি নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে প্রাথমিকভাবে চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ রাখেন। ঐ মূহূর্তে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন ঊর্ধ্বতন কোনো বাঙালি সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
সে কারণে তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনে কুড়িগ্রামে সভায় বসেন। সেখানে ইপিআরের নন-কমিশন্ড কর্মকর্তা, আনসার ছাড়াও যুদ্ধের সাথে যারা জড়িত হয়েছেন এমন সংগঠকদের এবং রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্বদানকারী নেতা সংগঠকদের সাথেও প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষে তিনি ঐদিনই রংপুরকে একটি সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেন।
পুরো এলাকাকে ভাগ করেন দুইটি সাব-সেক্টরে একটি পাটগ্রামে যার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেন ইপিআরের সুবেদার বোরহান উদ্দিনকে। অপরটি ভূরুঙ্গামারী সাব-সেক্টর সেখানকার অধিনায়কত্ব দেন ইপিআরের সুবেদার আরব আলীকে। ক্যাপ্টেন নওয়াজিস উদ্দিন সার্বিক দায়িত্ব রাখেন নিজের হাতে। ২৬
তিনি ইপিআর বাহিনীকে ভাগ করেন, এর সাথে যুক্ত করেন অবসরে আসা সৈন্য, স্থানীয় আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড কর্মী, স্কাউট, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা। তাদেরর দায়িত্ব ভাগ করে দেন ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে। এভাবে তিনি নিজ দায়িত্বে গড়ে তোলেন যুদ্ধ পরিকল্পনা। পরবর্তীকালে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে যুদ্ধ সংহত হলে সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। তখন ১১এবং ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয় রংপুর জেলা।
১২ এপ্রিল ভারতীয়দের সহযোগিতায় লালমনিরহাট বিমান বন্দরে আক্রমণ করে সুবেদার আরব আলীর নেতৃত্বাধীন সুবেদার নূর মোহাম্মদ, সুবেদার বোরহান, হাবিলদার মাজহারুল, হাবিলদার ওহাব এর বিভিন্ন কোম্পানি ও সাপোর্ট প্লাটুন। এ তাদের সঙ্গে আক্রমণে অংশ নেয় আনসারসহ ছাত্র যুবকরা।
১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি কোম্পানি রাজারহাট ও কুলাঘাটে ব্যাপক আক্রমণ করে। শত্রুর প্রবল আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে এসে ১৫ এপ্রিল কাকিনায় এ কোম্পানি, পাটেশ্বরী ঘাটে বি কোম্পানি, আটের ঘাটের বামে রৌমারী সড়কে সি কোম্পানি এবং ফুলবাড়ি থানায় ডি কোম্পানি ডিফেন্স নেয়। কুড়িগ্রাম শহর দ্বিতীয় দফায় দখলের চেষ্টা করে। পাকবাহিনী বেলগাছায় গণহত্যা করে। পরিস্থিতির বদল হলে নাগেশ্বরী থেকে সামরিক হেড কোয়ার্টার ভূরুঙ্গামারীতে স্থানান্তরিত হয়।
১৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর কয়েক দফা আক্রমণের পরও স্থানীয় আনসার ও ইপিআরের সদস্যদের ভূমিকার কারণে কুড়িগ্রাম ট্রেজারিতে রক্ষিত ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ও সোনাদানা রক্ষা করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে আনসারের মহকুমার দায়িত্বে থাকা মহিউদ্দিন আহমেদ বিশেষ অবদান রাখেন।
পরে এসডিও মামুনুর রশীদসহ এম.এন.এ. রেয়াজ উদ্দিন ভোলা, শামসুল হক চৌধুরী এম.পি.এ., আবুল হোসেন এম.পি.এ., তাছাদ্দুক হোসেন ও অধ্যাপক হায়দার আলী প্রমুখ টাকাগুলো ট্রেজারির ভোল্ট ভেঙে উদ্ধার করে ভারতের ব্যাংকে জমা করা হয়। ২৮
২৬ এপ্রিল পাকবাহিনীর টহল দলের সাথে মুক্তিবাহিনীর কুড়িগ্রামে ও কুলাঘাটে ঐদিন সংঘর্ষ হয়। কুলাঘাটে দুজন পাকসেনা নিহত হয়। ২৮ এপ্রিল সুবেদার আরব আলী ১০ জনের একটি সেকশন নিয়ে রেকি করতে গেলে পাকিস্তানিদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষতিহয়।
১০ মে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী ভূরুঙ্গামারীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। সেখানে কর্নেল ওসমানীকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। তথায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি আজ গর্বিত যে, বাংলাদেশের মাটিতে থেকে আমার লোকের সামনে কথা বলতে পারছি”। ২৯
২৬ মে ধরলার পূর্ব ও উত্তর তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর পাকিস্তান বাহিনীর ভারী অস্ত্রের ব্যাপক আক্রমণে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব হয় নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি সার্পোট টিম ভূরুঙ্গামারী থেকে ধরলা মুখে অগ্রসর হলে হাসনাবাদে পাক এমবুসের শিকার হন ক্যাপ্টেন তমিজ উদ্দিনসহ ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা।
পাক আর্মি ধরলা অতিক্রম করে ভূরুঙ্গামরী অভিমুখে যাত্রা করলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আর্মির আগমনকে প্রতিহত করার জন্য বিএসএফের সহযোগিতায় ২৭ মে সোনাহাট ব্রিজ ভেঙে দেয়। এর ভিতর দিয়ে ধরলা ডিফেন্সের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। রংপুর জেলায় এই ডিফেন্সটি ভাঙতে পাকিস্তানিদের কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়।
পাটেশ্বরী ডিফেন্সের পতনের আগ থেকেই দুধকুমর নদীর পূর্বতীর বরাবর গড়ে তোলা হয় এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যূহ। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের জন্য লোক রিক্রুট ও প্রশিক্ষণ হতো। বেসামরিক প্রশাসনও চালু ছিল মুক্ত এলাকায়।
সোনাহাট এলাকায় সরকারি উদ্যোগের আগেই যুবশিবির পরিচালনায় নিযুক্ত হন স্থানীয়ভাবে রহিম উদ্দিন মণ্ডল, ইব্রাহিম আলী, আলাউদ্দিন মণ্ডল, শাহাবাজ উদ্দিন মণ্ডল, আবদুল গফুর ও জয়নাল আবেদীন। ঝাউকুটিতেও স্থাপিত হয় আর একটি যুব শিবির।
ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মুজিবর রহমান, আবদুল জব্বার সরকার, শাহাদত হোসেন, আবদুল কাদের বেপারী, ডা. নিয়ামত আলী আকন্দ ও মোজাম্মেল হক। সোনাহাট মুক্ত এলাকার প্রধান কেন্দ্রে সংগঠক এবং সমর নায়কদের অনেকেই বসবাস করতেন। মুক্ত এলাকায় গড়ে উঠেছিল অনেক ঘাঁটি।
এর মধ্যে ছিল বলদিয়া, সুবলপাড় ও মাদারগঞ্জ উল্লেখযোগ্য। এবং ব্রহ্মপুত্রনদের পূর্বতীরে রৌমারীতে ৭ মার্চের পর থেকেই সেখানকার নেতা আজিজুল হক, নুরল ইসলাম পাপ্পু এ.পি.এ., সাদাকত হোসেন এম.এন.এ.-সহ গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম বগুড়ার নির্বাচিত এম.এন.এ., এম.পি.এ.-সহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ রৌমারীতে অবস্থান নিয়ে গড়ে তোলেন এক বিরাট মুক্তাঞ্চল। যেখানে ট্রেনিং ক্যাম্পসহ নানাবিধ কার্যক্রম চলতে থাকে।
রংপুর জেলায় ২৮ মার্চ থেকেই মূলত প্রতিরোধ শুরু হয়। পরবর্তীকালে সমগ্র দেশ সামরিকভাবে সেক্টরভিত্তিক বিন্যাস হলে সাহেবগঞ্জ ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনস্থ একটি সাব-সেক্টর হয়।
তথ্যনির্দেশ :
রংপুর জেলার ইতিহাস- রংপুর জেলা প্রশাসন পৃ. ২১৬ ৬. মো. মাহবুবর রহমান, একাত্তরে গাইবান্ধা, পৃ. ৬৩
প্রাতক, পূ. ৬৫
8 মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ১০৫
মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ১১৩
মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ২২৭ এস. আই. এম নুরুন্নবী খান বীরবিক্রম, রৌমারী রণাঙ্গন, পৃ. ৮৭-৮৮ 9.
কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, রংপুর সেনানিবাসে দুঃসাহসিক আক্রমণ,
ড. মুহম্মদ মনিরুজ্জামান, চার শতাব্দির লালমনিরহাট, পৃ. ২২৪ ১০. আখতারুজ্জামান মণ্ডল, ১৯৭১ উত্তর রণাঙ্গনের বিজয়, পৃ.
১১. গাইবান্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, গাইবান্ধা ফাউন্ডেশন পৃ. ১৮১ ১২. মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ১১২
পৃ. ৩৩
পরিবর্ধিত চতুর্থ সংস্করণ
বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস চতুর্থ খণ্ড (চতুর্থ পর্ব)
১৩. শেখ আমজাদের সাক্ষাৎকার : দৈনিক যুগের আলো, (রংপুর) ২৮ মার্চ ২০১১, তারিখে প্রকাশিত ১৪. মো. বদরুজ্জামান মিয়া, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, পৃ.২১
১৫. তাছান্দুক হোসেন, স্মৃতিকথা: মোস্তফা তোফায়েল হোসেন, কুড়িগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পৃ. ২৩৬ ১৬. মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ২৮৮
১৭. মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ২১৬
১৮. মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, পৃ. ২১৭ ১৯. হারুন অর রশীদ লাল (সম্পা.), ‘মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রজত জয়ন্তী
প্রকাশনা, পৃ. ৬
২০. আখতারুজ্জামান মণ্ডল, ১৯৭১ উত্তর রণাঙ্গনে বিজয়, পৃ. ৩৫
২১. হারুন অর রশীদ লাল (সম্পা.), মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রজত জয়ন্তী প্রকাশনা, ২২. মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ পৃ. ২৮৯
পৃ. ৬
২৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পঞ্চম খণ্ড, সম্পাদনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এরিয়া সদর দপ্তর রংপুর পৃ. ৫৫
২১. মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পৃ. ২২৯,
২২. মো. বদরুজ্জামান মিয়া বীরপ্রতীক, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি’, কাশবন প্রকাশন, ২০০১ পৃ. ১৭-২১
২৩. হারুন অর রশীদ লাল (সম্পা.), মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রজত জয়ন্তি
প্রকাশনা, পৃ. ৬ ২৪. প্রাগুক্ত, পৃ. ৬
২৫. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পঞ্চম খণ্ড, সম্পাদনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এরিয়া সদর দপ্তর রংপুর পৃ. ৫৭
২৬. তাজুল মোহাম্মদ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের খোঁজে কুড়িগ্রাম, সাহিত্য প্রকাশ ২০০৮, পৃ. ৮৬ ২৭. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পঞ্চম খণ্ড, সম্পাদনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এরিয়া সদর দপ্তর রংপুর পৃ. ৫৭
২৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮
২৯. হারুন অর রশীদ লাল (সম্পা.), মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রজত জয়ন্তি
প্রকাশনা, পৃ. ৭
৩০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পঞ্চম খণ্ড, সম্পাদনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এরিয়া সদর দপ্তর রংপুর পৃ. ৫৯
আরও পড়ুন: