বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধ রচনার একটি নমুনা তৈরি করবো আজ। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে একটি সগৌরব আসনে অধিষ্ঠিত। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিশ্বে মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত । আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত একটি দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় নিরস্ত্র জনগণের যে দুর্বার সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল তার কোনো তুলনা নেই।
Table of Contents
বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধ
এ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনকে মরণের হাতে সমর্পণ করে যে দুর্গা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল আর দেশের অগণিত মানুষ জীবনের ভয় তুচ্ছ করে যেভাবে সহযোগিতা প্রদর্শন করেছিলেন তা বিশ্বের সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
মুক্তিসেনাদের মধ্যে ছিল এ দেশের ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক সর্বস্তরের মানুষ। তারা যে প্রতিরোধ করে তুলেছিল তাতে পরাজিত হয়ে এ দেশ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল এক শক্তিশালী শোষক বাহিনীকে। এর পরিণামে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন সমাজ কাঠামো।
বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব :
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নিচে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হলো :
১. রাজনৈতিক সচেতনতা :
এ যুদ্ধের ফলে পাকিস্তান আমলের মৌলিক গণতন্ত্রের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়। জনগণ এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফলে পূর্বের তুলনায় অধিক রাজনৈতিক সচেতন হয়ে ওঠে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটে। নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে সমাজের শ্রেণী বিন্যাসেও পরিবর্তন সাধিত হয়। মৌলিক গণতন্ত্র চালু হওয়ায় গ্রামে-গঞ্জে নতুন নতুন নেতার আবির্ভাব হলো, যারা সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসে। তারা মেম্বার, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ।
২. শিক্ষাক্ষেত্রে:
মুক্তিযুদ্ধের পর গ্রামীণ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এতে : জনগণ শিক্ষার প্রতি সচেতন হয়ে ওঠে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাছে পাওয়ায় গ্রামের জনগণ তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠায় এবং গ্রামের লোক শিক্ষিত হয়ে ওঠে । ফলে তারা দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে শুরু করে।
৩. কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা :
স্বাধীনতার পর যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রামবাংলাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। ফলে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার, উন্নত যন্ত্রপাতি, যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়। সার, কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থার প্রসার হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পর কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছাপ পড়ে।
পূর্ব অর্থনীতি শোষণ করে বাংলার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর । কিন্তু পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ভ্রূক্ষেপ করত না। অথচ তারা পূর্ব পাকিস্তানের কৃষক, যাবতীয় ফসল ও অর্থ নিয়ে যেত। তাই স্বাধীনতার পর সরকার কৃষি ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলেন এর ফলে কৃষিতে দ্রুত উন্নয়ন ঘটে। উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।
৪. নেতৃত্ব :
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে মানুষ শহরমুখী হতে থাকে। তারা গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য শহরে রপ্তানি করতে থাকে এবং শহরের শিল্পপণ্য গ্রামে আমদানি করতে থাকে। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো খুব একটা ভালো ছিল না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ছিল না বললেই চলে। ফলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সরকার গ্রামীণ সমাজ কাঠামো উন্নয়নের জন্য খুবই তৎপর হয়। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য অনেকটা কমে আসে।
৫. শিল্পায়ন:
পশ্চিমা শাসনামলে এদেশে কাঁচামালের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও সরকারের বৈরী নীতির ফলে এদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশের সরকারের ব্যাপক শিল্পনীতির ফলে শিল্পায়ন হচ্ছে। স্বাধীনতার পর দেখা গেছে সরকার গ্রামে-গঞ্জে কুটিরশিল্প স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়। শিল্পায়নের পর গ্রামীণ অবকাঠামোতে আরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়।
৬. যোগাযোগ ব্যবস্থা :
মুক্তিযুদ্ধের ফলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, বিভিন্ন কাজ ইত্যাদি প্রয়োজনে মানুষ শহরমুখী হয়। ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাস্তাঘাটসহ বহু কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, মিডিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয় ।
৭. আধুনিকতার প্রভাব :
গ্রাম ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ফলে গ্রামের চেহারা দিন দিন পাল্টাচ্ছে । গ্রামীণ জনগণ আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পূর্বে দেখা গেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিকতার কোনো ছাপই ছিল না। কারণ সেখানে ছিল না। শিক্ষিত মানুষ, রেডিও, টেলিভিশন অথবা টেলিফোন ব্যবস্থা। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশেও শহরের মতো আধুনিকতার ছাপ পড়েছে। সেখানে রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন ব্যবস্থা এবং শিক্ষিতের হার অত্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে আধুনিকতার ক্ষেত্রে গ্রাম্য পরিবেশও কম নয়।
৮. অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
শিল্পোন্নত সমাজে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতে করে দেখা যাচ্ছে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অবকাঠামোর পরিবর্তন হচ্ছে।
৯. প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির সাথে নতুন নতুন বিভিন্ন প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এ প্রশাসনিক কেন্দ্র ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ায় জনগণ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সহজেই ভোগ করতে পারে। জনগণ রাষ্ট্রের কাঠামো সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারে।
১০. শহরায়ন :
শিল্পায়নের ফলে প্রয়োজনীয় লোকের যোগান দিতে গ্রামীণ জনগণ শহরে ভিড় জমাচ্ছে। এতে করে শহরের আয়তন বাড়ানোর প্রয়োজন হয় এবং শহর সংলগ্ন গ্রাম ও শহরে পরিণত হয়।
১১. পরিবার ব্যবস্থা :
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে যে বিষয়ের ব্যাপক পরিবর্তন হয় তা হলো পরিবার ব্যবস্থা। এক সময় সমাজে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সমাজের লোকজন শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি ও কাজের সন্ধানে শহরমুখী হওয়ায় আগেকার পরিবার ব্যবস্থা আর নেই। এখন পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে গিয়ে একক পরিবার গঠিত হচ্ছে।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় মা-বাবা, ভাই-বোন সকলকে নিয়ে বসবাস করতো। কিন্তু সামাজিক গতিশীলতার কারণে মানুষ সে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ধরে রাখতে পারছে না। কারণ চাকরি বা অন্য কোনো কারণে মানুষ এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হচ্ছে। ফলে একক পরিবার গঠিত হচ্ছে।
১২. নারীদের অবস্থান :
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যে জিনিসটির খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সেটি হলো গ্রামীণ নারীদের ব্যাপক পরিবর্তন। এক সময় গ্রামের নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করতে পারত না। তারা ঘরের কাজে আবদ্ধ থাকত এবং শিক্ষা দীক্ষার ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। তারা শিক্ষা- দীক্ষায় এগিয়ে যায় এবং চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে জায়গা করে নেয় ।
১৩. সংস্কৃতির প্রভাব :
পূর্ব পাকিস্তান সরকার এ দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে বার্থ হয়। স্বাধীনতার পর সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়। এদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির পাশাপাশি বিদেশী সংস্কৃতির আগমন ঘটে। ফলে একটা মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে । শহরের সংস্কৃতির প্রভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং বিদ্যুতের প্রসারের ফলে গ্রামেও বিস্তৃতি লাভ করেছে ।
নেতিবাচক প্রভাব :
বহু আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রাম শেষে স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পাকিস্তান রাষ্ট্র যাত্র ২৪ বছরের মাথায় আবার ভেঙে যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় আচরণ ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে স্বাধীনতা যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মূলত অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ চালিত হলেও সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। বরং মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান আরো বেড়েছে। বেকারত্ব, সুশাসনের অভাব, সুষ্ঠু শিক্ষানীতির অভাব, শিক্ষাব্যবস্থায় নানা সমস্যা, ব্যবসায়ী পুঁজির বিকাশ কিন্তু উৎপাদন পুঁজির অভাব, বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি, রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস ইত্যাদি মিলে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে।
দারিদ্রা, মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ইত্যাদি সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে অভিযুক্ত করা হয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর কালে সামাজিক অস্থিরতার প্রধান কারণ হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের অস্থিরতাকে অভিযুক্ত করা যায়।
বাংলাদেশের সামাজিক অস্থিরতার কারণ এবং শিকড় সন্ধান করলে আমরা পাই স্বধীনতা পরবর্তী প্রথম ১০ বছরের মধ্যেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জুলিও কুরি শান্তি পদক পেলেও সমাজে এর প্রভাব হয় মারাত্মক। অন্যদিকে বাম মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চলে নির্মম নিপীড়ন। ফলে মানুষ আস্থা হারাতে থাকে রাজনীতির ওপর। স্বপ্নপূরণের ব্যর্থতা অচিরেই প্রকটতা পায়।
স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছরের মাথায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং উপযুক্ত ত্রাণ আসার পরও তা সবার কাছে না পৌঁছানো মানুষকে অস্থিরতায় ফেলে দেয়।
পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আরো একটি বড় রকমের ধাক্কা দেয় সাধারণ মানুষের জীবনে । এরপর বারে বারে সামরিক শাসনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের সাধারণ জীবন পর্যুদস্ত হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে পুঁজির বিকাশ প্রয়োজন ছিল এবং কলকারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার প্রয়োজন ছিল তা হয়ে ওঠেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বিভিন্ন স্তরে অস্তিরতা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ে।
এখন অনেক চিন্তাবিদ এ কথা বলছেন যে, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর যে সংবিধান করা হয়েছে তা গণবিচ্ছিন্ন এবং আমাদের দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ ও কবি ফরহাদ মজহার সংবিধানকে নারী বিরোধী ও অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে আমরা দেখি আমাদের সংবিধানকে বারে বারে কাটাছেঁড়া করে এর অবস্থা আরো খারাপ করে ফেলা হয়েছে।

প্রাতটি নির্বাচনে জয়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার প্রথম থেকে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, জোচ্চুরি, সন্ত্রাস ও কালোটাকার আশ্রয় নেয় ।
রাজনীতিতে পেশীশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে। দাতানামধারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান; যেমন- বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি আমাদের থেকে সুদে আসলে তার লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে যাচ্ছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিকর প্রকল্প গ্রহণে বাধ্য করিয়ে আমাদের সর্বনাশ করে চলেছে।
উপসংহার :
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশ ছিল এক অন্ধকার অমানিশায় ডুবে, ছিল না শিক্ষার হার, ছিল না আধুনিকতার কোনো ছাপ। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়। স্বাধীনতার পর সরকার গ্রামীণ অবকাঠামো পরিবর্তনের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেন।
রাস্তাঘাটসহ স্কুল, কলেজ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। লোকজন শিক্ষিত হয়ে চাকরি-বাকরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিয়োজিত হয় এবং গ্রামীণ কুসংস্কার, গোঁড়ামী ইত্যাদি রহিত হয়। স্বাধীনতার ফলে গ্রাম ও শহরের যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। গ্রামীণ নারীরা শিক্ষা সচেতন হয়েছে।
গ্রামীণ মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধই আমাদের সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে এবং সে চেতনাই এ দেশবাসীর উত্তরোত্তর উন্নত জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো পরিবর্তনে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ব্যাপক অবদান রয়েছে।
আরও দেখুনঃ