বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন : বাংলাদেশ একটি গ্রামবহুল ও গ্রামীণ প্রকৃতির অর্থনীতিনির্ভর দেশ। এ দেশের অধিবাসীদের শতকরা প্রায় ৮০ জন পল্লীতে বসবাস করে। পল্লীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রীয় খাত হলো পল্লী উন্নয়ন। উন্নয়ন পরিকল্পনায় পল্লী উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। পল্লী হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।
Table of Contents
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন
পল্লীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে অর্থনীতির মূল উৎস কৃষি। কিন্তু বহুমুখী আর্থ- সামাজিক ও প্রাকৃতিক কারণে পল্লী বাংলার সার্বিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এ দেশের পল্লী জনসমষ্টি আজ দারিদ্র্য, জনসংখ্যাধিক্য, স্বাস্থাহীনতা, পুষ্টিহীনতা, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি নানামুখী সমস্যায় বিপর্যন্ত। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ পল্লীর জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের জন্য পল্লী উন্নয়নের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য
পল্লী উন্নয়ন কি
পল্লী উন্নয়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। পল্লী উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পল্লীর আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। এর ফলে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সর্বস্তরের গ্রামীণ জনগণ সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করতে পারে।
অর্থনীতিবিদ গুচ ও ফ্যালকন (Gotsh and Falcon ) পল্লী উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলেছেন, Rural Development means wide scale participation of rural population in the modernization process অন্যভাবে বলা যায়, পল্লী উন্নয়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে পল্লী উৎপাদন, আয়, বণ্টন, ভোগ, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি সামগ্রিক দিকের গুণগত ও পরিমাণগত উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয় ।
পল্লী উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং একটি দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়নের সমন্বিত ফল। পল্লী উন্নয়নের জন্য দরকার পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুকূলে বস্তুগত দ্রব্যাদির লভ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের জীবনমান বৃদ্ধি করা।
আর এজন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ হলো ক. প্রয়োজনীয় খাদ্যসংস্থানের সক্ষমতা, খ. ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের মতো বস্ত্রের সরবরাহ, গ. স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশসম্মত বাসস্থান, ঘ. উৎপাদনের উপকরণের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, ও. উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উৎপাদনশীল উপাদান হিসেবে নিজেকে দক্ষতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন শিক্ষা, চ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসুবিধা।
এসব প্রয়োজন ও সুযোগ-সুবিধা পূরণের জন্য যেমন প্রয়োজন সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি, তেমনি প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উল্লিখিত মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয় তার সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। তাই বলা যায়, একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি, অন্যদিকে উৎপাদনের সুফল দরিদ্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হওয়া এ প্রক্রিয়ায় পরীর জনগণের উন্নয়নই হলো পল্লী উন্নয়ন।
শরীর বৃহত্তর দরিদ্র ও অনগ্রসর শ্রেণীর ক্ষমতায়ন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং সম্পদের সুগম বণ্টন হলো পল্লী উন্নয়নের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। পল্লীর জনগণের সক্ষমতার পরিধি ও ক্ষেত্র বিকাশই পল্লী উন্নয়ন
পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হলো এ দেশের মানুষের দারিদ্র নিরসন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এ দেশে বাস্তবায়িত সরকারি-বেসরকারি যে কোনো পরী উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে কতিপয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন-
১ স্বল্পতম সময়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো।
২. স্থানীয় সম্পদের সম্ভাব্য সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে পরীর দারিদ্র্য বিমোচন।
৩. স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যথাযথ পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৪. স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধান করে গ্রামীণ জনগণের শহরমুখী প্রবণতা রোধ করা।
৫. গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত শক্তিতে পরিণত করা।
৬. দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ দান এবং প্রশিক্ষণোত্তর ক্ষুদ্র ঋণদানের মাধ্যমে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে উন্নয়ন কর্মকারে বেকার জনশক্তিকে কাজে লাগানো।
৭. প্রাপ্ত সম্পদ ও সুযোগের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা।
৮ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করা
৯. স্থানীয় কাঁচামাল এবং চাহিদানির্ভর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে মহিলা জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।
১০. জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা
১১. কৃষিজাত পণ্যের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির পথ সুগম করা।
১২. গ্রামীণ ভূমিহীন কৃষক শ্রেণী যাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৩. দেশের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও গ্রামীণ অসচেতন গণমানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা ।
১৪.গ্রামকে উন্নয়নের একক হিসেবে ধরে নিচ থেকে গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আর ও কর্মসংস্থানের সর্বোচ্চ পর্যায় লাভের প্রচেষ্টা চালানো।
পল্লীর জনগণের প্রধান কয়েকটি সমস্যা
বাংলাদেশ বলতে বোঝায় শতকরা ৮০ জন অধ্যুষিত গ্রামবাংলাকে। সুতরাং জাতীয় উন্নয়ন পুরোপুরি নির্ভর করছে পল্লী উন্নয়নের ওপর। অথচ পরীর জনগণ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। যুগ যুগ ধরে অনগ্রসরতা, কুসংস্কার আর সামাজিক অনিশ্চয়তায় পল্লী আজ আটকে পড়ে আছে। পরবর্তী পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের পল্লীর জনগণের কয়েকটি প্রধান প্রধান আর্থ-সামাজিক সমস্যা উল্লেখ করা হলো
১. আয়স্বল্পতা
গ্রামীণ পরিবারগুলোর বড় অংশের মধ্যে আয়স্বল্পতার সমস্যা একটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী, জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। গ্রামে বিভিন্ন স্তরের এবং বিভিন্ন পেশার পরিবার বসবাস করে। তার মধ্যে ধনী পরিবারের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প (৭-৮ ভাগ), মাঝামাঝি অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সংখ্যা শতকরা ১২-১৪ ভাগ এবং নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবার হলো বাকি ৮০ ভাগ, যার দুই-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত অসহায় জীবনযাপন করছে। পরীর জনগণের এরূপ আয়স্বল্পতা তাদের মৌলিক মানবীয় চাহিদা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির সুষ্ঠু পূরণ ব্যাহত করে। ফলে দারিদ্র্য তাদের নিত্যসাথী হয়ে দাঁড়ায়।
২. দারিদ্র্য ও নিম্নমানের জীবনযাত্রা
কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতিতে মানুষের আয় কম। ফলে তারা পর্যাপ্ত জীবনধারণ সামগ্রী ও ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এতে করে তাদের জীবনযাত্রার মানও নিম্ন হয়। এছাড়া গ্রামীণ এলাকার জনগণের মোট আয়ের প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ খাদ্য যোগানেই খরচ হয়ে যায়। আর খাদ্য খাতে অধিক ব্যয়জনিত কারণে জীবনযাত্রার অন্যান্য দিকের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
৩. ঋণগ্রস্ততা
দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে গ্রামীণ সমাজে স্বল্প আয় উপার্জনকারীদের মধ্যে ঋণগ্রস্ত থাকার একটি বাস্তবতা অতীতকাল থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গ্রামের শতকরা ৫৭.৭ ভাগ পরিবার ঋণগ্রস্ত। আর ঋণের প্রধান উৎস হলো গ্রামীণ ধনাঢ্য ব্যক্তি (প্রধানত চড়া সুদে ঋণ প্রদানকারী দাদন ব্যবসায়ী)। অনেক সময় ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার দুমাস পূর্বেই দরিদ্র কৃষকেরা তা অর্ধেক দামে বিক্রি করে দেয়। আর গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পারিবারিক খরচের জন্য বিশেষ করে খাওয়া-পরার জন্য করতে হয়।
৪. বেকারত্ব
বেকারত্ব ও অর্ধ-বেকারত্বের (মৌসুমী ও প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব) সমস্যা বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বিদ্যমান কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থান না হওয়া, চাহিদার তুলনায় কৃষি কাজে অধিক শ্রমশক্তির নিয়োগ ইত্যাদি কারণে গ্রামীণ অঞ্চলে বেকারত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে।
৫. স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে পুষ্টিহীনতা-স্বাস্থ্যহীনতা একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। গ্রামে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতায় বেশি আক্রান্ত শিশু ও নারী। এর ফলে তাদের মাঝে রক্তস্বল্পতা, চর্মরোগ, আমাশয় ইত্যাদি ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
৬. জনসংখ্যাধিক্য
আয় ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যাধিক্য বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের একটি ভয়াবহ সমস্যা। দারিদ্র্যাকবলিত গ্রামীণ জীবনে জনসংখ্যা সমস্যা মানবীয় মৌল প্রয়োজন পূরণকে শুধু বাধাগ্রস্তই করেনি, সাথে সাথে নিম্ন জীবনমান ও দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতা, নির্ভরশীলতা, উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা, পরিবেশগত বিপর্যস্ততা ও মনোসামাজিক বিভিন্ন জটিলতা ইত্যাদিও ব্যাপকতর করেছে।
৭. অনুন্নত কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি
গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক অথচ এখানের কৃষি উ ব্যবস্থা অনুন্নত ও আদিম পদ্ধতির। এতে অধিক উৎপাদন হয় না বলে অর্থনীতি বেগবান হচ্ছে না। আর অর্থনীতির স্থবিরতা ও অনগ্রসরতায় গ্রামীণ সমাজে দারিদ্র্যের ভয়াবহতা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে।
৮. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য লাভে বঞ্চনা
গ্রামের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। অভাবের তাড়না ও ঋণের দায়ে ফসল ঘরে ওঠার আগেই তারা তা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে স্থানীয় বাজারে দালাল ফড়িয়া শ্রেণীর লোকেরা বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে কমমূল্যে তা কিনে নেয় এবং সময়মত চড়ামূল্যে এর বাজারজাত করে।
৯. কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও অজ্ঞতা
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজজীবনে ব্যাপকভাবে অদৃষ্টবাদ ও কুসংস্কারের প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও অজ্ঞতা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যহীনতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, নারী নির্যাতন ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি ও টিকিয়ে রাখার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অন্যদিকে তা আবার উন্নয়নমুখী পরিবর্তনকেও অবরুদ্ধ করে রাখে।
১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নৈমিত্তিক বিষয় হিসেবে বিরাজ করছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙ্গন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি, গবাদি পশু ও সহায়-সম্বলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঢেকে আনে ও জনজীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে তোলে।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও বাংলাদেশের পল্লী জীবনে মানবসৃষ্ট অন্যান্য সমস্যা যেমন— টাউটদের দৌরাত্ম, যৌতুকপ্রথা ও নারী নির্যাতন, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অপব্যাখ্যা এবং সম্পদের মালিকানার অসম বন্টন ইত্যাদিও ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত পটভূমি
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের ঐতিহাসিক পটভূমি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিখ্যাত পাঠান সম্রাট শেরশাহের আমলে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত ঘটে। চার্লস মেটকাফের মতে, বাংলাদেশের গ্রামগুলো ছিল এক একটি ক্ষুদ্র প্রজাতন্ত্রের মতো। সবদিক দিয়ে এগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিটি গ্রামেই ছিল একটি করে পঞ্চায়েত। গ্রামের রাস্তাঘাট, গোচারণ ক্ষেত্র, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করত পঞ্চায়েত। নিচে ব্রিটিশ যুগ থেকে পাকিস্তান যুগ পর্যন্ত পল্লী উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো
ব্রিটিশ যুগে পল্লী উন্নয়ন
ব্রিটিশ যুগে এ দেশের পল্লীবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
- ১৮৭৮ সালের দুর্ভিক্ষের পর দুর্ভিক কমিশনের সুপারিশ অনুসারে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৮৮০ সালে কৃষিবিভাগ প্রতিষ্ঠা।
- ১৮৯১ সালে ইউনিয়ন ও জেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ।
- পল্লীবাসীর ঋণগ্রস্ততা নিবারণের জন্য ১৯০৪ সালে সমবায় ব্যবস্থা প্রবর্তন।
- জনগণকে পল্লী উন্নয়ন সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ১৯৩০ সালে রুরাল রিকনস্ট্রাকশন’ নামে একটি নতুন বিভাগ সৃষ্টি
- গ্রাম্য মহাজন ও জোতদারদের নিপীড়ন থেকে পল্লীর দুস্থ জনগণকে রক্ষার জন্য শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কর্তৃক ১৯৩৮ সালে ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন ।
এছাড়াও ব্রিটিশ যুগে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের উদ্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
- ১৯১৬ সালে গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক পল্লীর যুবকদের সংগঠিত করে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কল্যাণমূলক কাজের জন্য ‘ব্রতচারী আন্দোলন’ গড়ে তোলা।
- ১৯৩১ সালে টিআইএন নূরুন্নবী চৌধুরী কর্তৃক ‘পল্লী মঙ্গল সমিতি’ গঠন।
- ১৯৩৪ সালে এন এম খান কর্তৃক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ‘খাল খনন কর্মসূচি’।
- ১৯৩৬ সালে হাফেজ মোঃ ইসহাক কর্তৃক জনগণকে স্বনির্ভর ও সমবায়ী মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তোলার জন্য গ্রামে গ্রামে ব্যাপক অভিযান।
পাকিস্তান যুগে পল্লী উন্নয়ন
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর বাংলাদেশে (তদানীন্তন পাকিস্তানের একটি প্রদেশ) কৃষি তথা পল্লী উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়
- ১৯৫২ সালে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামবাসীকে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা প্রদান করার জন্য ‘সমবায় কর্মসূচি’র পুনর্বিন্যাস।
- বহুমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে পল্লীর জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৫৪ সালে “ভিলেজ এইড’ কর্মসূচি প্রবর্তন।
- গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও দরিদ্র গ্রামবাসীর কর্মসংস্থানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ‘পল্লী পূর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
- ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘দ্বিস্তরবিশিষ্ট সমবায় সমিতির মাধ্যমে মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ, প্রশিক্ষণ, সেচ সুবিধাসহ অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ও উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহকরণ।
প্রাক-স্বাধীনতা যুগের বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচির অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্য করা যায়, এসব কর্মসূচি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামীণ ভৌত অবকাঠানো সৃষ্টিতে কিছুটা অবদান রাখতে সক্ষম হলেও এসব কর্মসূচিতে দরিদ্র জনগণের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। অধিকন্তু, এসব কর্মসূচির ফলে বিত্তবানদের সম্পদ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দরিদ্র জনগণ ক্রমান্বয়ে দরিদ্র হয়েছে। পরিণামে সীমিত সংখ্যক বিত্তবান ও অগণিত দরিদ্র জনগণের মধ্যে অধিকতর বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
পল্লী উন্নয়নে জাতীয় নীতি-পরিকল্পনা ও কর্মসূচিসমূহ
স্বাধীনতাপূর্বকালের পল্লী উন্নয়নমূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে জাতীয় নীতি পরিকল্পনায় পল্লী উন্নয়ন বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পল্লী উন্নয়নের ওপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পল্লী উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্যে অধিকতর সমন্বয় সাধনের জন্য ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়’ নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহে পল্লী উন্নয়ন সব সময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বিভিন্ন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণপূর্বক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়া হয় । বাংলাদেশের প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনায় পল্লী উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এ দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) দেশের চলমান উন্নয়নের মধ্যে পল্লী উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় (১৯৮০-৮৫) ও তৃতীয় (১৯৮৫-৯০) পরাবার্ষিকী পরিকল্পনায় পল্লী উন্নয়ন বহুমুখী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কেন্দ্রিক কর্মসূচির রূপ পরিগ্রহ করে। চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯০-৯৫) পল্লী উন্নয়নকে ব্যাপক ও বহুমুখী কার্যধারায় পরিচালনার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে সর্বশেষ পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) দারিদ্র্য বিমোচন, উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বর্ণিত আকারে নিবিড় ও বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়ন সমস্যা
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা পারস্পরিক সম্পর্কসূত্রে পল্লী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো নিম্নরূপ
ক. রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ও প্রশাসনিক সমস্যা
১. সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নকারীদের বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ও পক্ষপাত। ২. গ্রামীণ ক্ষমতাকাঠামোর পক্ষপাত। ৩. নেতৃত্বের সংকট ও সংগঠনের অভাব। ৪. প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অশুভ শক্তির দৌরাত্ম্য। ৫ পরনির্ভরশীলতা। ৬. কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের অভাব।
খ. অর্থনৈতিক সমস্যা
১. সম্পদের সদ্ব্যবহার অপারগতা ও দক্ষ জনশক্তির অভাব। ২ ত্রুটিপূর্ণ ভূমি মালিকানা ও অসম বণ্টন। ৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ৪. উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে পরনির্ভর মানসিকতা। ৫ কুটির শিল্পে অনগ্রসরতা। ৬. প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অভাব।
গ. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা
১. জনশক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশের কায়িক শ্রমদানে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অলসপ্রিয়তা ও শিক্ষার অভাব। ২ নারী নির্যাতন ও নারী বঞ্চনা। ৩. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচি নিয়ে কাজ করতে অপারগতা। ৪ কুসংস্কার ও অদৃষ্টবাদিতা। ৫ উন্নয়ন কর্মকাও জোরদারকরণে সহায়ক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অনুপস্থিতি। ৬. পল্লী উন্নয়নে দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীর অভাব।

পল্লী উন্নয়নের সমস্যা মোকাবিলার উপায়
বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাসমূহ মোকাবিলা করে পল্লী উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা জাতীয় উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়ন সমস্যার যদি সমাধান করা যায় তবে দেশের সার্বিক উন্নয়নেও আশার আলো খুঁজে পাওয়া যাবে। নিচে পল্লী উন্নয়নের সমস্যা মোকাবিলা করে পল্লী। উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সম্ভাব্য সুপারিশসমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো
১. সুষ্ঠু বাস্তবসম্মত এবং পক্ষপাতহীন পল্লী উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ।
২. বলিষ্ঠ, সৎ এবং উন্নয়নমুখী নেত্বত্ব ও সংগঠন গড়ে তোলা।
৩. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অশুভ শক্তির দৌরাত্ম্য রোধ করা।
৪. আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদের মাধ্যমে জমির শস্যঘনত্ব বাড়িয়ে জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা ।
৫.জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. কৃষিখাত থেকে ছদ্ম বেকারত্ব দূর করা ও অকৃষি খাতে শিল্প, বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা।
৭. পল্লী এলাকার মানুষের মধ্যে আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য কমিয়ে আনা।
৮. স্বল্পসুদে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৯. গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন করা।
১০. জনসমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে পল্লীর জনগণের অজ্ঞতা-নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
১১. গ্রাম থেকে জাতীয় পর্যায়ে আত্মনির্ভরতামুখী ও সুষ্ঠু সামাজিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
১২. পল্লীর সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান-দক্ষতা নির্ভর সমাজকর্মী নিয়োগ করা।
১৩. পল্লী উন্নয়নে নিয়োজিত সকল সরকারি- বেসরকারি সংস্থার কর্মতৎপরতা সমন্বয়মুখী নীতি, কাঠামোবদ্ধতায় নিয়ন্ত্রণ করা।
উপসংহার
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই পল্লী অঞ্চলবাসী এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এদের জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা পল্লী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেও পল্লী উন্নয়নের প্রকৃত অর্থ পল্লীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনের সার্বিক মানোন্নয়ন করার ক্ষেত্রে এ দেশে অতি সামান্যই সফলতা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্ন পরিকল্পনায় নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পল্লীর মৌলিক সমস্যাসমূহের আজ পর্যন্ত তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নরূপ
ক ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। খ. দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের সুস্পষ্ট কাঠামোর অভাব। গ পল্লী উন্নয়নের জন্য পূর্বের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ । ঘ, স্থানীয় সম্পদের স্বল্পতা ও বহিঃসম্পদের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীলতা। ও. দ্রুত ও মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। চ. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং ছ সর্বস্তরে ব্যাপক দুর্নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ।
তাই বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নের জন্য উল্লিখিত বাধা ও কারণসমূহ দূর করতে হবে এবং সার্বিক পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি প্রবর্তন করতে হবে। পল্লীর সমস্যাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে সমাধান করা যাবে না। কারণ একটি সমস্যা আর একটি সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। পল্লীবাসীরা যাতে উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। তারা যাতে তাদের সমস্যা বুঝতে পারে, সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে সেজন্য তাদেরকে সাহায্য করতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে জনগণ ও সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের পল্লী উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করতে হবে।
আরও দেখুনঃ