বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ রচনা

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে। দারিদ্র্যের দিক থেকে দীর্ঘস্থানে অবস্থানকারী বিশ্বের ১৩টি দেশের একটি বাংলাদেশ। এটি তাদের ১৯৯৯-এর এশীয় উন্নয়ন আউটলুকে বলেছে, বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে যে দুটি বিষয়ে নজর দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে তা হচ্ছে দ্রুত দারিদ্র্য কমিয়ে আনা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

 

Table of Contents

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্যের ওপর সত্যিকার আঘাত হানতে বাংলাদেশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দারিদ্র্য বিমোচনকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে শুরু ১৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় প্রথমেই স্থান দেয়া। হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনকে এবং পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) দারিদ্র্যের হার ৪৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে হ্রাস করা হয়।

বাংলাদেশের দারিদ্রোর চিত্র

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দারিদ্র্য নির্ণয়ের জন্য তিনটি বিষয়কে মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রথমত, মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণ বা মাথাপিছু প্রকৃত বায়; দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্য রেখা, একজন ব্যক্তি বা পরিবারকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে যার ওপরে অবস্থান করতে হয়; তৃতীয়ত, জনসংখ্যার মধ্যে দারিদ্র্যের মাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি সমষ্টিগত পরিমাপ।

এ মাপকাঠিতে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। বিবিএস-এর (১৯৯৯) দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়মিত ও ধারাবাহিক পরিবীক্ষণ প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের শহর ও পল্লী অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ৪৩.৩ ও ৪৪.৯ শতাংশ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে দারিদ্র্যের হার নিচের পরিসংখ্যান থেকে অনুমান করা যায়

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ

নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেনের মতে, মানব সমাজে দারিদ্র্য ও অনুন্নয়নের মূল কারণ সামাজিক বৈষম্য।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহানের মতে, ‘Unequal income disagreement causes the poverty.

পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুসারে বাংলদেশে দারিদ্রের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অসম আয় বণ্টন, উৎপাদনশীল সম্পদের অসম বণ্টন, বেকারত্ব ও অর্ধ বেকারত্ব, জনসংখ্যার উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার, নিম্ন পর্যায়ের মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং গণসেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

 

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের প্রয়াস

দারিদ্র্য বিমোচন বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মসূচি। সরকার বৃক্ষরোপণ, মৎস্যচাষ, ছাগল পালন, প্রাথমিক ও নারী শিক্ষা, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, গ্রন্থাগার উন্নয়ন, শিশু অধিকার, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, দুস্থদের জন্য আবাসন ইত্যাদি কর্মসূচি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের গৃহীত উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিগুলোর কয়েকটি হলো

১. কৃষি উন্নয়ন ২. বয়স্ক ভাতা ৩. কর্মসংস্থান ব্যাংক ৪. গৃহায়ন তহবিল, ৫ ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প।

১. কৃষি উন্নয়ন

দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বৃদ্ধি উৎপাদন উৎসাহিত করতে সরকার টিএসপি ও এসএসপি সারের কাঁচামাল ব্লক সালফার, ব্লক ফসফেট ও পলিখিন প্লেটের আমদানির ওপর মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করেছে। এছাড়া পশুখাদা তৈরির জন্য ব্যবহৃত প্রোভিটামিনস ও ভিটামিনের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

২. বয়স্ক ভাতা

সরকার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অসহায় দরিদ্র বয়স্কদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা চালু করেছে। এজন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা, যা পাবেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বয়স্ক দরিদ্র ব্যক্তি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি প্রত্যেকে মাসে ১০০ টাকা হারে বছরে ১২০০ টাকা ভাতা পাবেন। জাতীয় উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়ার সাথে সাথে এ ভাতার পরিধিও সম্প্রসারণ করা হবে।

৩. কর্মসংস্থান ব্যাংক

সরকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক স্থাপন করেছে। এ ব্যাংক বিভিন্ন লাভজনক ও উৎপাদনমুখী প্রকল্পে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থের যোগান দিচ্ছে । এজন্য ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন আকারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহযোগিতায় এ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে

৪. গৃহায়ন তহবিল

বিশেষ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন সমস্যা লাঘবের জন্য বাজেটে ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গৃহহীন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের গৃহায়নের জন্য ঋণ ও অনুদান প্রদান করা হয়। ঢাকা ও অন্যান্য শহরের মহিলা শ্রমিকদের বাসস্থান ও নদীভাঙনে গৃহহীনদের এ কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে ।

৫. ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প

দারিদ্র্য বিমোচন, আত্মকর্মসংস্থান, পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং চামড়া ও মাংসের সাপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনায় বর্তমান সরকার ছাগল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন’ শীর্ষক জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উক্ত কর্মসূচি দেশব্যাপী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কর্তৃক ৫ বছর (২০০২-০৩ সাল থেকে ২০০৬-০৭ সালে) মেয়াদি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

এছাড়া সরকার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, টেস্ট রিলিফ কর্মসূচি, ভিজিএফ কার্ড প্রকল্প, আশ্রাণ প্রকল্প, দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছে।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

 

মানবসম্পদ উন্নয়ন :

মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে আমরা কর্মক্ষম মানুষের স্বাস্থ্য, জ্ঞান, দক্ষতা এবং সাফলতা বৃদ্ধিকে বুঝে থাকি। সমাজবিজ্ঞানীরা Human Resource Development বলতে বোঝান, Its a process of increasing knowledge, skill & capacity of a people in the society উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানবসম্পদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানবপুঁজির কার্যকরভাবে ব্যবহার করার নামই মানবসম্পদ উন্নয়ন।

মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, Quality human Capitalis key to services information and innovation which have a multiplier effect on of goods & services অর্থাৎ ‘যোগ্য মানব সেবা, তথা উদ্ভাবনের চাবিকাঠি যা বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুণকের প্রভাব রাখে।

দেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদের অভাবে মানসম্পন্ন দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত করা এমনকি যথাযথ দক্ষ, শিক্ষিত ও যোগ্য মানবসম্পদের অভাবে উৎপাদন স্থবির হয়ে যেতে পারে। এজন্যই বলা হয়, ‘Human factors playing the leading role in any development effort. production

দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে করণীয় :

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার সাহিতে বিমোচনের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা দেশগুলোও বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে ইউএনডিপি অন্যতম। ইউএনডিপি বাংলাদেশে যে net মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে, তার মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন প্রধান।

তাছাড়া এনজিওসমূহ বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এতদসত্ত্বেও দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের চিত্র সন্তোষজনক নয়। সু এক্ষেত্রে আরো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। এ পর্যায়ে যেসব সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, তা হলো

১. শিক্ষার প্রসার

দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা সর্বাধিক। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে অধ্যাপক মার্শাল শিক্ষাকে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, Education is the basic need for the socio-economic transformation and advancement of a country. It is the prime ingredient of human resources development. বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৭ শতাংশ, বর্তমানে তা ৬৫ শতাংশে উপনীত হয়েছে। দেশে বর্তমানে গণশিক্ষা, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষ বয়স্ক শিক্ষা ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

২. বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর ও শিল্পকাধিক দেশের জন্য সব সময় উন্নত প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুঘটকের (Development Catalyst) ভূমিকা পালন করতে পারে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রবার্ট শোলো প্রমাণ করেছেন যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে পুঁজি ও শ্রমের অবদামের তুলনার প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং এর যথোপযুক্ত ব্যবহারের অবদান অনেক বেশি।

পুঁজি ও শ্রমের বর্ধিত দক্ষতার সাথে প্রযুক্তির সার্বিক প্রয়োগ না থাকলে উন্নয়নের গতি মন্থর হতে বাধা। তাই বাংলাদেশকে একবিংশ শতাব্দীর দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বরোপ করতে হবে।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

 

৩. সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি খাত

তথ্যপ্রযুক্তিই হতে পারে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির মহাসড়ক। সম্প্রতি ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফলে গোটা বিশ্ব একটা গ্রাম বা ‘Global Village -এ পরিণত হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছাকাছি এনে তাদের সৃজনশীলতায় মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বেলভিত্তিক ফাইবার অপটিক স্থাপিত হয়েছে। এবার একে সমুদ্র তলদেশের ফাইবার অপটিক ভাবের সঙ্গে দ্রুত সংযুক্ত করা গেলে মুহূর্তের মধ্যেই প্রায় সারা বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে যাবে। আর এই ভিত্তির সুবাদে বাংলাদেশ অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বমানের দেশে পরিণত হবার সাথে সাথে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সংযোজন করতে পারে নতুন অধ্যায়ের

৪. গ্রামীণ উন্নয়ন

দারিদ্র্য বিমোচনের প্রথম শর্ত হচ্ছে গ্রামীণ তথা পল্লী উন্নয়ন। আর পল্লী উন্নয়ন বা গ্রামীণ উন্নয়নে আমাদের একমাত্র উপায় হচ্ছে বর্ধিত হারে সম্পদ সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে উদ্বৃত্ত সম্পন্ন তৈরিই গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের চাবিকাঠি।

৫. গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ

গ্রামীণ অবকাঠামো তৈরিতে (সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সেচ ও ঋণ সুবিধা ছাড়াও কাজের বিনিময়ে খাদ্য সাহায্য, প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, দুর্নী উন্নয়নে খয়রাতি সাহায্য) সরাসরি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। এতে প্রবৃদ্ধির সাথে সামাও বজায় থাকে, অপরদিকে মানবসম্পদেরও গুণগত উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়।

৬. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি দরিদ্র দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হে পারে না, যদি সে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উপযোগী রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকে। রাজনৈতিক দলসমূহের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্টহীন ইস্যুতে ঘন ঘন হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ জাতীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। দারিদ্র্য বিমোচন যেহেতু একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসমূহকে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৭. বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ :

গ্রামীণ অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি অর্থনীতিতে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠা বেসরকারি খাতেরও দায়িত্ব রয়েছে। কৃষি বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বিরাট খাত। এ খাতে কর্মচাঞ্চল্য না থাকলে শিল্পপণ্য বিক্রি কমে যাবে। তাই কৃষি খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন বাড়বে।

শ্রমনির্ভর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যারা গরিব তারা নিজেদের পায়ে ভর করে জীবিকা নির্বাহের একটা সুযোগ লাভ করতে পারবে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতির বিভিন্ন অংশে বেসরকারি বিনিয়োগ অপরিহার্য।

 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে মানব সম্পদ

 

৮. নারী নীতিমালার বাস্তবায়ন

প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা Easter Boserup (1970) তার বিখ্যাত ‘Women’s Role in Economic Development’ গ্রন্থে নারীর অন্যতম শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে নির্দেশ করেন । তাই দারিদ্র্য বিমোচন ব্যতীত নারী উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী।

এ ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দারিদ্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার সাংবিধানিকভাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই জাতীয় নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের পশ্চাদমুখী ধারণা পরিহার করা উচিত।

৯. সুষ্ঠু নীতিমালা ও উন্নয়ন কৌশল

দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রাম একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা ও সার্বিক উন্নয়ন কৌশল। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এমন একটি কর্মসূচি নিতে হবে, যে কর্মসূচি হবে Action Oriented এ কর্মসূচি নতুন কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের অভাব মোচনের ক্ষমতা যোগাবে। কেননা দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনই একমাত্র উৎস নয়।

অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও অদক্ষতার সংস্কার করে সম্পদের অপব্যবহার রোধ করে অতিরিক্ত সম্পদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করতে হবে। গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর অনাবশ্যক বিধিনিষেধের অবলুপ্তি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত চালিকাশক্তি জনশক্তিকে মানবসম্প রূপান্তরের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ অতীব জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে ।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

১০. সমন্বিত জনউদ্যোগ ও জনক্রিয়া

অধ্যাপক অর্মত্য সেনের ভাষায়, সমন্বিত জনউদ্যোগ ও জনক্রিয়া, যা দরিদ্র মানুষের অবস্থানকে সুসংহত করে, দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে এরূপ গ্রামীণ জনউদ্যোগ বিকাশোপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জনউদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে নীতি ও কৌশল নির্ধারণ, পুঁজি ও প্রযুক্তির সরবরাহ, সেবা প্রদান ও উৎপাদিত পণ্য বিপণন এবং উপযুক্ত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এর ফলে দেশীয় তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে হতদরিদ্র সমাজ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে পাবে ।

উপসংহার

দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি চলমান দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নগামী পরিবর্তনশীল সমাজে এ পথ বেশ জটিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণসহ উপরোক ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment