Tag Archives: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সমস্যা ও সমাধান রচনা

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সমস্যা ও সমাধান রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সমস্যা ও সমাধান

শিল্পায়নের ইতিহাস পর্যলোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ দেশের শিল্পায়ন বা শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছে বয়ন শিল্প (Textile) বা পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। ইংল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের শিল্প বিপ্লবের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ সত্যই ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ শিল্পায়নের এই প্রথম ধাপের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে।

তৈরি পোশাক বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হিসেবে স্বীকৃত। বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক অর্থনীতির প্রধান খাত হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। সারা বিশ্বে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটা সুনামও সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে পোশাক শিল্প রপ্তানিতে অষ্টম স্থান অধিকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।

 

যেভাবে যাত্রা শুরু

স্বাধীনতার আগে ও পরে পোশাক শিল্প খাত সম্পর্কে ব্যবসায়ী মহলে তেমন কোনো উৎসাহ- উদ্দীপনা ছিল না। মূলত ১৯৭৬ সাল থেকে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। আশির দশকের গোড়ার দিকে গার্মেন্টস শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। মূলত বেসরকারি উদ্যোগেই এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ১৯৮৩ সালে মাত্র ৫০টির মতো কারখানা ছিল।

বর্তমানে তা তিন হাজারেরও অধিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থানও ১০ হাজার থেকে শুরু করে প্রায় ২২ লাখে উপনীত হয়েছে, যা উৎপাদন খাতে নিয়োজিত মোট শ্রমিকের ১৫%-এরও অধিক। পোশাক শিল্প খাত বর্তমানে দেশের অর্থনীতির বৃহৎ খাত, বৈদেশিক বাণিজ্যের সর্ববৃহৎ খাত এবং মহিলা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বৃহৎ খাত।

 

পোশাক শিল্পের বাজার

বাংলাদেশ বিশ্বের ২০টির অধিক দেশে পোশাক রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই হলো বাংলাদেশী পোশাকের সববেয়ে বড় ক্রেতা। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৬% যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্জিত হয়। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৮৪টি ক্যাটাগরি আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬টি ক্যাটাগরি উৎপাদন করে থাকে, যার মধ্যে ১৮টি ক্যাটাগরি কোটাভুক্ত এবং বাকি ১৮টি ক্যাটাগরি কোটা বহির্ভূত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারা বিশ্ব থেকে ৭৮টি ক্যাটাগরির পোশাক আমদানি করে থাকে।

 

 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প অগ্রবর্তী প্রভাব (Forward Linkage) এবং পশ্চাৎ প্রভাব (Backward Lankage)-এর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার উদ্ঘাটন করেছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 

ক. রপ্তানি বাণিজ্য

আশির দশকে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে গার্মেন্টস শিল্পের অবদান ছিল না। বর্তমানে মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫% গার্মেন্টস-এর অবদান। প্রায় ১০০টি বায়িং হাউস গার্মেন্টস সামগ্রী ক্রয় – বিক্রয়ে নিয়োজিত আছে।

 

খ. কর্মসংস্থান

যেসব অদক্ষ মহিলা শ্রমিক হতাশায় বিনিদ্র রজনী যাপন করতো তাদের সুনিপুণ হাত লেগে আছে বিশ্ব বাজারের জন্য পোশাক তৈরির কাজে। প্রায় ১৫ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে গার্মেন্টস শিল্পে যাদের অধিকাংশই মহিলা।

 

গ. উদ্যোক্তা সৃষ্টি

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে কয়েক হাজার শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা যেমন ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে দক্ষ, তেমনি তাদের রয়েছে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র অর্থনীতি এসব দক্ষ উদ্যোক্তার সুনিপুণ প্রচেষ্টায় শিল্পোন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

 

ঘ. বস্ত্রশিল্প

গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশে বিভিন্ন স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিং শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এতে দেশে বহু বস্ত্রশিল্প গড়ে উঠেছে।

 

ঙ. প্রসাধন শিল্প

গার্মেন্টস শিল্পের প্রভাবে বাংলাদেশে প্রসাধন শিল্প প্রসারিত হয়েছে। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে প্রসাধন চর্চার হার অধিক।

 

চ. পরিবর্তন ও বন্দর ব্যবহার

গার্মেন্টস শিল্পের সামগ্রী আমদানি ও রপ্তানির ফলে বন্দর থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত পরিবহন শিল্পের অগ্রগতি এবং বন্দরের অধিক ব্যবহারের ফলে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

ছ. প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার

গার্মেন্টস শিল্পের প্রভাবে প্যাকেজিং, গার্মেন্টস, জিপার, বোতাম ও বহু প্রকার প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার ঘটেছে।

 

জ. অন্যান্য অবদান

এছাড়া গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগ করে ব্যাংক লাভবান হচ্ছে, বীমা কোম্পানির প্রিমিয়ামের পরিমাণ বাড়ছে, বাংলাদেশে নতুন নতুন প্রযুক্তির আগমন ঘটেছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পরিচিতি ও অবস্থান পাকা হচ্ছে ।

আমাদের দেশের পোশাক শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। ১৯৯৪-৯৫ সাল থেকে শুরু করে এ খাত গড়ে প্রতি বছর ২১.৫৩% হারে প্রবৃদ্ধি লাভ করে চলছে। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে গার্মেন্টস খাত থেকে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪০৬৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৭৪.৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, পোশাক শিল্প তার আয় ৬০০০ থেকে ৭০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের অবদান আরো ত্বরান্বিত হবে।

 

 

পোশাক শিল্পের সাফল্যের পেছনে ভূমিকা

গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে দেশে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেরও বিকাশ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকিং ও বীমাখাত, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, নির্মাণ খাত, গবেষণা ও শিক্ষা খাত, শিপিং ও কার্গো খাত এবং স্থলবন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো

১. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল ভূমিকা;

২. সস্তা, সুশৃঙ্খল এবং কর্মমুখী শ্রমিক শ্রেণী;

৩. দেশের নিবেদিত প্রাণ উদ্যোক্তা শ্ৰেণী;

৪. উন্নত ধরনের পোশাক তৈরি;

৫. বিশ্ববাজারে সহজে প্রবেশের সুযোগ;

৬. কাঁচামাল আমদানিতে নিখিল নীতিমালা;

৭. সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহের সহযোগিতা ইত্যাদি।

 

পোশাক শিল্পের সমস্যা

বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এখনো নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সরকার পোশাক শিল্পের অনুকূলে প্রায়ই মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে যাচ্ছে। তথাপিও সুদের হার এবং অন্যানা আর্থিক নীতি এ খাতের অনুকূল নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বন্দর সুবিধাও পর্যাপ্ত নয় ।

অসুবিধাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অস্পষ্ট খরচ। ফাইল মুভমেন্ট, এলসি খোলা, মাল খালাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে নানা ধরনের অস্পষ্ট ব্যয় ঘটছে যা এ শিল্পকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঁচামাল ঢাকার কারখানায় পৌঁছাতে যেখানে সাতদিন সময় লাগার কথা সেখানে বর্তমানে প্রায় একুশ দিন লেগে যায়।

বাংলাদেশ যদিও মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে, তারপরও প্রতিযোগী অন্যান্য দেশ আরো বেশি হারে মুদ্রা অবমূল্যায়ন করে চলেছে। ফলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।

 

 

আরও কতিপয় সমস্যা

১. পশ্চাৎশিল্প থেকে অপর্যাপ্ত কাপড় সরবরাহ; ২ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি; ৩. ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা; ৪. কোটা আরোহণ: ৫ বৈদেশিক বিনিয়োগের স্বল্পতা; ৬. শ্রমিক অসন্তোষ; ৭. অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ: ৮ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা; ৯. প্রশাসনিক জটিলতা; ১০. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা; ১১. পরিবহন ও বন্দর সমস্যা: ১২. কাঁচামালের স্বল্পতা; ১৩. দুর্বল শ্রমনীতি: ১৪. স্বল্পমাত্রার ঋণপত্র; ১৫ দক্ষ শ্রমিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব।

 

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সুবিধা

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের সদস্য হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে Multi Fibre Arrangement (MFA) এবং Generalized System of Preferences (GSP) সুবিধা ভোগ করছে। কিন্তু ২০০৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) চুক্তি কার্যকর হয়। এর ফলে কোটা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটে এবং প্রত্যেক দেশই তাদের বাজারকে পূর্ণ মাত্রায় মুক্ত (Liberalize) করতে বাধ্য হয়। ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে যে সকল বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তার বিলুপ্তি ঘটবে এবং বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, যা হবে বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

 

গার্মেন্টস শিল্প উন্নয়নে কতিপয় সুপারিশ

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। তাই এ শিল্পকে উত্তরোত্তর উন্নতি ও বিকশিত করতে হলে এর কতিপয় সমস্যার আশু সমাধান আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরা হলো

১. উৎপাদন ও বাজার বহুমুখীকরণ;

২. বিকল্প আর্থিক সুবিধা প্রদান ব্যবস্থা

৩. গার্মেন্টস পল্লী নির্মাণ;

৪. শুন্য পদ্ধতির কম্পিউটারাইজেশন;

৫ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন;

৬. ব্যাংকিং খাতের সংস্কার সাধন;

৭. বন্দর সুবিধা ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরকরণ;

৮ গার্মেন্টসের পশ্চাৎশিল্পের উন্নয়ন সাধন;

৯. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা;

১০ কাপড়সহ পোশাক শিল্পের মানবীয় উপকরণ Borded ware house এর আওতায় আনা;

১১ বছর বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করা;

১২ সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়ন করা;

১৩. শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ;

১৪. মূল্য সংযোজন কর হ্রাস করা;

১৫ দ্রুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান;

১৬. রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে EPZ-এর মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা;

১৭. কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান করা;

১৮ উদ্যোক্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

 

 

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে চলছে। গার্মেন্টস সামগ্রীর ওপর কর আরোপের ক্ষেত্রে সরকার উদার নীতি অনুসরণ করে চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এ শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।

পোশাক রপ্তানিতে অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রতিরোধের জন্য সরকার বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারি করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে কয়েকশ’ কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়। তাই এ শিল্পের কাঁচামালের জন্য বিদেশ নির্ভরতা শূন্যের কোটায় নামিয়ে না আনা গেলে ২০০৫ সাল পরবর্তী সময়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে বলে আশক্ষা করা হচ্ছে।

এ সম্ভাব্য বিপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষজ্ঞরা গার্মেন্টস শিল্পের সহায়ক পশ্চাৎসংযোগ শিল্প গড়ে তুলতে বলেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। নীতি নির্ধারকরা পাশ্চাৎসংযোগ শিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন টেক্সটাইল, এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং।

প্যাকেজ শিল্পে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। এক্সেসরিজ সেক্টরেও যেসব শিল্প আছে সেসবের কিছু কিছু বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু মূল খাত টেক্সটাইলে আমাদের দেশ খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। বিগত কয়েক বছরে মাত্র গুটিকয়েক উদ্যোক্তা টেক্সটাইল মিল স্থাপন করেছেন।

সুতরাং ২০০৫ সাল পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য দেশে পর্যাপ্ত ও উন্নত পশ্চাৎসংযোগ শিল্প গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তার সাথে আমাদের বস্ত্রশিল্পের সচলতা ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন সম্পন্ন করতে হবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের পোশাক উৎপাদনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। শ্রমিকের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আরো নতুন নতুন পোশাক শিল্প তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এসবই করতে হবে আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে।

এক্ষেত্রে আন্তরিকতা থাকলে ও সঠিক দিক-নির্দেশনা পেলে সুফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আমাদের রয়েছে তা হলো সস্তা শ্রম। সব মিলিয়ে এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পকে ২০০৫ সাল পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চমৎকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। রপ্তানি খাতে সর্বোচ্চ আসনে রয়েছে পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে শিশু শ্রমিকের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান হারকিন্স ‘হারকিল বিল’ নামে একটি বিল মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করেন।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দারুণ হুমকির মুখে পড়ে। পরবর্তীকালে UNICEF ও ILO এবং BGMEA এর মধ্যে শিশু শ্রমিকদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। BRAC এর সহযোগিতায় বর্তমানে গার্মেন্টসের শিশু শ্রমিকদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপাতত এ সমস্যার একটা সুরাহা হয়েছে।

২০০৫ সালের পর কোটামুক্ত মার্কিন বাজারে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়েও চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩০% কোটা বৃদ্ধি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটা বিলুপ্তির চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০০৫ সালের পরও বাংলাদেশ যাতে বিশেষ সুবিধায় অধিক শুল্কমুক্ত মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে পারে সেজন্যও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশসমূহকে ২০০৫ সালের পরও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান সংক্রান্ত একটি বিল সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস পাস করা হয়েছে। বাংলাদেশও এর আওতায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার সম্প্রতি ইইউ স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশকে সে দেশের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে আমদানি মূল্য কম হবে এবং LDC-এর পণ্য অন্যান্য দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।

আশা করা যায়, ইইউ- 5-এর মতো যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য উন্নত দেশও একই রকম ঘোষণা প্রদান করবে। কানাডা ও একই ঘোষণা দিয়েছে জাল GSP সার্টিফিকেট নিয়ে ইউরোপের বাজারে ভয়াবহ কেলেংকারি সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের জোর কূটনৈতিক তৎপরতায় সে সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্ক দেশসমূহের জন্য ‘সার্ক কিমুইলেশন’ নামে একটি বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছে । GSP সুবিধা পাওয়ার জন্য ইতিপূর্বে তিন স্তর পর্যন্ত দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহারের নিয়ম ছিল। বাংলাদেশ এটা দুই স্তর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্ক দেশসমূহ থেকে এ তিন স্তরের কাঁচামাল ব্যবহার কালে একই ধরনের GSP সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

 

উপসংহার

ব্রিটেনে বস্ত্রশিল্পকে কেন্দ্র করেই শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। বাংলাদেশেরও বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলা যায়। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রথমেই দ্রব্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং অধিক মূল্যের বাজারে প্রবেশ করতে হবে। IETRO-র সহযোগিতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ জাপানের বাজানে প্রবেশেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক শ্রেণীর কাজের গুণগত মান ঠিকমত ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ ২০০৫ সাল পরবর্তী প্রতিযোগিতায় সহজেই টিকে থাকতে পারবে। তবে তার জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই ‘Garment Valley-তে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়।

আরও দেখুনঃ