Site icon Bangladesh Gurukul [ বাংলাদেশ গুরুকুল ] GDCN

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা রচনা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা – রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করা নিরুৎসাহ দেই। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

Table of Contents

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা

 

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অাযাত্রায় আন্তর্জাতিক স্রোতধারায় সম্পৃক্ত হবার মধ্য দিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতামুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বস্তুত ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশ্বায়নের (Globalisation) কারণে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় একটি অভিন্ন অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যাসমূহ যথাযথভাবে চিহ্নিত করা তা সমাধানের সঠিক দিকনির্দেশনা উদ্ভাবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।

 

 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন

উন্নয়নের সংজ্ঞা ও সূচক বহুমাত্রিক এবং দ্ব্যর্থবোধক। এ সম্বন্ধে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ। ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা ক্রমপরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একক বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।

সাধারণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। কেউ কেউ আর্থ- সামাজিক অবকাঠামোগত রূপান্তরকে উন্নয়ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন— সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদে রূপান্তর ।

প্রখ্যাত উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ইয়ং (Young, ১৯৮৯)-এর মতে, উন্নয়ন হলো কোনো ব্যক্তি বা সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির একটি জটিল প্রক্রিয়া । অগ্রগতি এই অর্থে যে, এর ফলে ব্যক্তি ও সমাজের জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ হয় এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ ঘটে।

অতি সম্প্রতি উন্নয়ন কথাটির সঙ্গে ‘টেকসই’ (Sustainable) শব্দটি যুক্ত হয়েছে । এর অর্থ হলো বৈষম্যহীন ও খুঁতবিহীন ক্রম উন্নয়ন এবং পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থার সর্বনিম্ন ক্ষতি স্বীকার করে উন্নয়ন । টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষা ও নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রায় দেড় দশক ‘উন্নয়ন তত্ত্ব চর্চা করার পর উপলব্ধি করলেন যে, শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কোনো দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। কেননা মাথাপিছু আয় বাড়লেও ঐ বাড়তি আয়ে জনসাধারণের একটি বড় অংশের কোনো অধিকার নাও থাকতে পারে।

তাঁর মতে, উন্নয়ন মানে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, যে মান তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা আয়ু এবং আরো অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আয় বৃদ্ধি সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি উপায় মাত্র। তাঁর মতে, আয় বৃদ্ধি বা উৎপাদনের ওপর মানুষের অধিকার বা এনটাইটেলমেন্টের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

অমর্ত্য সেন উন্নয়নের আবশ্যিক পাঁচটি শর্তের কথা বলেছেন ১. সামাজিক, ২. রাজনৈতিক, বাজার ব্যবস্থা, ৪. পদ্ধতিগত সুযোগ এবং ৫ অসহায় শ্রেণীর সুরক্ষার স্বাধীনতা। এ পাঁচটি উপাদানের কোনো একটির অনুপস্থিতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিতর্কিত বা বাধাগ্রস্ত করে তোলে।

অর্থাৎ কোনো একটি রাষ্ট্র এ পাঁচটি উপাদানের ভারসাম্যপূর্ণ ও সমন্বিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও বাজার ব্যবস্থার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির বদলে সমন্বয় করতে হবে। অমর্ত্য সেনের মতে, কেবলমাত্র উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধিনির্ভর অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্থহীন উন্নয়নে পর্যবসিত হতে বাধ্য, যদি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষ তার সুফল না পায়।

 

 

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমস্যাসমূহ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সমস্যাসমূহ নিম্নরূপ:

 

১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা

বাংলাদেশ সফর শেষে একজন বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিতের অবকাঠামো দরকার। ভিত না থাকলে যেমন ইমারত তোলা যায় না, তেমনি অর্থনীতি দাঁড়াবার জন্য অবকাঠামো দরকার। ট্যাক্স বা শুল্ক রেয়াত, মুদ্রা বিনিময়ের সুবিধা এবং অন্যান্য সুবিধা যাই দেয়া হোক, অবকাঠামো ঠিক না থাকলে উদ্যোক্তাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। এর ফলে অর্থনীতির গতিশীলতা ব্যাহত হয়।

 

২. ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য

ঋণখেলাপিরা আমাদের অর্থনীতির প্রধান শত্রু। খেলাপি ঋণ আমাদের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার পথে প্রধান বাধা। ঋণগ্রহীতারা নানা প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে বিনিয়োগের নামে শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ না করে অন্য অনুৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করে। এই খেলাপি ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়মিত পরিশোধ হলে উক্ত টাকা পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি লাভবান হতো। কিন্তু ঋণখেলাপি হবার ফলে দেশ সমৃদ্ধির সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

৩. বৈদেশিক সাহায্য ও উন্নয়ন

বৈদেশিক সাহায্য আদৌ জাতীয় উন্নয়নে কোনো অবদান রাখতে পারে কিনা- এ নিয়ে খোদ দাতা দেশগুলোতেও দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। দাতা দেশগুলোতেও এ কথা শোনা যাচ্ছে যে, বৈদেশিক সাহায্য তৃতীয় বিশ্বের কোনো উন্নয়নে আসছে না।

প্রসঙ্গক্রমে জার্মান পার্লামেন্টের একজন সদস্যা বিয়েতে এরলারের নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। জার্মান সাহায্য বাংলাদেশে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তাতে বাংলাদেশের জনগণ আদৌ উপকৃত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য মধ্য আশির দশকে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে তিনি তার সংসদ সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যে সাহায্য দেয়া হয়, তাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো উপকার হচ্ছে না।

বরং সাহায্যের একটা বড় অংশই বিভিন্ন খাতে আবার জার্মানিতে ফিরে আসছে। পরে তিনি বাংলাদেশে জার্মান সাহায্য সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে একটি বই লিখেন, যার নাম ছিল Toedliche Hille অর্থাৎ “সাহায্য যা মৃত্যুর সমতুল্য। মিসেস এরলার ডক বইয়ে দেখিয়েছিলেন, কিভাবে সাহায্য অপচয় হচ্ছে, কিভাবে তথাকথিত কনসালটেন্সির নাম করে ঋণের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে জার্মান ফার্মের পকেটে। ব্রিগেতে এরলারের বইটি হচ্ছে আমাদের কাছে একটি জ্বলন্ত উদাহরণ যে, বৈদেশিক সাহায্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে।

 

৪ বিদেশী পণ্যের আধিপত্য

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজার বিদেশী পণ্যে সয়লাব। এ ঘটনা দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের হতাশ করেছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যখন কোনো দেশে বিনিয়োগ করতে আসেন, তখন স্থানীয় বাজারের সম্ভাবনা যাচাই করেন। সুতরাং বাংলাদেশের বাজারে বিদেশী পণ্যের আধিপত্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে মারাত্মক অন্তরায়।

 

৫. কম সঞ্চয়

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ১৬% থেকে ২০% জাতীয় সঞ্চয়ের প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে বর্তমান জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৮%। সুতরাং জাতীয় সঞ্চয়ের এই নিম্নমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা।

 

 

৬. আমদানি নির্ভরতা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে রপ্তানির তুলনায় আমদানির আধিক্যের কারণে বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ২০০৪-০৫ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তী প্রতিটি আর্থিক বছরে এ ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আসছে । এ আমদানি নির্ভরতা তথা বাণিজ্যিক ঘাটতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

 

৭. প্রশাসনিক জটিলতা

বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের চালিকাশক্তি রাজনৈতিক প্রকৃতির হলেও মূল কাজকর্ম পরিচালনা করে আমলারা। সংসদে মন্ত্রীদের যেসব প্রশ্ন করা হয় তার উত্তরও লিখে দেন আমলারা। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি, তাও প্রণয়ন করেন সম্পূর্ণরূপে আমলারা UNDP রিপোর্ট ‘৯৫-তে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক কর্তৃত্বের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি নয়। গতিশীল রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বের অভাব বাংলাদেশে শাসনতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করেছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হচ্ছে না এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

 

৮. প্রতিকূল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়, যা পুঁজি বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায়। জুন ‘৯৭-এ একটি বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী দল বিনিয়োগের পরিবেশ দেখার জন্য বাংলাদেশ সফরে আসেন। কিন্তু জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছলে কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের সাথে অশালীন আচরণ করে। ফলে ঐ বিনিয়োগকারী দল বিমানবন্দর থেকেই তাদের দেশে ফিরে যায়, যা আমাদের জন্য শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনকও বটে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ অবনতি বাংলাদেশের অর্থনীতির পথে হুমকিস্বরূপ।

 

৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা

বলা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি ও বিরোধী দলসমূহের নিম্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিগত সরকারের মেয়াদ তিন বছর যেতে না যেতেই বিরোধী দলসমূহের সংসদের বাইরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুন অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।

লাগাতার হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে অচল করে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও অনুরূপ। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্টহীন ইস্যুতে বিরোধী দলসমূহের একটানা সংসদ বর্জন সংসদীয় রীতি বিরোধী এবং দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

 

 

১০. দুর্নীতি

অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি সফল করতে স্বচ্ছ জনাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে এর উপস্থিতি অতি নগণ্য। নভেম্বর ১৯৯৮-এ অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় বিভাগের অর্থনীতিবিদ জন উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দুর্নীতির স্তর এক ধাপ কমাতে পারলে বিনিয়োগ বাড়বে GDP-র ৪ শতাংশ এবং GDP-র প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাবে ০.৫ শতাংশ।

এতেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এদেশে দুর্নীতির শিকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। Transperancy International-এর প্রতিবেদনেও এর ট্রাস্টি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল অন্তরায় হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন।

 

১১. নীতি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতি

নীতি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরগতির কারণেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিশ্বব্যাংকের সাতজন নির্বাহী পরিচালক জানুয়ারি ১৯৯৭-এ বাংলাদেশ সফর শেষে এক রিপোর্ট তৈরি করেন। রিপোর্টে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে ধীরগতিতে গভীর উদ্বো প্রকাশ করা হয় এবং এ ধীরগতিকে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা

 

 

১. বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা

‘বাংলাদেশ ২০২০ এ লং রান পারস্পেকটিভ স্টাডি’ শীর্ষক সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের এক দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বিনিময় হার অনুযায়ী স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। উক্ত রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ পর্যায়ে বৈদিশিক বিনিয়োগ আহরণের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই সুষ্ঠু অর্থনৈতিক নীতি ও রেগুলেটরি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যদি তা করা হয়, তবে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আলোচনার সুবিধার্থে বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়টিকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচন করা হলো:

 

ক. তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান আনিসুল হক চৌধুরী বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। তাদের মতে, এটা বিপুল সম্ভাবনাময়। এদিকে গত দু’বছরে বাংলাদেশের Energy Sector-এ মার্কিন কোম্পানিগুলোর সরাসরি বিনিয়োগ প্রায় শূন্য থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় এবং অতিরিক্ত হিসাবে আরো কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অপেক্ষায় আছে। ‘বাংলাদেশ ২০২০ এ লং রান পারস্পেকটিভ স্টাডি’ শীর্ষক রিপোর্টটিতেও বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ আগামী ৪ বছরে ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হতে সমর্থন যোগায়।

 

খ. বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ অর্জনকারী শিল্পের মধ্যে বস্ত্রশিল্প অন্যতম। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের বিপুল চাহিদা থাকায় দেশী-বিদেশী প্রচুর বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প পুঁজি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হলেও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে এ খাতের অবদান বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উত্তরোত্তর গতিতে বৃদ্ধি পেতে সক্ষম হবে।

 

গ. ইপিজেডে বিনিয়োগের সম্ভাবনা :

বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম সম্ভাবনা হলো ইপিজেড এলাকায় বিনিয়োগ। ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত চাহিদা মেটাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইপিজেড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে আরো চারটি নতুন ইপিজেড নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ভীরে ইপিজেড নির্মাণ করছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, বাংলাদেশ এখন শিল্পযুগে পদার্পণ করেছে এবং দেশে দ্রুত শিল্পায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

ঘ. কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সফরকালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফিদেল রামোস বলেছিলেন, ‘কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। উচ্চ ফলনশীল ধানবীজের ব্যবহার এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে তেলবীজ, আখ, তুলা, আলু ও গম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে নাটকীয়ভাবে। তাই বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের যে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই।

 

২. জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অসীম সম্ভাবনাময় বাজার। দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের বিপুল চাহিদা। রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা অনুযায়ী নার্স ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ পাঠাতে পারলে বাংলাদেশ বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। জাপান, জার্মানির মতো তাইওয়ানও বাংলাদেশের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় বাজার।

উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ সহজেই তাইওয়ানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসে। জার্মানিসহ ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশসমূহ হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ নেয়ার জন্য। মালির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় সেখানে জমি আবাদের জন্য বাংলাদেশ থেকে কৃষক নেয়ার ব্যাপার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগী হলে দেশের বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করে বিদেশে রপ্তানির দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারে।

 

 

৩. সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ :

প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে যত পরিপূর্ণ সে দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তত সমৃদ্ধশালী। বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কালো, চুনাপাথর, চীনামাটি, কঠিন শিলা, খনিজ বালি, কাঁচা বালি ও খনিজ তৈল বেশ সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, তাপমাত্রার বিপর্যয় রোধ ও মানবিক চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বনজ সম্পদের গুরুত্বও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

৪. মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে জাতীয় আরো ৭.২% এবং রপ্তানি আয়ের প্রায় ১৪.৫% আসে মত্স্য সম্পদ থেকে মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ি সম্পদ সবচেয়ে আত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে মোট ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ির মধ্যে প্রধানত দুটি প্রজাতির চিংড়ি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী হিসেবে পরিচিত।

এগুলো হচ্ছে মিঠা পানির গলদা এবং লোনা পানির বাগদা। বিশ্ব বাজারে গলনা চিড়ি Giant fress water prawn এবং বাগদা চিংড়ি Giant tiger prawn নামে পরিচিত। তবে বাংলাদেশে যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদিত হয় তা সঠিক কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই হচ্ছে যথা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য সম্পদ সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে পারবে।

 

৫. সামুদ্রিক সম্পদের সম্ভাবনা :

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে ৭১১ কি.মি. উপকূল রেখা রয়েছে। উপকূল ভাগ থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের ৩২২ কি.মি. পর্যন্ত সামুদ্রিক সম্পদে পরিপূর্ণ। মৎস্য ছাড়াও এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুক্তা, প্রবাল, নুড়ি পাথর, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি। এছাড়া উপকূলে রয়েছে জিরকন, মোনাজাইট প্রভৃতি খনিজ সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব সম্পদের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা, যে কারণে এসব সামুদ্রিক সম্পদকে ‘কালো সোনা’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

 

৬. পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। গত ২৩ মার্চ, ২০০০ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মহাসচিব ফ্রান্সিসকো ফ্রাংগিউলি বাংলাদেশ সফরকালে বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পে বিপুল সম্ভাবনাময় অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা অপরিসীম। কারণ পর্যটন শিল্পকে বিকাশের জন্য উন্নত প্রযুক্তি বা উচ্চ মূলধনের প্রয়োজন নেই। বরং দেশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট সুবিধাদি দ্বারাই এ শিল্পকে উন্নততর করে তোলা যায়, যা দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, রপ্তানি বৃদ্ধি ও জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। আর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংযোজিত হতে পারে এক নতুন ধারা।

 

৭. প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর ও শিল্পকাঙ্ক্ষিত দেশের জন্য সব সময় উন্নত প্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক রবার্ট শোলো প্রমাণ করেছেন যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে পুঁজি ও শ্রমের অবদানের তুলনায় প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং এর যথোপযুক্ত ব্যবহারের অবদান অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে।

 

৮ হস্তশিল্পের সম্ভাবনা

কারুশিল্পের প্রসারের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাক্রাফট-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় কারুপণ্য প্রদর্শনী ২০০৩-এ বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকার সমিতির সভাপতি এস. ইউ. হায়দার জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে হস্তশিল্পের বিশাল চাহিদা রয়েছে। তাই সরকারের যথাযথ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে হস্তশিল্পের ভূমিকাকে আরো সম্প্রসারিত করতে পারে।

 

৯. তথ্যপ্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন

বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো শিল্প বা প্রযুক্তি নেই, যা কোনো না কোনোভাবে কম্পিউটারের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বর্তমানে রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কম্পিউটার সফটওয়্যার। কম্পিউটার সফটওয়্যার রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কম্পিউটার সফটওয়্যার খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে জাতীয় রাজস্ব বাজেটে কম্পিউটারকে ‘শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত পণ্য’ ঘোষণা করেছেন। তাই আশা করা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ দ্বারা বাংলাদেশের বিশাল মানবসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে ।

 

১০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাব দেশের রাজস্ব আদায়, কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন এবং সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে পড়ে। তাই একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সমাপ্তি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক বিশেষ আশীর্বাদ। পাকশী সেতু, রূপসা সেতু ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার

সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেমন রয়েছে অসংখ্য সমস্যা, তেমনি রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তবে বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি প্রায় একটি অভিন্ন অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে।

তাই বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় কোনো দেশের পক্ষেই এককভাবে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয় । এর জন্য দরকার আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার। পাশাপাশি রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলকে শুধু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ইস্যুতে ঐকমত্যভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে ।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version