বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা রচনা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা রচনার একটি নমুনা তৈরি করবো আজ। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। কোনো রাষ্ট্র বা দেশের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের কথা চিন্তাও করা যায় না। এজন্যই অধ্যাপক গার্নার জনসংখ্যাকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

Table of Contents

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

দক্ষ ও কুশলী জনসংখ্যা হলো রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে স্বল্পকালে দ্রব্য ভোগের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু সে হারে উৎপাদন বাড়বে না। কারণ বর্ধিত জনসংখ্যার বেশির ভাগ থাকে উৎপাদনে অক্ষম। সুতরাং উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়া কোনো কারণে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তা জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ব্যাহত করে এবং দেশে হাজারো সমস্যা সৃষ্টি করে ।

জনসংখ্যা এবং প্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে সামঞ্জসাহীনতা দেখা দিলে অর্থাৎ সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে অথবা সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কমজনিত কারণে সম্পদ অব্যবহৃত থাকলে তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। জনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকলেও সমস্যা, আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হলেও সমস্যা। তাই বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা সমস্যা।

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জনসংখ্যা সমস্যা নিরসনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। বাংলাদেশে জনসংখ্যা। সমস্যার তীব্রতা অনুভূত হয় ১৯৫৩ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার সমাধান পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি বিষয়।

 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি:

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি হচ্ছে অধিক জনসংখ্যা’ বা ‘জনসংখ্যা স্ফীতি’ (Over Population)। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রাপ্ত এবং সম্ভাব্য সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। যখন কোনো দেশের প্রাপ্ত সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হয় এবং তার প্রভাবে সে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় তখন তাকে জনসংখ্যাস্ফীতি বলা হয়।

আর যখন জনসংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়ে সামগ্রিক আর্থ- সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন তাকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ (Population Explosion) বলা হয়। বাংলাদেশে অত্যধিক জনসংখ্যার কারণে সরকার এ সমস্যাকে ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ’ নামে মাধ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সঠিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করার জন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করা যেতে পারে।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা পরিস্থিতি:

বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম এবং এশিয়ার পঞ্চম জনবহুল দেশ। ১৯৯১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী এ দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৪ লাখ। এ সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল ২.১৭ ভাগ। ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৯২ লাখ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল ১.৪৭ ভাগ। জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৯৯১ সালে ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৫৫ জন। ২০০১ সালে তা শতকরা ২৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৩৪ জনে পৌঁছেছে। নিচে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতির বিশেষ দিকগুলো উল্লেখ করা হলো

 

ক. বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি (১৯০১-২০০১)

১৬৫০ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি। দীর্ঘ ২১১ বছর পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১৮৬১ সালে ২ কোটিতে উপনীত হয়। পরবর্তী ৪০ বছরে এ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটিতে পৌঁছে। ১৯২১ সালের পর এ দেশের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিভিন্ন আদমশুমারির আলোকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি নিচের সারণীতে দেখানো হলো

বাংলাদেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির গতি (১৯০১-২০০১)

আদমশুমারির সাল

মোট জনসংখ্যা

মোট বৃদ্ধি

বৃদ্ধির শতকরা হার

১ মার্চ, ১৯০১২,৮৯,২৭,৭৮৬

১০ মার্চ, ১৯১১৩,১৫,৫৫,০৫৬২৬.২৭,২৭০

০.৯৪

১৮ মার্চ, ১৯২১৩,৩২,৫৪,০৯৬১৬,৯৯,০৪০

০.৬০

২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১৩,৫৬,০৪, ১৭০২৩,৫০,০৭৪

০.৭৪

১ মার্চ, ১৯৪১৪,১৯,৯৭,২৯৭৬৩,৯৩,১২৭

১.৭০

১ মার্চ, ১৯৪১৪,৪১,৬৫, ৭৪০২১,৬৮,৪৪৩

০.৫০

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১৫,৫২,২২,৬৬৩১,১০,৫৬,৯২৩

২.২৬

১ মার্চ, ১৯৭৪৭,৬৩,৯৮,০০০২,১১,৭৫,৩৩৭

২.৪৮

৫ মার্চ, ১৯৮১৮,৯৯,১২,০০০২,৩৫,১৪,০০০

২.৩৫

১১ মার্চ, ১৯৯১১১,১৪,৫৫,১৮৫

২.১৭

২২ জানুয়ারি, ২০০১১২,৯২,৪৭,২৩৩১,৬৮,৪৬,২৫৪

১.৪৭

 

যে এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ গঠিত সে এলাকায় গত কয়েক শতকের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার তালিকা নিচে দেয়া হলো। জনসংখ্যাবিদদের সূত্র অনুযায়ী কোনো দেশের লোকসংখ্যা শতকরা ১ ভাগ বৃদ্ধি পেলে ৭০ বছরে সে দেশের লোকসংখ্যা দ্বিগুণ হয়।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

খ, জনখ্যোর ঘনত্ব

জনসংখ্যার ঘনত্ব বলতে একটি দেশের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে কতজন লোক বাস করে, তাকে বোঝায়। নিচের সারণিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিভিন্ন আদমশুমারির আলোকে দেখানো হলো

জনসংখ্যার ঘনত্ব

সনঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিলোমিটার)
১৯৬১৩৫৬ জন
১৯৭৪৪৯৭ জন
১৯৮১৬০৫ জন
১৯৯১৭৫৫ জন
১৯৯৬৮৩২ জন
২০০১৮৩৪ জন

 

 গ. বয়স অনুসারে জনসংখ্যার বণ্টন

যে কোনো দেশের জনসংখ্যা বয়সভিত্তিক কটন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ এতে দেশের মোট শ্রমশক্তি এবং নির্ভরশীলতার হার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ অর্থনৈতিক দিক থেকে নির্ভরশীল। জাতিসংঘ ১৫-৬০ বছর বয়সের জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম ঘোষণা করেছে। এই হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নির্ভরশীল। বাস্তবে বেকারত্ব, অর্ধবেকারত্ব, বিকলাঙ্গতা প্রভৃতি কারণে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আরো বেশি। আর এর ফলে তা দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

 

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে জনসংখ্যাস্ফীতির প্রভাব:

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। বাংলাদেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে জনসংখ্যাধিক্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না।

এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রাসহ অন্যান্য সমস্যা যেমন বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি, নিম্ন মাথাপিছু আয়, নিম্ন জীবনমান, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধপ্রবণতা, দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেন, মাদকাসক্তি, নৈতিক অধঃপতন প্রভৃতি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এ সকল সমস্যার মূলে রয়েছে জনসংখ্যাস্ফীতির শক্তিশালী প্রভাব। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনসংখ্যাস্ফীতির যে ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান তা নিচে আলোচনা করা হলো

১. খাদ্য ঘাটতি

বাংলাদেশে বর্তমানে খাদ্যসমস্যা অত্যন্ত প্রকট এবং এর প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদনে অসামঞ্জস্য। ১৯৬১ সাল থেকে বাংলাদেশে ক্রমাগত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও খাদ্য ঘাটতির ভয়াবহতা ক্রামন্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় খাদ্য উৎপাদন অধিক হলেও খাদ্য সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

১৯৬০ সালে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টন আর খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০০০-২০০১ সালে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনসংখ্যা অধিক হওয়ার ফলে এ সময়ে খাদ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫.৫৪ লাখ মেট্রিক টন। এর জন্য একমাত্র জনসংখ্যাস্ফীতিই দায়ী। কারণ এ দেশের জনসংখ্যা যদি কম থাকতো তবে উৎপাদিত খাদ্যশসা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার পর রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এতে মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

২. নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি

বাংলাদেশে দিন দিন জনসংখ্যা যতো বাড়ছে, নির্ভরশীল জনসংখ্যার হারও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের দেশে কর্মী জনসংখ্যার তুলনায় নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পরিবারেই মারাত্মক আর্থিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

৩. বেকারত্ব বৃদ্ধি 

সমস্যা জর্জরিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা বেকারত্ব। আর অতিরিক্ত জনসংখ্যাই আমাদের বেকার সমস্যার অন্যতম প্রধান প্রধান কারণ। জনসংখ্যা অনুপাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না বলে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে । স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৫-০৬ পর্যন্ত সময়ে দেশে শ্রমশক্তি তথা কর্মক্ষম জনশক্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়নি ।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

৪. শিক্ষার অভাব

শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের সংবিধান মতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য শিক্ষার সুযোগ সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য সর্বস্তরে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশের সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় দেশে নিরক্ষর লোকের মোট সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত শিশু ও সাক্ষরতা জরিপের তথ্যানুযায়ী পাঁচ বছরের ওপরে জনসংখ্যার শতকরা ৪৫১ ভাগ এবং সাত বছরের ওপরে জনসংখ্যার ৪৭.৩ ভাগ মাত্র শিক্ষিত।

২০০৩ সালে সরকারি হিসেবে বয়স্ক সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের ৩৫ ভাগ লোক এখনো নিরক্ষর। আর এজন্য মূলত দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাই দায়ী ।

৫ বস্ত্র ঘাটতি

বস্ত্র মানুষের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে আমাদের দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বস্ত্রের ঘাটতি হচ্ছে। বস্ত্র খাতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আগের চেয়ে অনেক বেশি বস্ত্র উৎপাদন করেও জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৪০ কোটি মিটার বস্ত্রের প্রয়োজন। অথচ বস্ত্র উৎপাদন এর চেয়ে অনেক কম। তাছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ নবাগতদের জন্য বাড়তি প্রায় ৩ কোটি মিটার বস্ত্রের প্রয়োজন। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি করেও বস্ত্র ঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ জনসংখ্যা কম থাকলে বর্তমান উৎপাদন দিয়েই দেশের জনগণের বস্ত্র চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হতো।

৬. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সমস্যা বৃদ্ধি

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা। অথচ বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫০ জন লোক স্বাস্থ্যহীনতা এবং শতকরা ৮০টি শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার। এছাড়া উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ প্রসূতি ও মায়ের মৃত্যু হয় ৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

৭. বাসস্থান সমস্যা

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে বাসস্থান ও বস্তি সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । গ্রাম ও শহর এলাকায় প্রতি বছর ব্যাপকহারে গৃহ নির্মাণ করেও এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লক্ষ লক্ষ ভাসমান জনগোষ্ঠী খোলা আকাশের নিচে এবং বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু ঢাকা শহরেই শতকরা ৩৫ ভাগ লোক বস্তিতে বাস করে।

৮. ভূমির ওপর চাপ :

জনসংখ্যা বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে ভূমির ওপর। প্রতি বছর বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা প্রভৃতি স্থাপন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে ভূমির ভাগ-বাটোয়ারা হবার কারণে বিপুল পরিমাণ আবাদি ভূমি অনাবাদি ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এতে চাষাবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে কৃষিশুমারির তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু চাষাবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ মাত্র ০.১৫ একর । জনসংখ্যার চাপে এর পরিমাণ দিন দিন আরো হ্রাস পাচ্ছে।

৯. মূলধন গঠন ও শিল্পায়ন ব্যাহত

বর্ধিত জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য বার্ষিক বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুৎপাদনমূলক খাতে ব্যয় করতে হয়, যার প্রভাবে আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে সঞ্চয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মূলধন গঠন ব্যাহত হয়ে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সুতরাং জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মূলধন গঠন ও শিল্পায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক ।

১০. পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা

বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাসগৃহ নির্মাণ, রাস্তাঘাট ও পুকুর খনন প্রভৃতি কারণে গাছপালা ও বনাঞ্চল ক্রমন্বয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। খাদ্যসহ অন্যান্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তদুপরি জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পয়ঃপ্রণালী, শৌচাগার ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং রোগজীবাণু বিস্তার লাভ করছে।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

১১. নিম্ন মাথাপিছু আয়

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশের জনগণের আয় কমে গিয়ে নিম্ন মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু গড় আয় অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় খুবই কম । আর এজন্য জনসংখ্যাস্ফীতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।

১২. যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর বৃদ্ধি

জনসংখ্যাস্ফীতির ফলে আমাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস, ট্রাক, নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ, রেল প্রভৃতি যানবাহনে যাতায়াত আজ চরম ঝুঁকিপূর্ণ। জনসংখ্যার তুলনায় এসব যানবাহনের সংখ্যা সীমিত থাকার কারণে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিচ্ছে।

১৩, দুর্নীতি ও অপরাধ বৃদ্ধি

বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় উৎপাদিত ও সরবরাহকৃত দ্রব্যসামগ্রীর পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় কম থাকায় অনেকের পক্ষে তাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে দুর্নীতি অপরাধের মাধ্যমে অবৈধভাবে তাদের মানবিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে। আর এর প্রভাবে সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।

১৪. জনসংখ্যার গুণগত ভারসাম্যহীনতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দরিদ্র ও নিম্নশ্রেণীর মধ্যে অধিক দরিদ্র শ্রেণীর লোকজন তাদের সন্তান-সন্ততিদের লেখাপড়াসহ অনান্য মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণে সক্ষম হচ্ছে না। এর ফলে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব যথাযথভাবে গড়ে উঠছে না। সমাজে এদের সংখ্যাই অধিক। অন্যদিকে, শিক্ষিত ও সম্পদশালী শ্রেণীর মধ্যে সন্তান জন্মদানের হার কম। ফলে তারা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু সমাজে এদের সংখ্যা অত্যন্ত কম।

সুতরাং বলা যায়, এ দেশে দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উচ্চ শ্রেণীর মধ্যে জনসংখ্যা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে অচিরেই ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে, যা সামাজিক সংহতি ও শৃঙ্খলার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় সমাজ জীবনে অশান্তি, হতাশা, ব্যর্থতা ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

 

বাংলাদেশে জনসংখ্যাস্ফীতির কারণ

সন্তান জন্মদান ও বংশ বৃদ্ধি মানুষের সহজাত জৈবিক প্রবণতা। অন্যদিকে, জনসংখ্যার সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ক্রমবর্ধমান। তবে বিশেষ কারণে সাময়িকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাহত হতে পারে। যেমন—দুর্ভিক্ষ, মহামারী, যুদ্ধ-বিগ্রহ, বিলম্ব বিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো জৈবিক মৌল প্রত্রিয়ার সঙ্গে যেমন আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রশ্ন জড়িত, তেমনি দর্শন, নীতিবোধ, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় জড়িত। সুতরাং জনসংখ্যা সমস্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে হলে সামগ্রিক ও বহুমুখী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

১. জন্ম ও মৃত্যুহারের ব্যবধান

জনসংখ্যাস্ফীতির জন্য যদি একটি মাত্র কারণকে দায়ী করা যায় তবে তা হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যু হারের ব্যবধান। বাংলাদেশে একদিকে যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বর্তমানে শিশুমৃত্যুর হার অতীতের তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে এবং গড় আয়ুস্কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং আয়ুস্কাল বৃদ্ধি জনসংখ্যাক্ষীতির পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

২. আবহাওয়া

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমী অঞ্চলে অবস্থিত। ফলে এ দেশের আবহাওয়ার অল্প বয়সেই ছেলেমেয়েরা যৌবনপ্রাপ্ত হয় এবং তাদের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতাও অনেক বেশি। এটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে।

৩. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ

বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে। একজন মহিলা সাধারণত ১২-৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে। আর অল্পবয়সে বিয়ে হবার ফলে অধিক সময় প্রজননক্ষম থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে অধিক সন্তানের জন্য দিয়ে অল্প বয়স্ক দম্পতিরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।

৪. খাদ্যভ্যাস

বাংলাদেশের জনগণের খাদ্যে আমিষের অভাব এবং শ্বেতসারের আধিক্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণ অতিমাত্রায় শ্বেতসারজাতীয় খাদ্য যেমন—ভাত, গম, আলু এবং স্বল্পমাত্রায় আমিষ যেমন মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি গ্রহণ করায় তারা অধিক সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা অর্জন করে।

৫. দারিদ্র্য

বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কম। আর জীবনযাত্রার মান ও সন্তান জন্মদানের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। উচ্চ শ্রেণী তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার জন্য কম সন্তান কামনা করে। পক্ষান্তরে দরিদ্রশ্রেণী তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রত্যাশায় অধিক সন্তান কামনা করে ।

৬. অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও নিরক্ষরতা

বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ নিরক্ষর ও অজ্ঞ, ফলে তাদের মাঝে কুপ্রথা ও কুসংস্কার অতিমাত্রায় বিরাজ করে। তাদের অজ্ঞতার কারণে তারা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক তথা জাতীয় জীবনে অধিক জনসংখ্যার বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বলতে গেলে সম্পূর্ণ অসচেতন। ফলে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে না। এবং অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে । পরিণামে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।

৭. অধিক শিশুমৃত্যুর হার

বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার অধিক। ফলে সন্তানদের মৃত্যু আশঙ্কায় পিতা-মাতারা দু একটি সন্তান নিয়ে ভরসা পান না এবং অধিক সন্তান জন্ম দিতে আগ্রহী হন ।

৮. কৃষিভিত্তিক সমাজ কাঠামো

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা প্রধানত কৃষিভিত্তিক। আর অধিক সন্তান কৃষি কাজের জন্য খুবই সহায়ক। এজন্য কৃষি কাজের সুবিধার্থে অধিক সন্তান জন্মদানের প্রবণতা আমাদের দেশের অনেক পরিবারে লক্ষ্য করা যায়।

৯. যৌথ পরিবার ব্যবস্থা

বাংলাদেশের যৌথ পরিবার ব্যবস্থা উচ্চ জন্মহারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ যৌথ পরিবারে সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন তেমন ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয় । আর এর ফলে অধিক সন্তান জন্মদানকে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

১০. নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব

সমাজবিজ্ঞানী কিংসলি ডেভিসের মতে, নারীর অক্ষরজ্ঞান ও শিক্ষা তার সন্তান সংখ্যার সাথে বিপরীতমুখী। বাস্তব তথ্যাদির পরিপ্রেক্ষিতেও দেখা যায় যে দেশে নারী শিক্ষা হার যত বেশি, সে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ততো কম। এর কারণ

ক. নারীদের পড়ালেখায় অধিক সময় ব্যয় হয় বলে দেরিতে বিবাহ হওয়া।

খ. শিক্ষিত নারীরা সংসারের বাইরে কর্মে ব্যস্ত থাকে বলে তারা কম সন্তান কামনা করে।

গ. কর্মজীবী শিক্ষিত নারীরা জীবন সম্পর্কে অধিক সচেতন বলে কম সন্তান কামনা করে

ঘ. কর্মজীবী শিক্ষিত নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা অধিক থাকে বলে তারা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়, যা সন্তান জন্মদানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

১১. চিত্তবিনোদনের অভাব

বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে চিত্তবিনোদনের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত মানুষ যৌন সম্পর্ককেই চিত্তবিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে মনে করে। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

১২. সামাজিক নিরাপত্তার অভাব

বাংলাদেশে ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গৃহীত হয়নি। বিশেষ করে বৃদ্ধকালীন আর্থিক নিরাপত্তার অভাব এ দেশে অত্যন্ত প্রকট। এজন্য বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের মানুষ বিশেষ করে অধিক পুত্রসন্তান কমনা করে।

১৩. পুত্রসন্তান লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা

পুত্রসন্তান লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনসংখ্যাস্ফীতির একটি অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক শিক্ষিত এবং আধুনিক পরিবারেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ দেশের অধিকাংশ জনগণ মনে করে যতদিন পর্যন্ত পুত্রসন্তানের আবির্ভাব না ঘটবে ততদিন পর্যন্ত কন্যাসন্তানের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তাকে কারো কিছু যায় আসে না। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

১৪. ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রভাব। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অতিমাত্রায় ধর্মভীরু। তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ ও নিরক্ষর এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এ দেশে জনগণ বিয়ে, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন এবং মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়াকে পবিত্র কাজ বলে মনে করে। জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং পরিকল্পিত পরিবার গঠনকে তারা ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী কাজ বলে মনে করে। বাংলাদেশের জনগণের এ ধরনের ধর্মীয় মূল্যবোধ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা সমাধানের উপায়

বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি জটিল ব্যাপার। একক ও স্বল্পকালীন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য ব্যাপক ও বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো

১. বাস্তব তথ্যনির্ভর জাতীয় জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যার সমাধান সময়ে আশা করা যায় না। এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট নীতি এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ। সুতরাং জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন জনসংখ্যা সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের আলোকে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি দিকের প্রতি সমভাবে গুরুত্ব প্রদানপূর্বক বাস্তবায়নযোগ্য করে জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন। বিদেশী সাহায্যনির্ভর এবং বাস্তবতাবিবর্জিত জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করে এ দেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না।

২. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সম্প্রসারণ

দেশে আরো ব্যাপকভাবে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। আরো অধিক সংখ্যক ক্লিনিক সৃষ্টি, মাঠকর্মী ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি জনগণের কাছে সহজসাধ্য হবে এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি জনগণের কাছে সহজসাধ্য হবে এবং তারা অধিক হারে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে।

৩. গণসচেতনতা বৃদ্ধিকরণ

এ কথা অবশ্যই অনস্বীকার্য যে, জনসংখ্যার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে যতদিন জনগণ সম্পূর্ণভাবে সচেতন না হবে, ততদিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। তাই বিভিন্ন সামাজিক শিক্ষা, কর্মসূচি, আলোচনা সভা, বেতার ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম, নাটক, যাত্রা, থিয়েটার, জারিগান, কবিগান প্রভৃতির মাধ্যমে এ সমস্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সম্পূর্ণভাবে সচেতন করে তোলার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া এ সকল প্রচেষ্টা জনগণের চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।

৪. জনসংখ্যা শিক্ষা কার্যক্রম বাধ্যতামূলককরণ :

জনসংখ্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বাল্যকাল থেকেই সচেতন করার জন্য জনসংখ্যা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা উচিত। এজন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে ‘জনসংখ্যা শিক্ষা’কে সম্পূর্ণ আলাদা এবং বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা দরকার।

৫. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন

বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা এবং এর দ্বারা তাদের মধ্যে সীমিত পরিবারের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করা। অন্যথায় শুধু প্রত্যক্ষ উপায়ে তাদের অধিক সন্তান জন্মদানের প্রবণতা হ্রাস করা যাবে না।

৬. মহিলাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিকরণ

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অবস্থার প্রেক্ষাপটে সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি ছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নারীশিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থান সন্তান ধারণ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করলে তা জনসংখ্যাস্ফীতি হ্রাসে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

৭. খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন

জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য দরকার আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করা। এজন্য চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং বিকল্প খাদ্য তালিকা প্রণয়ন করে তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এলাকাভিত্তিক খাদ্যমেলা বা খাদ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে তাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গঠনমূলক পরিবর্তন আনয়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।

৮. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ

জনসংখ্যা সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলে যে কোনো মূল্যে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৯. কৃষির আধুনিকীকরণ

এ দেশের কৃষিব্যবস্থা এখনো অগ্ন্যুত এবং সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। পুরাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অধিক সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। ফলে গ্রাম্য কৃষক কৃষি কাজের সুবিধার্থে অধিক সন্তান জন্ম দেয়। কাজেই জনসংখ্যা সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হলে কৃষিব্যবস্থাকে যান্ত্রিক ও আধুনিক করতে হবে।

১০. গঠনমূলক চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাকরণ

চিত্তবিনোদনের অভাব বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে টিভি, সিনেমা, খেলাধুলা প্রভৃতি চিত্তবিনোদনের মাধ্যমগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে গ্রামবাংলার দরিদ্র জনগণ ও স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকেই চিত্তবিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ না করতে পারে।

১১. শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার রোধ

বাংলাদেশে অধিক হারে শিশুমৃত্যুর কারণে দম্পতিরা অধিক শিশুর জন্য দিয়ে থাকে । তাই শিশু মৃত্যু রোধকল্পে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে ।

১২. দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি উদ্ভাবন

বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা সমস্যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ধীরগতিতে হলেও বাড়ছে। তবে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের জটিলতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং নির্ভরযোগ্যতার অভাবে নিরক্ষর জনগণ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারছে না। তাই বিদেশী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পরিবর্তে দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন । কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ ও ব্যবহারের সহজীকরণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।

১৩. ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

অনুহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন এবং ধর্মীয় অনুভূতি বিশেষ প্রভাব বিস্তারকারী চলক হিসেবে বিবেচিত। ধর্মীয় অনুভূতি এবং অনুশাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে কম উৎসাহী। তাই এই অবস্থার উন্নতির জন্য।

মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় সংস্থার প্রধান এবং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সহজ ও বোধগম ভাষায় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকৃত তথ্যাদি প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে ধর্মভীরু জনগণ জন্মনিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত জ্ঞানার্জন করতে পারবে। জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে বাংলাদেশের ধর্মভীরু জনগণের যথাযথ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব নয়।

 

১৪. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ

বাংলাদেশে বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তাহীনতার কারণে যাতে জনগণ অধিক সন্তানের জন্ম না দেয়, তার জন্য দেশে ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু ও জোরদার করা প্রয়োজন।

 

১৫. আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ

বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সকল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তার মাঝে রয়েছে

ক. বর্তমানে প্রচলিত বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২২ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২২ থেকে ৩০ বছর করার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।

খ. ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ এবং বহুবিবাহ রোধ করা।

গ. জন্ম এবং মৃত্যুর যথাযথ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা, যাতে বিবাহের সময় যথাযথ বয়স নির্ধারণ করা যায়।

ঘ. সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদল, রেশন, গৃহ বরাদ্দ, কৃষিঋণ, ত্রাণ ও সরকারি সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা করা। ড. পরিবার পরিকল্পনার আদর্শ যাতে আরো গ্রহণীয় হয়ে ওঠে সেজন্য বাস্তবসম্মত আইনগত উৎসাহব্যঞ্জক এবং নিরুৎসাহব্যঞ্জক ব্যবস্থার প্রয়োগ করা।

যেমন – শিক্ষাভাতা, স্বাস্থ্যভাতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দু সন্তানের পরিবারকে অগ্রাধিকার প্রদান করা। চ ব্যক্তিগত, দলগত এবং সমষ্টিগতভাবে জনসংখ্যা নীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখার জন্য পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা, যাতে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ফল ভোগ করতে পারে। ছ. চাকরির ক্ষেত্রে সরকারঘোষিত মহিলা কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান পরিকল্পনা

 

১৬. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দেশী-বিদেশী অসংখ্য সংস্থা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচির পুনরাবৃত্তি এবং সম্পদ ও সময়ের অপচয় রোধকল্পে সরকারি পর্যায়ে সুষ্ঠু সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে করে দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরো জোরদার হবে।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনা ষাটের দশকের প্রথম দিকে সমাজকর্মী এবং পরিকল্পনাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । তখন থেকে উন্নয়নের একটি কর্মকৌশল হিসেবে সরকার পরিবার পরিকল্পনাভিত্তিক কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে।

১৯৭৬ সালে জনসংখ্যা সমস্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে আসছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা, তথ্য, শিক্ষা, উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো এবং দক্ষতা উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, গবেষণা, মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ প্রভৃতি। নিচে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিগুলো আলোচনা করা হলো:

 

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি:

ক. নীতিমালা প্রণয়ন

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার কমিয়ে আনার জন্য সরকারি পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের এ নীতিমালার দুটি দিক রয়েছে। যেমন—

১. গর্ভনিরোধ পদ্ধতির বর্ধিত চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত ও সহজ গর্ভনিরোধ পদ্ধতির ব্যবস্থা করা।

২. স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের নতুন চাহিদা সৃষ্টি করা ।

খ. বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন

বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য ও নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে নিম্নোক্ত উপায়গুলো সরকারিভাবে গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে

১. গর্ভনিরোধ সেবাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা।

২. মা ও শিশুস্বাস্থ্যের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া, যাতে নবাজাতকের বেঁচে থাকার ব্যাপারে মা-বাবা অধিক আস্থাশীল হতে পারেন।

৩. বহুমুখী শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা ও অক্ষরজ্ঞানের পর্যায় বৃদ্ধি করা।

৪ শিক্ষা ও আর্থ- সামাজিক কার্যক্রমের সকল স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধি করা।

৫ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে জনগণের অর্থপূর্ণ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

৬. ছোট পরিবার গঠনের সমর্থনে উৎসাহ এবং বড় পরিবার গঠনে নিরুৎসাহ প্রদানের বিধানসহ আর্থ-সামাজিক ও আইনগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

৭. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্ভাব্য ভূমিকা পালনে বহু খাতভিত্তিক কার্যক্রম অনুসরণ করা।

৮ সরকারি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কর্মসূচির সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা জোরদার করা।

গ. সেবা প্রদান কার্যক্রম

সমন্বিত প্রচেষ্টায় পরিবার পরিকল্পনা সেবার পরিধি ও মানের উন্নতি সাধন এবং মা ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য সেবা প্রদান কার্যক্রমের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শহরাঞ্চলের সকল হাসপাতাল, মাতৃমঙ্গল ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং ক্লিনিক, পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সেবা প্রদান কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মরত মাঠকর্মী এবং বহুমুখী উন্নয়নের কার্যক্রমের আওতায় নিযুক্ত কর্মীদের মাধ্যমে জনগণের নিকট পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সার্বক্ষণিক পরিবারকল্যাণ সহকারী নিয়োগ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ‘সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এসব কর্মীদের কার্যকর ভূমিকা পালনের ফলে জন্মহার হ্রাস, জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ছোট পরিবারের আদর্শ গ্রহণের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল পরিবর্তন হচ্ছে। দেশে তৃণমূল পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃ-শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. প্রশিক্ষণ কার্যক্রম

জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান নিপোর্ট (National Institute of Population, Research and Training NIPORT)-এর অধীনে সারা দেশে ১২টি বৃহত্তর জেলায় পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এছাড়া ২০টি উপজেলায় ২০টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে পরিবারকল্যাণ মাঠকর্মীদের মৌলিক ও পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। গ্রামীণ ধাত্রীদের টিবিএস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বল্পকালীন মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ফলোআপ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

ঙ. তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ কার্যক্রম

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, শিক্ষার নিম্নহার, প্রচার মাধ্যমের সীমাবদ্ধতা, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে সামাজিক অন্তরায় এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে মহিলাদের নিম্ন অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা কার্যক্রমে তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। ।। এক্ষেত্র আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্তঃবিভাগীয় যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (যেমন জারিগান) ব্যবহার ইলেক্ট্রনিক্স প্রচার মাধ্যম, সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, দলীয় আলোচনা, নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ প্রভৃতি কৌশল ও কার্যক্রমের মাধ্যমে আইইসি পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে গ্রহণীয় করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

চ. গবেষণা, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ

জনসংখ্যা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং ইউনিট গবেষণা, মূল্যায়ন ও মনিটরিংয়ের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। NIPORT-এর গবেষণা ইউনিট জনসংখ্যা কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করে। Population Development and Evaluation Unit (PDEU) মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করে ।

সরকারের ওপরের বিভিন্ন কার্যক্রম ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে ।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম:

বাংলাদেশে সরকারি প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এসব বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো

১ বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি; ২. বাংলাদেশ স্বেচ্ছা বন্ধ্যাকরণ সমিতি; ৩. পরিবার আত্মনিবেদিত মহিলা প্রকল্প; ৪. বাংলাদেশ মাতৃ ও নবজাতক শিশুমঙ্গল সমিতি; ৫ দাতা সংস্থা দ্য পাথফাইন্ডার ফান্ড; ৬. পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; ৭. স্বনির্ভর বাংলাদেশ; ৮: পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (FPMO); ৯. সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি ।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে এশিয়া ফাউন্ডেশন, কেয়ার, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) প্রভৃতি সংস্থা বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গৃহীত কৌশল

দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হলো অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ফলে প্রতিটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জনসংখ্যা কার্যক্রমের লক্ষ্যে এবং নীতি বাস্তবায়নের জন্য নিচের কৌশলসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে। যথা

১. উন্নত সেবাসহ কর্মসূচির উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যমে জনসংখ্যা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা খাতের সময়ভিত্তিক লক্ষ অর্জন।

২. অনুনিয়ন্ত্রণের ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি যেমন – সন্ধ্যাকরণ, আইইউডি প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ।

৩. তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ কার্যক্রম জোরদারকরণ।

৪. জনসমর্থন বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণের জন্য জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সমন্বয় কমিটি গঠন করা।

৫. জনসমর্থন বৃদ্ধি এবং। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণের জন্য জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সমন্বয় কমিটি গঠন করা।

৬. স্বল্পমেয়াদি কর্মমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ।

৭. টেকসই কর্মসূচির প্রতি গুরুত্বারোপ।

৮ বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার কর্মচারী, সমষ্টির নেতা, ধর্মীয় নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি ও জনপ্রিয় করে তোলা।

৯. মূল্যায়ন গবেষণা ও কর্মমুখী গবেষণা নিশ্চিত করা।

১০. স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে যথাযথ কেন্দ্রীয় সমন্বয় ব্যবস্থা গঠন করা।

 

উপসংহার

জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা। মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হলো জন্মহার। নানা কারণে বাংলাদেশে উচ্চ জন্মহার বিরাজ করছে। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী) লোক গ্রামে বাস করে। সুতরাং বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন গ্রামভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ।

শহরকেন্দ্রিক আদর্শ ক্লিনিক, সংবাদপত্রের প্রচার, বিদেশী সাহায্যনির্ভর গবেষণা, বিদেশী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে জন্মহারের মতো সহজাত জৈবিক প্রবণতা সংশ্লিষ্ট সমস্যার সমাধান আশা করা যায়। না। সর্বোপরি এ কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বংশবৃদ্ধি মানব এবং জীবজগতের জৈবিক তাগিদ।

এ ধরনের একটি মৌলিক জৈবিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে এটি শুধু সংখ্যার প্রশ্ন নয়, এটি যেমন আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রশ্ন, তেমনি দর্শন, নীতিবোধ, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব জৈবিক তাগিদ ইত্যাদির বহু প্রশ্নের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সুতরাং সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনসংখ্যা সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে তার সমাধানের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment