বাংলাদেশের কুটিরশিল্প রচনা

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

 

স্বল্প মূলধনে অল্প সংখ্যক লোকের শ্রমে কোনো জটিল বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও ভারি যন্ত্রপাতি ছাড়া ঘরে বসে পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়াই হলো কুটিরশিল্প। এর উৎপত্তি গৃহ এবং পরিবারকেন্দ্রিক ও অবসর সময়ে কাজ করার প্রবণতায়, আর স্বল্প অর্থায়নে তার প্রতিষ্ঠা। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর বহু দেশের দৈনন্দিন প্রয়োজনের চাহিদা মেটাতে এককালে কুটিরশিল্পের ভূমিকাই ছিল অগ্রণী।

বাংলাদেশ মূলত কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের কৃষকরা সারা বছর সমান তালে কৃষি কাজে লেগে থাকে না। কৃষি কাজের অবসরে তারা ঘরে বসে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদন করে। এভাবেই জন্ম হয় কুটিরশিল্পের। অবশ্য বর্তমানে অনেক কুটিরশিল্পজাত পণ্য কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে এবং অর্থায়নের দিক থেকে তার পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখন কুটির শিল্প আর কুটিরের অধিবাসী নয়। আর চাহিদার প্রেক্ষিতে তার উৎপাদনও সীমিত নয়। বর্তমানে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দূর করার জন্য কুটিরশিল্পের পুনর্জাগরণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। আবার দেশের বিপুল অদক্ষ জনশক্তিকে অপচয়ের গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য কুটিরশিল্পের পুনরায় প্রচলন জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

 

কুটিরশিল্পের বৈশিষ্ট্য

অল্প খরচে দ্রব্য উৎপাদন করা কুটিরশিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠায় বহু টাকার প্রয়োজন। কুটিরশিল্পে তা লাগে না। উৎপাদন খরচ কম বলে উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্যও কম থাকে। তবে বর্তমানে যন্ত্র দ্বারা তৈরি জিনিসের সাথে হাতের তৈরি জিনিসের একটি চাকচিক্যগত পার্থক্য সহজেই চোখে পড়ছে। ফলে কুটিরশিল্পজাত দ্রব্যের মান আরও উন্নত ও মসৃণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য সকল দ্রব্যই যে মানের দিক দিয়ে অনুন্নত তা নয়। অনেক দ্রব্য এখনো বিপুল প্রশংসা কুড়াচ্ছে দেশে-বিদেশে।

 

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

 

কুটিরশিল্পের ঐতিহ্যময় অতীত

এ দেশের কুটিরশিল্পের অতীত ইতিহাস গৌরবময়। সেকালে খ্যাতি অর্জন করেছিল ধাতুশিল্প। স্বর্ণ ও রৌপ্য শিল্পীদের পারদর্শিতা ছিল ঈর্ষণীয়। বিকাশ ঘটেছিল নকশি কাঁথা শিল্পের— যার ঐতিহ্য এখনও বহমান। এ ছাড়াও ছিল অন্যান্য ধাতুশিল্প, চারুশিল্প, কাঠের কাজ ও মৃৎশিল্প। সেকালে ঢাকার মসলিন সমাদৃত হয়েছে বাগদাদের খলিফা এবং চীন ও রোমের সম্রাটের কাছে। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় স্মরণীয় হয়ে আছে এ ঐতিহ্যের গৌরবকথা

বাংলার মসলিন যোগদান রোম চীন।
কাঞ্চন তৌলেই কিনতেন একদিন।

দুঃখের বিষয় ঢাকাই মসলিন এখন ইতিহাসের কিংবদন্তী মাত্র। কৃষিজীবনে ভাঙন, ভাঙন এনেছে কুটিরশিল্পে।

 

কুটিরশিল্পের ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপট

সেকালে গ্রাম-বাংলার অর্থনীতি ছিল কুটিরশিল্প নির্ভর। এক এক পেশার মানুষ কুটিরশিল্পের এক এক শাখায় দক্ষ হয়ে উঠতেন পুরুষানুক্রমে। কর্মপেশা অনুসারে তারা পরিচিত হতেন। এভাবে কুমোরের হাতে মৃৎশিল্প, চামারের হাতে চর্মশিল্প, কামারের হাতে ধাতুশিল্প, স্বর্ণকারের হাতে অলঙ্কার শিল্প, তাঁতির হাতে বস্ত্রশিল্প, ছুতোরের হাতে কাঠশিল্প, কাঁসারির হাতে কাঁসাশিল্প, শাঁখারির হাতে শাঁখাশিল্প গড়ে উঠেছিল। তখন মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাত কুটিরশিল্প । এভাবে কুটিরশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল।

 

কুটিরশিল্পের পতন

ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের কুটিরশিল্পের ওপর আঘাত আসে। ইংরেজ বণিকরা জাহাজ ভরে বিলেতি জিনিসপত্র এনে বাজার ছেয়ে ফেললে এ দেশের কুটিরশিল্প ইউরোপীয় যন্ত্রশিল্পজাত দ্রব্যের সাথে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। শুরু হয় কুটিরশিল্পের পতন। উপরন্তু ইংরেজ শাসকরা এ দেশের শিল্পের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক বসায় আর নিজেরা বলতে গেলে বিনা শুল্কেই বিলেতি দ্রব্যের বাণিজ্য শুরু করে।

তারা বিলেতি কাপড়ের বাজার তৈরির জন্য এ দেশের তাঁতিদের বুড়ো আঙুল কেটে দেয়। এ দেশের রেশম শিল্প কৃত্রিম রেশমের কাছে হটে যায় । যন্ত্রশিল্পের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় কুটিরশিল্প কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কুটিরশিল্পীদের অনেকেই বংশানুক্রমিক পেশা ত্যাগ করে খেতমজুর কিংবা কারখানার শ্রমিক হতে বাধ্য হয়।

 

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

 

দেশীয় কুটিরশিল্পের পরিচয়

আমাদের দেশে এখনো মুশিল্প, তাঁত শিল্প, অলংকার শিল্প, ধাতু শিল্প, বাঁশ শিল্প, বেত শিল্প, পিতল-কাঁসার তৈজসপত্র, হোসিয়ারি ইত্যাদি কুটির শিল্পজাত পণ্য উৎপাদিত হয় ।

সিলেটের বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাব, ময়মনসিংহের পিতল-কাঁসার জিনিস, কুমিল্লার বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঘর-সংসারের জিনিস, কক্সবাজারের ঝিনুকের তৈরি গৃহসজ্জার উপকরণ এখনো মানুষের মন আকৃষ্ট করে। দেশে-বিদেশে এসবের বাজার রয়েছে। পাটের এ দুর্দিনেও পাটের তৈরি বৈচিত্র্যময় হস্তশিল্প বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রফতানি হচ্ছে।

তাঁত শিল্প, রেশম শিল্প, খাদি শিল্প, নারকেলের ছোবড়া শিল্প ইত্যাদি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। বাঁশ, বেত, কাঠ, পাট, পিতল, কাঁসা, সোনা, রূপা, লোহা ইত্যাদি অসংখ্য উপকরণ কুটির শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে এ শিল্পকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে । অনেক ক্ষেত্রে মানুষের রুচি পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে নিত্যনতুন রূপ দিয়ে কুটিরশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

বৃহৎ শিল্পের সাথে তুলনা

বহুকাল পূর্ব থেকেই এ দেশে কুটিরশিল্পের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এখানকার নানা ধরনের কুটিরশিল্পের নিদর্শন বিশ্বের বহু মানুষের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অবশ্য ইংরেজ শাসনামলে কুটিরশিল্পের প্রতি সরকারের কোনো সুদৃষ্টি ছিল না। ফলে, সে সময়ে কুটির শিল্পের যথেষ্ট অবনতি ঘটে। তবে এ সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ও কুটিরশিল্পের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কারণ তখন পর্যন্ত বৃহদায়তন শিল্প-প্রতিষ্ঠান এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

কিন্তু বর্তমানে দেশে বৃহদায়তন শিল্প-কারখানার যে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটছে তাতে কুটিরশিল্পের অবস্থা তত সুবিধাজনক বলে মনে না হওয়ার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বৃহদায়তন শিল্পের উপর যতটা নির্ভর করা চলে, কুটিরশিল্পের উপর ততটা নির্ভর করা চলে। না। তাছাড়া দেশ বিভাগের ফলে কুটিরশিল্পের উপর যথেষ্ট বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কখনো কারিগরের অভাব পড়েছে। কখনো বাজার বিনষ্ট হয়েছে।

 

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

 

কুটিরশিল্পের বর্তমান দুর্দশার কারণ

আমাদের কুটিরশিল্পের অবস্থা বর্তমানে দুর্দশাগ্রস্ত। এ দুর্দশার কারণ অনেক।

প্রথমত, যন্ত্রশিল্পের সাথে কুটিরশিল্পের অসম প্রতিযোগিতা। বৃহদায়তন কলকারখানায় অল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে অনেক দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়। কিন্তু কুটিরশিল্পের এ সুবিধা নেই। কুটিরশিল্পে প্রতিটি কাজ দৈহিক শ্রমে করতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। উৎপাদন ব্যয়ও হয় বেশি। তাই কুটিরশিল্প যন্ত্রশিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে উঠতে পারছে না।

দ্বিতীয়ত, আমাদের পরিবর্তিত রুচিও কুটিরশিল্পের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা অনেক সময় কুটিরশিল্পজাত, মজবুত দ্রব্যের পরিবর্তে যন্ত্রশিল্পজাত চকচকে দ্রব্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হই । যেমন, আজকাল আমরা কাঁসা ও পিতলের টেকসই বাসন-কোসনের পরিবর্তে ভঙ্গুর কাঁচ, চীনামাটি, মেলামাইনের বাসন-কোসনের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি। এ ছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যসামগ্রীর খরচ খুব কম বলে তা দ্রুত বাজার দখল করে নিচ্ছে।

তৃতীয়ত, দেশীয় শিল্পের উন্নতির জন্য যে মানসিকতা ও স্বদেশপ্রেমের প্রয়োজন আমরা তা থেকে পিছিয়ে গেছি। বিদেশে তৈরি মন ভোলানো হালকা জিনিসের জন্য বাড়তি পয়সা ঢালতে আমরা কুষ্ঠিত হই না। দেশী জিনিস কিনলে ও ব্যবহার করলে আমাদের আভিজাত্য ক্ষুণ্ন হবে- এ মানসিকতা এখন নানাভাবে আমাদের গ্রাস করেছে।

 

কুটিরশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বৃহৎ শিল্পে ব্যাপক মূলধন নিয়োগের সামর্থ্য বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত বাংলাদেশের নেই । জাপানের মতো উন্নত দেশের শ্রমশক্তির ত্রিশ ভাগ যদি কুটিরশিল্পে এবং শতকরা পঞ্চান্নে ভাগ ক্ষুদ্র যন্ত্রশিল্পে নিয়োজিত হতে পারে তবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প রক্ষায় আমরাই বা পিছিয়ে থাকব কেন?

বিশেষ করে দেশের এক কোটি বেকারকে আত্মকর্মসংস্থানের পথে চালিত করার ক্ষেত্রে কুটিরশিল্পই আমাদের পথ দেখাতে পারে। এর ফলে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে, বৈদেশিক পণ্য আমদানির ফলে আমাদের বাণিজ্যিক ঘাটতি থেকেও আমরা রক্ষা পাব এবং তা অর্থনৈতিক স্বয়চরতার দিকে এগিয়ে যেতে আমাদের সহায়তা করবে।

 

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প

 

কুটিরশিল্প পুনরুজ্জীবনের উপায়

কুটিরশিল্পকে রক্ষা এবং এর উৎকর্ষ বিধানের জন্য এ খাতে মূলধন জোগাতে হবে, সরবরাহ করতে হবে পর্যাপ্ত কাঁচামাল। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান জরুরি। নিপুণ কারিগর ও শিল্পীকে সম্মাননা, সনদ, বৃত্তি ও পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে এ খাতে প্রণোদনা সৃষ্টি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচির বদল ঘটিয়ে মনকে দেশীয় পণ্য অভিমুখী করতে হবে। এতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে তেমনি দেশীয় শিল্প বিকাশের পথ খুঁজে পাবে।

তৃতীয়ত, কুটিরশিল্পের যুগোপযোগী আধুনিকায়নের জন্য বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করা দরকার। এতে উৎপাদিত দ্রব্যের মান উন্নততর হবে, উৎপাদিত ব্যয়ও কমবে। গুণগত মান ও শৈল্পিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশের কারিগরদের সস্তা শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে কুটিরশিল্প বিদেশেও সমাদৃত হতে পারে।

প্রবাসী বাঙালিদের এক্ষেত্রে দেশব্রতী ভূমিকায় উদ্দীপ্ত হতে হবে। চতুর্থত, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে সমবায় পদ্ধতি গড়ে তুললে এ শিল্প আবার নবজীবন লাভ করবে।

 

কুটিরশিল্প উন্নয়নে বর্তমান উদ্যোগ

বাংলাদেশের কুটিরশিল্প এখনও অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী। রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল-পাবনার তাঁত, নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি, সিলেটের বাঁশ ও বেতের কাজ, ময়মনসিংহের পিতল-কাঁসার সামগ্রী, কুমিল্লার বাঁশ ও কাঠের জিনিস, কক্সবাজারের ঝিনুক শিল্প কুটিরশিল্পের অতীত ঐতিহ্য ও সুনাম বয়ে চলেছে।

কুটিরশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বর্তমানে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ শিল্পের উন্নতির জন্য বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা এ শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, কুটিরশিল্পের আধুনিকায়ন, বাজার ব্যবস্থাপনা, মূলধন সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বেকার যুবকদের উপযুক্ত কারিগরি ও আনুষঙ্গিক প্রশিক্ষণ দিয়ে কুটিরশিল্পের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে কার্যকর সহায়তা প্রদান করছে। বিদেশে কুটিরশিল্পের বাজার পাওয়ার জন্যও সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে কুটিরশিল্পে আবার নবজীবনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার:

আমাদের মতো দরিদ্র দেশে কুটির শিল্পের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। কুটির শিল্প তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্যে বৃহদায়তন শিল্পের পাশে অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার রাখে। হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদি যেমন জনসাধারণের চাহিদা পূরণ করতে পারে তেমনি বিদেশী দ্রব্যাদির আমদানি কমিয়ে স্বনির্ভর হতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশের শ্রমিকের অনুপাতে কলকারখানা কম থাকায় কুটির শিল্প প্রসারে দেশের বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে।

সমৃদ্ধ দেশ জাপানের রফতানির ষাট ভাগ কুটির শিল্প থেকে আসে এবং সে দেশের শ্রমশক্তির শতকরা ত্রিশ ভাগ ক্ষুদ্রায়তন শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে। তাই দেশের আর্থিক সঙ্কট দূর করতে হলে আমাদেরকে কুটির শিল্পের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে অবশ্য বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের প্রয়োজনীয় উৎকর্ষ বিধানের জন্যে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের ক্ষুদ্রায়তন ও বৈচিত্র্যময় কুটির শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগরদের প্রশিক্ষণ দান, উৎপাদন প্রক্রিয়ার উৎকর্ষ সাধন, বাজার ব্যবস্থাপনা, মূলধন সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশে কর্মরত অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থা বিভিন্নমুখী কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের অর্থনীতিকে সতেজ করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছে।

দীর্ঘকাল চর্চার অভাবে লুপ্ত হয়ে যাওয়া কারিগরি দক্ষতা ও মূলধন সরবরাহের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে কুটির শিল্পে নব জীবনায়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের কুটির শিল্পের হারানো গৌরব বহুলাংশে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আশা করা যায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment