বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন রচনা

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করায় নিরুৎসাহিত করি। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন

বাংলাদেশ মূলত কৃষিপ্রধান দেশ। শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনগ্রসর। শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া শুধুমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করে কোনো দেশের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে শিল্পোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কাজে লাগিয়ে বহু কাঙ্ক্ষিত শিল্প ও কল-কারখানায় সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত করতে পারি।

 

শিল্প অবকাঠামো

দেশের শিল্প অবকাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে অতীব জরুরিভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যা পরিকল্পিত নতুন শিল্প অবকাঠামোর আওতায় কয়েকটি নির্ধারিত শিল্প খাতকে পরিপূর্ণভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও পোষকতা দেবে। সম্পর্কিত ও সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ নির্ধারিত এ শিল্প খাতগুলোর উৎপাদনে সহায়তা করবে। এসব খাত হবে শ্রমনিবিড় ও উচ্চ উৎপাদনশীল।

এসব শিল্পে শ্রমিকের মাথাপিছু উচ্চতর উৎপাদন ও পরিকল্পিতভাবে মূল্য সংযোজন হবে অন্যান্য শিল্পের তুলনামূলক হারের চেয়ে বেশি। মাথাপিছু শ্রমিকের উচ্চ উৎপাদন, বেশি করে মূল্য সংযোজন এ শিল্পগুলোকে পণ্য উৎপাদনে প্রতিযোগিতামূলক সামর্থ্য যোগাবে। একদিকে এ শিল্পগুলোর থাকবে রপ্তানির সামর্থ্য ও সম্ভাবনা, অন্যদিকে এ শিল্প থেকে উৎপাদিত দ্রব্যগুণ, মান ও পরিমাণ মেটাবে স্থানীয় বাজারের চাহিদা।

উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান ও মূল্য — উভয়ই হবে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক। এ শিল্পগুলো সংযোজক নেপথ্য তৈরি পোশাক খাতের (backward linkage) শিল্প হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। সরকারের কাছ থেকে এ শিল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূর্ণ আর্থিক সহায়তা ও পোষকতা লাভ করবে।

এ ধরনের সংযোগ সাধনমূলক ও সম্পর্কিত শিল্পগুলোর (backward linkage and allied industres) দ্রুত বিকাশের সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রভাব শিল্পায়ন প্রয়োজনীয় গতিধর্ম সৃষ্টি করে এগুলো যুগপৎ মূল শিল্পের নেপথ্য শিল্প হিসেবে কাজ করবে ও এ শিল্পগুলো বহির্বাণিজ্য সৃষ্টিতে এক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, কেননা সাধারণত পরস্পর সম্পর্কিত শিল্পখাত একে অন্যের সহায়ক হয়ে দ্রুত শিল্প প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তির রূপ নেয় ।

দেশের শিল্প অবকাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবকাঠামোর উন্নতি সাধন করে, দ্রুত শিল্প বিকাশের অনুকূল পরিবেশ রচনা করে এবং প্রতিযোগিতাভিত্তিক সরকারি নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারকে অবশ্যই এক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকের ভূমিকা পালন করতে হবে। এতে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে শিল্প উন্নয়ন ও পণ্য উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।

ঐ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে

১. একটি যথোপযুক্ত শিল্প সহায়ক কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

২. শিল্প সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভাব-কল্পনা ও

৩. শিল্প বিকাশ ও সম্প্রসারণের জন্য ক্ষতিকর দিক ও অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে সেসবের নিরসন করা।

 

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন

 

শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি ও শিল্পনির্ভর শিল্প-প্রযুক্তিতে যে দেশ যত উন্নত, অর্থনৈতিকভাবে সে দেশ তত সমৃদ্ধ ৷ তাই আধুনিক যুগে শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর হওয়ায় অনেকটা প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভরশীল। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফসল জন্মে।

আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি, বন্যা কিংবা খরার দরুন কৃষিকার্য ব্যাহত হয় ৷ কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এবং বেকার জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

 

শিল্পোন্নয়নের লক্ষ্য

আধুনিক বিশ্বে শিল্পপণ্যের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেড়েছে বহুগুণ। এমতাবস্থায় মানুষের জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত করাই শিল্পোন্নয়নের মূল লক্ষ্য । শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন খনিজ সম্পদ।

পরিবর্তিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পটভূমিতে কৃষির গৌণ অবস্থানকে মাথায় রেখে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মূলধন গঠন, বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষা ও সামগ্রিকভাবে একটি আধুনিক দেশ গঠনের জন্যই শিল্পায়ন জরুরি। শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া বর্তমান পৃথিবীতে কোনো দেশই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধন করতে পারেনি। বাংলাদেশের শিল্পায়ন এ সত্যকে উপলব্ধি করেই শিল্পোন্নয়নের জন্য তৎপর রয়েছে।

 

অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য

শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অতীত গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। এককালে ঢাকার মসলিন বিশ্বখ্যাত ছিল। দেশে-বিদেশে সর্বত্রই তা সমাদৃত হতো। ঢাকার তাঁতিরা সুতার সাথে তসর মিশিয়ে মসলিন শিল্পের বিনাশ সাধন করে। মসলিন ছাড়া আজিমুল্লাহ কাপড়ও মোগল আমলে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিল। এছাড়া কাতান, সিল্ক, বেনারসী এবং নানা ধরনের তাঁতের কাপড় ও খদ্দের কাপড় বাংলাদেশের অতীত গৌরবের স্বাক্ষর বহন করছে।

 

শিল্পোন্নয়নের পরিকল্পনা

সরকার দেশকে শিল্পে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে নতুন নতুন শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর অধীনে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও মালিকানায় পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অর্থ মঞ্জুর করে থাকে।

শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদেশের কিছু কিছু শিল্পপণ্য এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । ফলে একদিকে জাতীয় আয় বাড়ছে অপরদিকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন

 

কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন

বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ ও খনিজ সম্পদ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার আর্থিক কারণে বিদেশ থেকে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ক্রয় করে শিল্প- কারখানা গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। তাই এখানে যেসব কৃষিজাত দ্রব্য রয়েছে, সেগুলোকে কাজে লাগিয়েই শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশে কুটির শিল্প ও বৃহদায়তন শিল্প মূলত কৃষিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে কৃষিভিত্তিক শ্রমঘন শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে নতু দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ক্ষেত্রেও এসেছে সাফল্য।

 

ক্ষুদ্রায়তন কুটির শিল্প

প্রাচীনকাল থেকেই কুটির শিল্প আমাদের দেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। তাঁত শিল্প, মূর্খশিল্প, কাঁসা শিল্প, লৌহ শিল্প, মাদুর, শীতল পাটি, পাখা, বেতের তৈরি জিনিসপত্র, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ইত্যাদি এখানে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন অর্থের সংস্থান হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে বেকারত্ব দূর হয়ে দেশীয় কাঁচামালের সদ্ব্যবহার হচ্ছে। তাই কুটির শিল্প গড়ে তোলার জন্য ঋণ দেয়া হয়ে থাকে।

 

বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা স্থাপন

এদেশে কৃষির সমৃদ্ধির তারা শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায় ‘কর্ণফুলী পেপার মিলস’, ‘খুলনায় নিউজপ্রিন্ট মিলস, চন্দ্রঘোনায় সালফিউরিক এসিডের কারখানা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জুট মিলস, কয়েকটি সুগার মিলস স্থাপন করা হয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় এখানে চা, তামাক, বাশ, চামড়া ইত্যাদি শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পকে বিশ্বমানের করে তুলতে হলে প্রয়োজন আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করা। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়লে দেশে অবিলম্বে বৃহদায়তন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি।

 

বিদেশী পণ্যের আমদানি বন্ধ

শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেই দেশে শিল্পোন্নয়ন হবে না। এগুলোকে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং লাভজনক খাতে প্রবাহিত করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের মন-মানসিকতা ও রুচির পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিদেশী পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে।

তবেই আমাদের দেশে শিল্প-কারখানার উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী দেশে ব্যাপক হারে চলবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

 

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন

 

শিল্পোন্নয়নের কৌশল

কোনো ভবিষ্যৎ নীতি-কৌশল পরিকল্পনা বা ভাবনা কেবলই একটি বয়ানমার হলে চলবে না, আমাদের একটা অভীষ্ট লক্ষ্য অবশ্যই থাকতে হবে, ধারণাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে প্রয়োজনীয় সহায়ক কৌশলও থাকতে হবে। তাই বর্তমানে অর্থনীতির বিশ্বায়নে যেসব স্থানীয় শিল্পের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে সে শিল্পগুলোর অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে, নতুন শিল্পের বিকাশ ও সম্প্রসারণ যতো দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করতে সহায়তা দান অব্যাহত রাখা আবশ্যক ।

বর্তমানে এ সহায়তা কেবলই রাজনৈতিক বুলি-বক্তৃতায় সীমিত। বাস্তবিক পক্ষে যে পরিস্থিতি এখনো চলছে তার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিল্প প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য কোনো কৌশলই নেই, বরং এমন অনেক কিছুই আছে যা শিল্পের বিকাশ বা সম্প্রসারণের বিরোধী ।

শিল্প খাতের স্বল্পমেয়াদী ও দ্রুত উন্নয়নে আমাদের ভাব-কল্পনা ও কৌশল হওয়া উচিত

১. বিদেশী ও দেশী বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ

২. যেসব শিল্প অধিক মাত্রায় গ্যাস জ্বালানি নির্ভর (energy intensive) সেসব শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে:

৩. কৃষিভিত্তিক শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে,

৪. যেসব শিল্প শ্রমনিবিড় (labour intensive) সেইসব শিল্পকে সহায়তা-সমর্থন (support) দিতে হবে;

৫. যেসব শিল্প অন্যান্য শিল্পের সাথে সম্পর্কিত (linkage) সেসব শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে;

৬. যেসব শিল্প অধিক মূল্য সংযোজনে (value addition) সহায়ক ও দেশীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনা বেশি, ঐ সব শিল্পকে অধিকতর সহায়তা দেওয়া

৭. কর্মক্ষম প্রতিটি নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা

৮. সম্ভাবনার সর্বাধিক সদ্ব্যবহার এবং শিল্প উন্নয়নে জ্ঞান ও নৈপুণ্য বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালানো

৯. দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ।

এ ব্যবস্থা জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান করে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে তাদের মাঝে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা সর্বাধিক কাজে লাগাতে এবং তাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে সম্প্রসারিত করতে পারবে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

শিল্পায়নের জন্য সহায়ক কৌশল

শিল্পায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ, সামাজিক খাতে সরকারি বিনিয়োগ, সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর উন্নখন, আইনের কাঠামো সংস্কার করে বর্তমান অন্তরায়গুলো অতি দ্রুত দূর করতে হবে। এ ছাড়া শিল্পায়ন সহায়ক কৌশলের বাস্তবায়ন মূলত রাজস্ব (আর্থিক), মুদ্রা ও ব্যাংকিং নীতির ওপর নির্ভরশীল বিধায় এসব নীতির পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য থাকতে হবে।

এ ছাড়াও মূলধন বাজারসহ ব্যাংক ও অন্যান্য অর্থসংস্থানকারী সংস্থার সহায়তা একটা দীর্ঘমেয়াদী ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে।

১. সময়মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ৫ কোটি টাকার চেয়ে বেশি অংকের অর্থের বিনিয়োগের জন্য ব্রিজ ফিন্যান্সিং (সম্পূরক অর্থসংস্থান) ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে দিতে হবে।

২. ব্রিজ ফিন্যান্সিং-এর জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ আবর্তক তহবিল গঠন করতে হবে। এ ধরনের ব্রিজ ফিন্যান্সিং-এর সুবিধা পাওয়া গেলে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে। বেসরকারি খাতে মূলধন ও পুঁজি সঞ্চিত হওয়া পর্যন্ত এ আবর্তক তহবিল চলতে থাকবে।

৩. সরকার বিশেষ তহবিল, পুনঃঅর্থসংস্থান, বিভিন্ন বহুপক্ষীয় (multilateral) প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ এবং দীর্ঘমেয়াদী শিল্পবন্ড ইস্যু, এসএলআর (SLR) ও সিআরআর (Capital Redemption Reserve)-এর মাত্রা কমিয়ে ৫ বছর মেয়াদে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারেন।

৪. রুগ্ন শিল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক পুনর্বাসন অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কাশিল্প পুনর্বাসনে আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।

৫. কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি উৎপাদনের ৬০ শতাংশ রপ্তানি করে তা হলে সে শিল্পকে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

৬. ইপিজেড (EPZ) এলাকায় অবস্থিত ফ্যাক্টরিগুলো যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো একই সুবিধা পাবে।

৭. আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি পণ্য উৎপাদন শিল্প কারখানায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি সৃষ্ট। চাকরির জন্য ঐ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকার এককালীন ১০ হাজার টাকার মঞ্জুরি দেবেন।

৮. পণ্য উৎপাদন শিল্প-কারখানাগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে যদি কোনো শ্রমিক, চাঁদাবাজ, মাস্তান বা যে কেউ হুমকি প্রদর্শন করে তা সহিংস অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মস্তান ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার অবশ্যই বিশেষ নিরাপত্তা দেবেন।

৯. শিল্প উন্নয়নের বিকাশে একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদে কর অবকাশ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

১০. শিল্পের কাঁচামালগুলোর ওপর প্রযোজ্য আমদানি শুল্কগুলোকে সুসামঞ্জস্য করতে হবে ও ডে কমাতে হবে।

১১. বিভিন্ন উপযোগ সার্ভিস যেমন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবারাহ ব্যবস্থাকে উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বেসরকারিকরণ করতে হবে। এ ছাড়াও বন্দর, বিমানবন্দর, বিমান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (BSC), টেলিফোন ইত্যাদি এসব প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত্রবিশেষে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের খাতগুলো অতি দ্রুত বেসরকারিকরণ করতে হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হবে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং সেবা প্রদানে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, সেবার মান উন্নত করা ও ব্যয় কমানো।

১২. পেট্রোলিয়াম, তেল, গ্যাস, চিনি ও বীমা ইত্যাদি খাতে মূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে।

১৩. শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর জন্য আইন প্রণয়ন করে তাদের জন্য বাঞ্ছিত আচরণবিধি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

 

উপসংহার :

বাংলাদেশ শিল্পের দিক দিয়ে উন্নত না হলেও বর্তমানে শিল্পোন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য শিল্পোদ্যোক্তাকে আর্থিক ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শিল্পোন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদেরকে শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে সহজ শর্তে কর্ণ ও উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। তবেই দেশের উন্নতি ঘটবে এবং দ্রুত শিল্পোন্নয়ন সম্ভব হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment