রাজনৈতিক সংস্কৃতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ রচনার একটি নমুনা তৈরি করবো আজ। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাটি খুব বেশি প্রাচীন নয়। ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ (Political culture) প্রভায়টি প্রথম ব্যবহার করেন সিডনি ভাবা। তারপর থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পৃক্ততা ও প্রভাবের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
আধুনিক কালে প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাই তার নিজস্ব রাজনৈতিক সংস্কৃতির আবহে গড়ে উঠতে দেখা যায়। কোনো দেশের রাজনৈতিক আবহ তথা রাজনৈতিক বিশ্বাস, চেতনা, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য তার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মূর্ত হয়ে প্রকাশ পায় । কেননা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো কতকগুলো অন্তর্গত প্রবণতা ও মাত্রাবোধ । এ প্রবণতা ও বিশ্বাসগুলো বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নীতি এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।
তাই দেখা যায়, কোনো সমাজের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদানগুলো যদি সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে সে ব্যবস্থা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিকশিত হতে পারে না। আরোপিত বিধি-বিধান, নীতিপদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানগুলো তখন বিদ্যমান বিশ্বাস ও বোধের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে রাজনীতিতে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করে। তাই কোনো একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য কেবল গণতান্ত্রিক বিধিবিধানই যথেষ্ট নয়। সেজন্য চাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি :
বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির দিকে দৃষ্টি দিলে অতি সহজেই বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক বিকাশের সহায়ক নয়। বিরোধী দলের ক্রমাগত সংসদ বর্জন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অনৈক্য ও রাজনৈতিক দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এদের বিবেচনা; হরতাল, রাজনৈতিক হয়রানি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের অনাস্থা, আইনের অসম প্রয়োগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হানাহানি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে কেবল রুখেই দিচ্ছে না, বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক নীতি ও বিশ্বাসগুলোকে গলা টিপে হত্যা করছে।
নব্বই-পরবর্তী সময়ে পরপর তিনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে অনেকেই হয়তো মনে করেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হচ্ছে, গণতন্ত্রের পথে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তবে আমাদের অগ্রগতির হার কচ্ছপের চেয়েও ধীর।
এখন প্রশ্ন হলো, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে এসেও আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর হচ্ছে না কেন? গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে থেকেও কেন জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল ভোগ করতে পারছে না? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে মৌলিক উপাদান এগুলোর অধিকাংশই আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান নেই।
যেমন… প্রথমত, একটি উন্নত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হলো সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা রাজনৈতিক নীতি, প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা। এক্ষেত্রে সংসদ, সরকারি ও বিরোধী দলের ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আইন ও বিচার বিভাগের ভূমিকা জনগণের বিবেচনায় আসে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায়। কেননা বিরোধী দলহীন সংসদ, সরকার ও বিরোধী দলের নেতিবাচক ও গণস্বার্থহীন রাজনৈতিক বিরোধ, দুর্নীতিগস্ত ও একচোখা পুলিশি ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুষ্টচক্রে আক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো পারস্পরিক বিশ্বাসের উপস্থিতি। পারস্পরিক বিশ্বাসের আবার দুটি দিক রয়েছে। এক. সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস, দুই, নাগরিকদের মধ্যকার পারস্পরিক বিশ্বাস। জনগণ যদি সরকারের হাতে তাদের স্বার্থকে নিরাপদ মনে না করে, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যদি জনগণের বিশ্বাস না থাকে, তখন তারা সরকারকে সহযোগিতা করে না।
অন্যদিকে নাগরিক তথা রাজনীতিবিদদের মাঝে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা দিলে তখন তারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাও হস্তান্তর করতে চায় না। এর ফলে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে নিজেদের জন্য নিরাপদ মনে করতে পারে না। বাংলাদেশেও এরূপ পরিস্থিতি দেখা যায়।
রাজনৈতিক দলগুলো সব সময়ই রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর ভয়ে থাকে। বিরোধী দলে থেকেও যে সরকারের অংশ হয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা যায়, সে মানসিকতা যেমন বিরোধী দলের মাঝে নেই, তেমনি সরকারি দলও বিরোধীদের রাজনৈতিক উপস্থিতিকে ভালো চোখে দেখে না। তাই দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা করা দরকার তাই করতে প্রস্তুত থাকে।
এ প্রবণতার অংশ হিসেবে নগ্ন দলীয়করণ সব দলের মাঝেই দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে প্রশাসন, বিচার ও সামরিক বাহিনীসহ সকল ক্ষেত্রে নিজেদের দলীয় লোক বসিয়ে গেলে শত অপকর্ম করলেও ক্ষমতা হারানোর পর তাদের কিছুই হবে না এবং এ থেকে দেখা দিচ্ছে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও স্থবিরতা ।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আজ পর্যন্ত এমন কোনো গৌরবময় অবস্থানে পৌঁছতে পারেনি যা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ গর্ব করতে পারে। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির অতীত ইতিহাসে যেমন গৌরবের বিষয় আছে, তেমনি কলঙ্কের দাগও আছে। শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান প্রমুখ নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন সত্য। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে তাদেরকে এমন অবস্থানে নেয়া হয়েছে যে আইন করে তাদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা আদায়ের চেষ্টা করতে দেখা যায়।
ব্রিটিশরা যেভাবে তাদের সংসদ, আমেরিকানরা তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আর ভারতীয়রা তাদের নেতা মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে গর্ব করে এবং এগুলোকে তাদের রাজনৈতিক ঐক্যের আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করে, এমন কোনো আশ্রয় আমাদের নেই। এ দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা যুদ্ধ করে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের সে ঐক্যবদ্ধ চেতনাও আমরা টিকিয়ে রাখতে পারিনি। আর জাতীয় গৌরববোধ নেই বলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ন্যূনতম অবলম্বনও আমাদের নেই। এমনকি যা আছে তাকেও আমরা দলীয় স্বার্থে কলুষিত করে ফেলেছি।
চতুর্থত, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশের জন্য দরকার মুক্ত ও শঙ্কাহীন রাজনৈতিক যোগাযোগের সুযোগ ও পরিবেশ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক পরিবেশটা এমন হওয়া চাই যেন জনগণ কেবল চুপি চুপি ভোটদানই নয় বরং মুক্ত, স্বাধীন ও শঙ্কাহীনভাবে নিজের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে পারে । কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিকরা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা, মত ও বিশ্বাসকে নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারে না।
নাগরিকরা আজ নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। রাজনৈতিক হত্যা, বিরোধী দলের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ আর সুযোগসন্ধানী রাজনীতিকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মত প্রকাশে সকলেই ভয় পাচ্ছে। এটা যে কেবল বিরোধীদের বেলায় সত্য এমন নয়, বরং সরকারি দলের কর্মী- সমর্থকরাও অনেক ক্ষেত্রে দলীয় সহকর্মীর কোপানলে পড়ার ভয়ে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারেন না।
এমনকি নিরন্তর হুমকি, সরকার ও বিরোধী দলের পর্যায়ক্রমিক কোপানলে পড়ার ভয় সংবাদপত্রগুলোকেও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ আশা করা দুরাশারই শামিল। কেননা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরমতসহিষ্ণুতা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ না থাকলে গণতন্ত্রের বিকাশ হতে পারে না ।
পঞ্চমত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং জনগণের দলীয় মানসিকতার উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। এখানে জনগণ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশে তা তখনই বিপত্তির জন্ম দেয়, যখন দলীয় সমর্থন উগ্রতায় রূপ নেয় কিংবা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। আর এটা তখনই হয় যখন রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব দলীয় রাজনীতি বলতে একদলীয় রাজনীতিকে বোঝে।
আমাদের দেশেও পরমত সহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক দলব্যবস্থা অনুপস্থিত। আমাদের রাজনীতিবিদরা নিজেদের আঞ্চলিক কর্তৃত্বের বলয় সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের বিতাড়িত করে একচ্ছত্র রাজনীতি ও লুটপাটের অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ প্রবণতার সবচেয়ে মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ।
ফেনীতে জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরে তাহের, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান, বরিশালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বাগেরহাটে শেখ হেলালসহ সারা দেশে অজস্র নেতা নিজ নিজ বাহিনী ও বলয় সৃষ্টি করে। কিন্তু গত নির্বাচনে ক্ষমতার হাতবদলের ধারাবাহিকতায় তার প্রত্যুত্তরও আসতে থাকে। ফলে এসব এলাকায় বিএনপি নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অতীত অপকর্মের জন্য নতুন সরকার তাদের ধরপাকড় করতে থাকে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় দেশের বাইরে আত্মগোপন করে।
এভাবে দেখা যায়, প্রতিটা সরকারই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের নেতা-কর্মীদের সকল অপকর্মকে অনৈতিকভাবে সমর্থন করে। কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের পর যখন তাদের শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন তারাই আবার রাজনৈতিক হয়রানির অভিযোগ তুলে আন্দোলন-সংগ্রামে নামে। প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে। তাই বলে এ পরিচয়টা সকল অপকর্মের সার্টিফিকেট হলে গণতন্ত্র চলতে পারে না।
ষষ্ঠত, গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য গণতান্ত্রিক সামাজিক আবহ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি । সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও জনগণের থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এর কোনোটাই যথাযথভাবে বিদ্যমান নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার জনগণের অধিকাংশই রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ এবং এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার বলে মনে করে না।
ভোটদানের উচ্চহার (৭০%-৮০%) দেখে অনেকেই হয়তো জনগণ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেশি বলতে চাইবেন। আসলে শুধু ভোটদান দিয়ে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বোঝা যায় না। কেননা ভোটদানের গুরুত্ব যে ভোটাররা বোঝেন না তা নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি থেকেই বোঝা যায়। তবে ইদানীং বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সপ্তমত, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও আবহ দরকার তাও আমাদের দেশে অনুপস্থিত। কর্তৃত্বপরায়ণ পারিবারিক ব্যবস্থা, সামাজিক কুসংস্কার, অশিক্ষা ও অসাম্য গণতান্ত্রিক বিকাশকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত করে থাকে। ফলে গণতান্ত্রিক বিচার-বিবেচনার বাইরে সামাজিক প্রপঞ্চগুলো রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
তাছাড়া গণতান্ত্রিক শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতি আমাদের দেশে নেই। পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসের বিকৃতি এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর নোংরা দলীয় ব্যবহার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যথার্থ গণতান্ত্রিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে। সুশীল, সুবোধ যুবকরা কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেই শুনছে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর লাশের মিছিল। ফলে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ তারা পাচ্ছে না।
আমাদের দেশে আরেকটা প্রবণতা লক্ষণীয়। সেটা হলো রাজনীতিবদরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সাথে নাগরিকদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় যোগসূত্রকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। সে প্রবণতায় আওয়ামী লীগ ইসলামিক মন-মানসিকতার মুসলিমদের ঢালাওভাবে রাজাকার, মৌলবাদী প্রভৃতি বিশেষণে বিশেষায়িত করার চেষ্টা করে এবং বিএনপি জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ইসলামী দলগুলোর সাথে ঐক্য করে এ জাতীয় লোকের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে।
সর্বশেষে নির্বাচন-পরবর্তীতে কতিপয় এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা হিন্দুদের আওয়ামী সমর্থক ভেবে নির্যাতনও করে। এ ধরনের ঢালাও বিভাজন কোনোমতেই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয় ।
উপসংহার :
বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে যে হানাহানি, সরকারি ও বিরোধী দলের ক্রমাগত বিরোধ, ছবি এবং লাশের রাজনীতি, বৈদেশিক সাহায্য ও সমর্থন বন্ধের জন্য বিরোধী দলের তৎপরতা, নতুন নতুন আইন প্রণয়ন ও বাতিল, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির প্রতি অনাস্থা, হরতাল প্রভৃতি মূলত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অপরিহার্য উপাদানগুলোর অনুপস্থিতিরই ফল ।
আরও দেখুনঃ