বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা এবং এর প্রতিকার রচনার একটি নমুনা তৈরি করে দেয়া হল। আশা করি এটি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে। তবে আমরা রচনা মুখস্থ করা নিরুৎসাহ দেই। আমরা নমুনা তৈরি করে দিচ্ছি একটা ধরনা দেবার জন্য। এখান থেকে ধারণা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে নিজের ভাষায় রচনা লিখতে হবে।
Table of Contents
বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার
সামাজিক সমস্যা হচ্ছে সমাজের এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা, যা সমাজজীবনে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সামাজিক সমস্যা একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। বিভিন্ন কারণে সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ই র্যাব ও জি. জে. সেলজনিক বলেন, ‘সামাজিক সমস্যা হচ্ছে সমাজের মানুষের সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত একটি অবস্থা, যা সমাজকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং বহু মানুষের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্ত করে।’
বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত । প্রধান প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা সমস্যা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অপরাধ, কিশোর অপরাধ, দুর্নীতি, পুষ্টিহীনতা, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরে সমস্যা, যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ, মানসিক অসুস্থতা, মানসিক প্রতিবন্ধী সমস্যা, নিরাপত্তাহীনতা, সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের সমস্যা, মাদকাসক্তি, স্বাস্থ্যহীনতা ইত্যাদি। নিচে এসব সমস্যা ও এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. জনসংখ্যা সমস্যা:
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম মারাত্মক ও ভয়াবহ সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১২ কোটি ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৩ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮৩৪ জন লোক বাস করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৭% ভাগ ।
প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ শিশু জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশের পক্ষে যেখানে শুধু তার জনসংখ্যার ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করাই দুঃসাধ্য, সেখানে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ এক অস্বাভাবিক ব্যাপার। ফলে বেড়ে যাচ্ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, নির্ভরশীলতা, বাসস্থান সংকট, খাদ্য সমস্যাসহ আরো বহু রকম সামাজিক সমস্যা।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্নানরতা, মহিলাদের কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্র্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি, বাল্যবিবাহ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, চিত্তবিনোদনের অভাব ইত্যাদি ।
প্রতিকার :
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
ক জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাস্তব জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন অত্যাবশ্যক ।
খ. পরিবার পরিকল্পনা
পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে এ দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং পরিকল্পিত পরিবারের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব।
গ. শিক্ষা সম্প্রসারণ
শিক্ষা হলো জনসংখ্যা রোধের অন্যতম উপায়। বিশেষ করে এ দেশে নারী শিক্ষা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ঘ. কর্মসংস্থান সৃষ্টি
মহিলাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ প্রবণতা বাড়লে প্রজনন হার কমে। সুতরাং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত ।
ঙ. বিনোদনমূলক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ
দেশে সুস্থ ও কল্যাণধর্মী বিনোদনমূলক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটলে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। এজন্য গ্রামীণ পর্যায়ে টিভি, সিনেমা প্রভৃতি চিত্তবিনোদনের মাধ্যমগুলোর সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা উচিত।
চ. বাল্যবিবাহ
আইনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে এবং বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের বেলায় ২০ বছর এবং ছেলেদের বেলায় ২৫ বছর করতে হবে। এ শর্ত ভঙ্গ করলে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. দারিদ্র্য
বাংলাদেশ দরিদ্রপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রতিদিনের গড় আয় এক ডলারেরও কম। দারিদ্র্যের কারণে সমাজে সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, পারবারিক ভাঙন, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দারিদ্র্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের কারণ হচ্ছে অনগ্রসর কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা, শিল্পায়নের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, অধিক জনসংখ্যা, কম উৎপাদন, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নারীর কর্মসংস্থানের অভাব, নিরক্ষরতা ও অক্ষতা ইত্যাদি।
প্রতিকার
ক. দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন
খ. কৃষি ও শিল্পখাতে উৎপাদন বৃদ্ধি
গ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
ঘ. সম্পদের সঠিক বণ্টন ও অপচয় রোধ ।
ঙ. সামাজিক বৈষম্যরোধ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
৩. অপরাধ
অপরাধ হলো এক ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ, যা সমাজ ও প্রচলিত আইন কর্তৃক স্বীকৃত নয়। সমাজবিজ্ঞানী কোনিগ (Koenig) বলেন ‘সমাজ বা গোষ্ঠী দ্বারা দৃঢ়ভাবে অসমর্থিত বা নিষিদ্ধ মানব আচরণই হলো অপরাধ। যেমন-চুরি করা, ভেজাল দেয়া, খুন করা, ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি হলো অপরাধমূলক কাজ।
বাংলাদেশে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ অনেক। এসব কারণ উদ্ঘাটন করতে হলে ব্যক্তির দৈহিক, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক অবস্থা বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের অপরাধ বৃদ্ধির কারণগুলো হলো ভৌগোলিক কারণ, দৈহিক কারণ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, সামাজিক মূল্যাবোধের অভাব, রাজনৈতিক কারণ, জেলখানা ও বিচারালয়ের প্রভাব।
প্রতিকার
অপরাধকে ঘৃণা কর, অপরাধীকে নয়’-এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অপরাধ ও অপরাধীকে বিচার-বিশ্লেষণ করাই অপরাধ নিরাময়ের প্রধান উপায়। বাংলাদেশে অপরাধ যাতে সংঘটিত না হতে পারে তার জন্য ত্রিমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক : ক. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, খ. প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এবং গ. পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা ।
ক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
২. বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি গ্রহণ, যাতে শিক্ষা গ্রহণের পর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকে।
৩. গণদারিদ্র্য হ্রাসের উপায় হিসেবে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
৪. অবসর যাপন ও চিত্তবিনোদনের ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ রোধ।
৫ নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার।
খ. প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
অপরাধের মাত্রানুযায়ী উপযুক্ত শাস্তিদানের মাধ্যমে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে দূর করা যেতে পারে। এজন্য দেশে যেসব প্রবেশন ও প্যারোল কার্যক্রম ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তা জোরদার করতে হবে। তাছাড়া কারাব্যবস্থার সংস্কার এবং বিচারব্যবস্থার ত্রুটি দূর করতে হবে।
গ. পুনর্বাসনমূলক ব্যবস্থা
অপরাধ ও শাস্তিভোগের পর মানুষ অপরাধীকে সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না। তাকে অপরাধী হিসেবে ঘৃণা করে কিন্তু সেটা করা উচিত নয়। বরং যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।
৪. কিশোর অপরাধ
কিশোর-কিশোরী কর্তৃক সংঘটিত আইন ও সমাজবিরোধী কার্যাবলীকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। অপরাধবিজ্ঞানী এ. ডি. জন-এর মতে ‘কিশোর অপরাধ হলো নির্দিষ্ট ব্যয়ঃসীমার মধ্যে দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী ও সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী।
বাংলাদেশে সাধারণত ৭-১৬ বছরের কিশোর-কিশোরীদের কিশোর অপরাধীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ অপরাধের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো স্কুল পালানো, শিক্ষক ও গুরুজনকে অমান্য করা, পথে-ঘাটে, সিনেমা হলে ও অন্যান্য চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে মারপিট বাধানো, পথচারী বিশেষ করে মেয়েদের সাথে অশালীন ব্যবহার করা, উদ্দেশ্যহীনভাবে যেখানে-সেখানে ঘোরাফেরা করা, জুয়া খেলা, পরীক্ষার হলে নকল করা, মদ্যপান করা, খুন করা, রাজনৈতিক দলের প্ররোচনায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশে দিন দিন কিশোর অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রবণতা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে এ সমাজের ধ্বংস অনিবার্য।
প্রতিকার
বাংলাদেশের কিশোর অপরাধ মোকাবিলা করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন
ক. সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করে শিশু কিশোরদের সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. প্রতিটি শিশু যাতে শিক্ষা লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
গ. দারিদ্র্যের কারণে যাতে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করে তার জন্য শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চালু করতে হবে।
ঘ. চিত্তবিনোদনের ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে শিশু কিশোরদের মানসিক গঠন সঠিকভাবে হয়
ঙ. শিশুরা অনুকরণপ্রিয়া, তাই তারা যেন সৎ সঙ্গে মিশে এবং অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলে সেদিকে নজর দিতে হবে।
চ. শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে।
ছ. পঙ্গু ও মানসিক অসুস্থ শিশুদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিশু-কিশোররা যাতে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে সেজন্য জাতীয় শিশুনীতি’ প্রণয়ন করতে হবে।
৫. যৌতুক প্রথা
যৌতুক প্রথা বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক অমানবিক ও বেদনাদায়ক সমস্যা। হিন্দু সমাজে এর উৎপত্তি। হিন্দু আইনে কন্যারা পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না বিধায় পাগ্রস্থ করার সময় নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী দেয়ার প্রথা বর্তমান সময়ের পরিবর্তনে এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের পরিবর্তন হয়ে যৌতুক প্রথার রূপ লাভ করে। ইসলাম ধর্মে যৌতুক প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু হিন্দু সমাজের অনুকরণে মুসলিম সমাজে এ সর্বনাশা প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
যৌতুকের দাবিকে কেন্দ্র করে বিয়ের পর দাম্পত্য কলহ, স্ত্রী নির্যাতন, স্ত্রী হত্যা, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র পিতামাতা যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। যৌতুকের লোভে বাংলাদেশে প্রায়ই অসামঞ্জস্য বিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে এবং আত্মহত্যার পেছনে যৌতুক প্রথা অনেকাংশে দায়ী। যৌতুক সমস্যা বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা।
প্রতিকার
বাংলাদেশ থেকে যৌতুক প্রথা উচ্ছেদের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন
ক. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
এ প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে, যাতে জনগণ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
খ. মহিলাদের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান
সংবিধানে মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য পারিবারিক আইন, উত্তরাধিকার আইন, যৌতুক বিরোধী আইন, নারী নির্যাতন আইন প্রণয়ন ও সেগুলো বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
গ. সামাজিক বয়কট
যৌতুকের দাবিদার যারা তাদের বিয়েতে যোগদান থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
ঘ. মহিলাদের কর্মসংস্থান
মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঙ. যৌতুকবিরোধী আন্দোলন
বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরাঞ্চলে যৌতুকবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
৬. নিরক্ষরতা
নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা বাংলাদেশের প্রায় ৬৮% লোকই নিরক্ষর। এর প্রভাবে সমাজে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অদৃষ্টবাদিতা, স্বাস্থাহীনতা, দারিদ্র্যা ইত্যাদি সমস্যা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। সাধারণত নিরক্ষর বলতে অক্ষরজ্ঞানহীনতাকেই বোঝায়। নিরক্ষর হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তি লেখতে পড়তে জানে না ।
প্রতিকার
বাংলাদেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ক. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছর ২৪ লক্ষ নতুন শিশু স্কুলে পড়ার উপযোগী হচ্ছে। এ বিপুল সংখ্যক শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব নয়।
খ. দারিদ্র্য দূরীকরণ
শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার জন্য বেশি ব্যয় বরাদ্দ। সুতরাং জনগণের দারিদ্র্য দূর না করে শিক্ষা বিস্তার সম্ভব নয়।
গ. বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন
দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
ঘ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব
বাংলাদেশে এখনো বহু গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব।
ঙ. নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ
বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদেরকে উপেক্ষা করে নিরক্ষরতা দূর করা অসম্ভব। সুতরাং নিরক্ষরতা দূর করার জন্য নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
চ. যুবসমাজকে উৎসাহিত করা
বয়স্কদের নিরক্ষরতা দূর করার জন্য আমাদের দেশের শিক্ষিত যুবকদের কাজে লাগাতে হবে।
৭. বেকারত্ব
সাধারণত কর্মহীনতাকে বেকারত্ব বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বেকারত্ব বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায়, যাতে কর্মক্ষম ব্যক্তি বর্তমান মজুরিতে কর্মে ইচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও কর্মে নিয়োগ লাভে সক্ষম হয় না। অর্থাৎ কর্মক্ষম ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বকে সমাজবিজ্ঞানে বেকারত্ব বলে।
অধ্যাপক পিত (Pigu) বলেন, ‘যখন কর্মক্ষম লোকেরা যোগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে চায়, অথচ কাজ পায় না, সে অবস্থাকে বেকারত্ব বলা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির ৪০ ভাগ বেকার। এ দেশে প্রায় ১.৫ কোটি লোক বেকার। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে মূলধনের অভাব এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বেকারত্বের প্রধান কারণ বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ওপরের দুটি কারণ ছাড়া আরো বহুবিধ কারণ রয়েছে।
প্রতিকার বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে সীমিত সম্পদ নিয়ে বেকারত্ব মোকাবিলা করা খুবই কঠিন কাজ। দীর্ঘ ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান দুঃসাধ্য বাংলাদেশের বেকার সমস্যার প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন
ক. কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ বৃদ্ধি
ভূমির মালিকানার কাঠামো পরিবর্তন করে, খাস জমির সুষ্ঠু বণ্টন করে, কৃষিতে প্রযুক্তি প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব ।
খ. শিল্প ক্ষেত্রে নিয়োগ
কুটির শিল্প এবং বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বেকার সমস্যার সমাধান করা যায়।
গ. শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন
শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করে উৎপাদন ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন।
ঘ. নারী শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ করে নারীদের উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে।
ঙ. বিদেশে নিয়োগ বৃদ্ধি
আমাদের বেকার জনশক্তির একটা অংশকে প্রশিক্ষণদান করে বিদেশ প্রেরণের ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন।
চ. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
উপসংহার
উপরোল্লিখিত কারণ ছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যার আরো বহুবিধ কারণ রয়েছে । কিন্তু প্রতিটি কারণই আরো নানাবিধ কারণের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবে প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর যথাযথ প্রতিকার করা হলে ছোট ছোট সমস্যাগুলো আপনা-আপনিই দূরীভূত হবে, কিন্তু এজনা দরকার সঠিক পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন। আর ব্যাপক সামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশের এসব সামাজিক সমস্যা রাতারাতি সমাধান করার মতো নয়। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ধীরে ধীরে সব সমস্যার প্রতিকার সম্ভব ।
আরও দেখুনঃ